ভারতে উন্মোচিত হল বিশ্বের সবচেয়ে বড় মূর্তি
৩১ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:০২
।।আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ভাস্কর্য উন্মোচিত হয়েছে ভারতের গুজরাটে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার (৩১ অক্টোবর) এই বিশাল ভাস্কর্যটি উন্মোচিত করেন বলে জানায় সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ভারতের বর্ষীয়ান নেতা ও প্রথম উপ-প্রধানমন্ত্রী সর্দার বল্লবভাই প্যাটেলের প্রতিকৃতিতে তৈরি করা হয়েছে মূর্তিটি। লম্বায় প্রায় ৬০০ ফুট ভাস্কর্যটি তৈরিতে খরচ হয়েছে ২ হাজার ৩৮৯ কোটি রুপি। সময় লেগেছে প্রায় ৩৩ মাস। এটি নির্মাণে অনবরত কাজ করেছেন ২৫০জন ইঞ্জিনিয়ার ও ৩ হাজার ৪শ শ্রমিক।
মূর্তিটিতে প্যাটেলকে একটি ধুতি ও শাল পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। বুধবার তার ১৪৩তম জন্মদিনে ভাস্কর্যটির উন্মোচন করেন মোদি। এর আগে মোদি বলেছিলেন, উন্মোচনের পর এটি হবে বিশ্ববাসীর কাছে পর্যটনের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয় স্পট।
কিন্তু স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এটি কেবলই জনগণের অর্থের অপচয় ও এটি তৈরিতে যে অর্থ ব্যয় হয়েছে তা ভিন্ন কোন খাতে আরও ভালভাবে ব্যবহার করা যেত।
ভাস্কর্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে আকাশ থেকে প্রতিমূর্তিটির ওপর ফুল বর্ষণ করেছে ভারতের বিমান বাহিনী। মোদি ভাস্কর্যটি উন্মোচনের সময় বলেন, এটি হচ্ছে ভারতের অখণ্ডতা ও সংকল্পের একটি প্রতীক। এনডিটিভি জানিয়েছে, ভাস্কর্যটির নকশা করেছেন পদ্মভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী রাম ভি সুতার।
এদিকে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, উচ্চতায় মূর্তিটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ট্যাচু অফ লিবার্টি’র প্রায় দ্বিগুণ। পুরো বিশ্বের মধ্যে উচ্চতায় সবচেয়ে বড়। মূর্তিটি ভারতকে যেমন গর্ব করার সুযোগ দেয়, তেমনি একইসঙ্গে এর নেতার অহংও প্রকাশ করে। ১৮২ মিটার লম্বা ভাস্কর্যটির নামকরণ করা হয়েছে ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’।
প্যাটেল ভারতের স্বাধীনতা-যুগের নেতা। ১৯৪০’র দশকে বিভক্ত ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করতে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। কিন্তু তার ভাস্কর্যটি এর চেয়েও গভীর তাৎপর্য বহন করে।
প্যাটেল ভারতের ‘লৌহ মানব’ হিসেবে পরিচিত। হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের জন্য তিনি একজন ডান-পন্থী আইকন। এছাড়া ভাস্কর্যটির অবস্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ- গুজরাট। বিগত দশকে এই রাজ্যে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বেশ কয়েকটি ভয়াবহ দাঙ্গা ঘটেছে। এমনকি মঙ্গলবারও রাজ্যজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে হাজারো পুলিশকর্মী। গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিক্ষোভরত কৃষক ও মানবাধিকার কর্মীরা।
কৃষকরা মূর্তিটির পাশে বিক্ষোভ করেছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাদের অভিযোগ, সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য তাদের জমি দখল করেছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে এই মূর্তিটিও রয়েছে। তাঁরা ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশাল এই প্রতিমূর্তির সোনালি রঙ ও ভারতের বর্তমান দিনের রাজনীতির একটি প্রতিফলন। এই রঙটিকে মোদির হিন্দু রাজনৈতিক ভিত্তি, ভারতের জাতীয় উন্নয়ন ও বিশ্ব শক্তি হিসেবে পরিচয় প্রকাশের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।
ভাস্কর্যটি নিয়ে দেওয়া এক প্রচারণামূলক বক্তব্যে মোদি বলেন, সরদারের এই ভাস্কর্যটি বিশ্বের সকল দেশের পর্যটকদের জন্য দর্শনের একটি জনপ্রিয় বস্তুতে পরিণত হয়ে ওঠবে। তিনি বলেন, আমাদের উচ্চতা দেখুন, আমাদের জাতির উচ্চতা মাপুন। এটাই আমরা চাই।
প্যাটেলকে নিয়ে একটি জীবনীমূলক বইয়ের লেখক হিন্দোল সেনগুপ্ত বলেন, এধরনের প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে মোদি ভারতের উত্থান প্রকাশ করতে চান।
তিনি বলেন, মোদি যখন বলেন যে তিনি ভারতকে এর সঠিক জায়গায় নিয়ে যেতে চান। যেমন ‘বিশ্বগুরু’ বা ‘বিশ্ব শিক্ষক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তিনি আসলে তা-ই বোঝান। মোদি যেভাবে বিশ্বকে দেখেন সেদিক থেকে, এই ভাস্কর্যটি হচ্ছে বিশ্বের কাছে ভারতের উত্থানের একটি সংকেত। ওই উত্থানের দৃশ্যমান দৃষ্টান্ত।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য হচ্ছে ‘চীনের স্প্রিং টেম্পল বুদ্ধা’- যেটির উচ্চতা ১৫৩ মিটার।উদ্বোধনের পর ভারতের স্ট্যাচু অফ ইউনিটি সে স্থান দখল করল। গুজরাটের নারমাদা নদীর পাশে এটিকে স্থাপন করা হয়েছে।
২০১৩ সালে, ভারতের গত সাধারণ নির্বাচনের আগে মোদি পুরো দেশজুড়ে ভাস্কর্যটি তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ধাতু সংগ্রহের জন্য লোক পাঠান। সংগৃহীত ধাতুগুলো গলিয়ে ভাস্কর্যটির ভিত্তি তৈরি করা হয়েছে। তবে এর ব্রোঞ্জের প্রলেপটি করাতে হয়েছে চীন থেকে।
ভাস্কর্যটির নিচে একটি ‘অডিওভিজুয়াল গ্যালারি’ ও একটি জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে। সেগুলোতে প্যাটেলের জীবন বৃত্তান্ত ও ভারতের স্বাধীনতার তার অবদান বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ভাস্কর্যটির উদ্বোধন হচ্ছে মোদির আগামী বছরের নির্বাচনের অনানুষ্ঠানিক প্রচারণার শুরু।
সারাবাংলা/আরএ/এনএইচ
‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ গুজরাট নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভাস্কর্য সর্দার বল্লবভাই প্যাটেল