উ. কোরিয়ায় নারীদের যৌন নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা: এইচআরডব্লিউ
১ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:২০
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
উত্তর কোরিয়ায় প্রায় সম্পূর্ণ দায়মুক্তিতে নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালান দেশটির কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে একথা জানানো হয়। খবর বিবিসি।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ায় নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন এতটাই সাধারণ যে, এটা তাদের প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির মোট ৬২ জন নারীর সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা।
এইচআরডব্লিউ আরও জানায়, ক্ষমতাধর পুরুষরা এতদিন ধরে নারীদের ওপর প্রকাশ্যে যৌন হয়রানি বা নির্যাতন করে এলেও সেগুলোর খবর চাপা পড়েছিল। সেসব হয়রানির তথ্য ওই প্রতিবেদনে তুল আনা হয়।
স্মৃতিচারণ করে এক সাবেক নারী ব্যবসায়ী ওহ জাং-হী বলেন, তারা আমাদের খেলনা মনে করে। আমরা পুরুষদের কৃপায় বেঁচে আছি। কখনো কখনো রাতের বেলা আচমকাই আমরা কেঁদে ওঠি। এর পেছনে কোন কারণ কেউ জানে না!
নারীরা বলেন, কোন কর্মকর্তা যখন একজন নারীকে নির্যাতনের জন্য ঠিক করেন, তখন ওই নারীর আর কোন উপায় থাকে না।
নিজ দেশ থেকে পালানোর সময় ধরা পড়া এক নারীকে বিচার শুরুর আগে রাখা এক বন্দিশালায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় নির্যাতন করেন এক পুলিশকর্মী। ওই নারীর নাম পার্ক ইয়ং-হী। তিনি বলেন, সে আমাকে তার খুব কাছে বসিয়ে রেখেছিল। একইদিনে একাধিকবার আমার গোপন অঙ্গে স্পর্শ করেছে সে।
ইয়ং-হী বলেন, আমার জীবন তখন তার হাতে ছিল। তো, সে যা যা চেয়েছে আমি সব করেছি। আমার হাতে ভিন্ন কিছু করার কোন রাস্তাই খোলা ছিল না।
যৌন নির্যাতনকারীদের মধ্যে রয়েছে উচ্চ-পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা, কারাগারের প্রহরী, পুলিশ ও সেনারা।
যৌন শিক্ষার অভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার অনেকের এ ধরনের মানসিকতা তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে বলে এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনটিতে বলা হয়। ২০১৪ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া সরকার পদ্ধতিগতভাবে, ব্যাপকহারে গৃহীত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশটির কারাগার বা বন্দিশালাগুলোতে জোরপূর্বক গর্ভপাত, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন চালানো হয়।
মানবাধিকার সংস্থাটি উত্তর কোরিয়ার প্রতি এই যৌন সহিংসতার সমস্যাটি স্বীকার করার আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া, যৌন নিপীড়নকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে দেশটিকে। এইচআরডব্লিউ’র এই প্রতিবেদনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। উত্তর কোরিয়ার মতো রক্ষণশীল একটি দেশকে নিয়ে এধরনের প্রতিবেদন তৈরি করা খুব দুঃসাধ্য ও কঠিন কাজ। কারণ দেশটি তাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে কড়া গোপনীয়তা বজায় রাখে।
সারাবাংলা/আরএ/এনএইচ
উত্তর কোরিয়া মানবাধিকার লঙ্ঘন যৌন নির্যাতন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)