সংলাপ কি ধাপ্পাবাজির? প্রশ্ন মান্নার
৩১ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:১৩
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: গণভবনে বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) ডাকা সংলাপের ফলাফল নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী কি আমাদের সংলাপের জন্যে ডেকেছেন? নাকি আমাদের ডেকে নিয়ে গিয়ে ধাপ্পা দেবেন, আলোচনার নামে তিনি লোক দেখানো সংলাপের আয়োজন করেছেন কি না সেটাও ভাবার বিষয়।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবে বুধবার (৩১ অক্টোবর) জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মান্না এ সব প্রশ্ন তোলেন।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক বলেন, ‘ঐক্যফ্রন্ট চায় ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আর কোনো প্রহসনের নির্বাচন এদেশে যেন না হয়। সংবিধান সংশোধন করে হলেও আমরা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন চাই।’
একই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া জেলে যাওয়ার আগে নেতাকর্মীদের বলে গিয়েছিলেন জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।’
সংলাপ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘আমরা ৭ দফা দাবি দিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করুন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। সে জন্যেই সরকার খালেদা জিয়াকে আবারও সাত বছরের সাজা দিয়েছে। প্রতিদিন গড়ে দেড়শ বিএনপি নেতাকে গ্রেফতার করছে পুলিশ।’
কিন্তু সরকার এভাবে দমনপীড়ন বন্ধের আশ্বাস ও তা বাস্তবায়ন না করলে সংলাপও সম্ভব নয়’ বলেন ফখরুল।
জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘৪৬ বছর পরেও জনগণের সরকার সৃষ্টি হয়নি। দলীয় সরকারের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
তিনি বলেন, ‘৪৬ বছরেও সংবিধানের চার মূলনীতি সবাই ভুলে গিয়েছে। ক্ষমতায় এলে আর কারও হুঁশ থাকে না। যারা সংবিধান মানে না, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এমনকি আজকাল যোগ্যতার মূল্যায়ন হয় না। সুপ্রিম কাউন্সিলের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ হয় না। অতীতে কে কোন দল করত তা দেখে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে রব বলেন, ‘আমি আপনাকে অনুরোধ করি ইভিএম ব্যবহার করে, ডাবল ব্যালট ছাপিয়ে, কারচুপি আর জালিয়াতি করে নির্বাচন করবেন না।’
‘জনগণের জন্যে সংবিধান, সংবিধানের জন্যে জনগণ নয়’ উল্লেখ করে জেএসডি প্রধান বলেন, ‘একটি দেশের সরকার প্রধান চাইলে পারে না এমন কিছুই নেই।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেওয়া সকল মামলা তুলে নিতে শেখ হাসিনার প্রতি এ সময় অনুরোধ জানান রব।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু লিখিত সংবিধান তৈরি করে দিয়ে গেছেন, এদেশের জনগণই এদেশের মালিক। জনগণ যেন পূর্ণ স্বাধীনতা পায় ও দেশের সকল সম্পদ ভোগ করতে পারে সেটা সংবিধানেই লেখা আছে।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শুধু আমার নেতা নন, তিনি আন্তর্জাতিক নেতা। তার নেতৃত্বের মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা ছিল না। তিনি ছিলেন বিশাল হৃদয়ের।’
কামাল হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘কিন্তু আজকাল শিক্ষাকেন্দ্রগুলোতে নোংরা রাজনীতির চর্চা চলছে। বঙ্গবন্ধুর সময় ছাত্র রাজনীতি ছিল, আমি ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে গিয়ে দেখেছিলাম ছাত্ররাজনীতি এখনকার মতো এত নোংরা ছিল না।’
সংলাপ প্রসঙ্গে ড. কামাল বলেন, ‘সংলাপে আমি বিশ্বাস করি। আশা করি, সংলাপ ভালো কিছু বয়ে আনবে। আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ সংলাপের মধ্যে দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাই। ঐক্যমতে জনতার জয় হবেই।’
বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও আমরা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছি। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মানুষের বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতে আমরা এ ঐক্য গঠন করেছি’ বলেও মন্তব্য করেন মওদুদ।
জাসদের প্রধান রবের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জেএসডির সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, সহ-সভাপতি এম এ গোফরানসহ অন্যরা বক্তব্য দেন।
সারাবাংলা/এসও/এএইচএইচ/একে