ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায় থেকে মুক্তি পেলেন আসিয়া বিবি
৩১ অক্টোবর ২০১৮ ২২:২৭
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।
ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে খ্রিস্টান নারী আসিয়া বিবিকে দেওয়া ফাঁসির আদেশ বাতিল করে দিয়েছে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার (৩১ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সাকিব নিসারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ ঐতিহাসিক এই রায় ঘোষণা করেন।
আদালত তার রায়ে বলেন, আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে অভিযোগের কিছু সত্যতা থাকলেও, যেই ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি। এছাড়া, বিচারকরা তাদের রায়ে কোরান ও ইসলামের ইতিহাস থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি ব্যবহার করে বলেছেন, নবী মুহম্মদ অমুসলিমদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন।
পাঞ্চাব প্রদেশের আসিয়া বিবির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগটি উঠে। খামারে কাজ করার সময় তার সাথের এক মুসলিম শ্রমিকের গ্লাস ব্যবহার করে পানি খেয়েছিলেন আসিয়া। এতে তার সহকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ও তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলে। আসিয়া অস্বীকৃতি জানান। এসময় মুসলিম শ্রমিকদের সাথে আসিয়ার উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। শ্রমিকরা অভিযোগ করে জানান,আসিয়া ইসলাম ধর্মের প্রিয় হযরত মুহম্মদ (সা.)-কে নবী নিয়ে অবমাননাকর কথা বলেছে।
২০১০ সালে নবীকে ‘কটূক্তি’ করার দায়ে পাঁচ সন্তানের জননী আসিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। ধর্ম অবমাননা সংক্রান্ত আইনে প্রথম নারী হিসেবে আসিয়াকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো। ২০১৫ সালে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের ফলে আসিয়া মৃত্যুদণ্ডের হাত থেকে রেহাই পেলেন।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায় স্বস্তি প্রকাশ করলেও উগ্রবাদি মুসলিম সংগঠনগুলো রাস্তায় নেমে পড়েছে। লাহোর ও ইসলামাবাদে গণজমায়েত হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া শহরের মানুষদের ঘরের বাইরে না যেতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
পাকিস্তানে বিতর্কিত ব্লাসফেমি বা ধর্ম অবমাননার শাস্তি হচ্ছে, হয়তো ফাঁসি অথবা নয়তো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। নিন্দিত এই আইনটি দেশটিতে সংখ্যালঘু ভিন্ন ধর্মের লোকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। আসিয়ার শাস্তি নিয়ে শুরু থেকেই দ্বিধা বিভক্ত ছিলো পাকিস্তানের মুসলিম সমাজ। তবে প্রকাশ্যে অনেকেই একথা বলার সাহস পায়নি।
সারাবাংলা/এনএইচ