‘বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে কথা বলার অধিকার আদালতের নেই’
১ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:২৪
।।স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকাঃ বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে কথা বলার অধিকার আদালতের নেই বলে মন্তব্য করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন।
বৃহস্পতিবার (০১ নভেম্বর) রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত গণঅনশন কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে এ গণঅনশন আয়োজন করেছে বিএনপি।
ড. মোশাররফ বলেন, ‘ আপনারা আইনের কথা বলেন। কিন্তু আমরা জানি হাইকোর্টে কারা বসে আছে। কোন আইনে আপনারা সাজা দিচ্ছেন। গতকাল আমাদের দলের গঠনতন্ত্র বিষয়ে একটা রিট দিয়েছেন। আমরা মনে করি, এই রিট অকাযকর। কেননা, আমরা গঠনতন্ত্র সংশোধন করেছি, গত মার্চ মাসে জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে। ওইটাই আমাদের আইন। এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার আদালতের নেই।
তিনি বলেন, ‘আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপি এবং আজকে যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হয়েছে, তাদের সবাইকে বাদ দিয়ে আবার একটা একতরফা নির্বাচন। এই খেলা এবার জনগণ খেলতে দেবে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি জনগণ হতে দেবে না।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সাজানো মামলায় সাজা দিয়েছেন, সাজা বৃদ্ধি করেছেন। এ দেশের জনগণ এই সাজা মানে না। এই বিচার মানে না। কেননা, এসকে সিনহা বলেছেন প্রধান বিচারপতি হয়েও তিনি ন্যায় বিচার পাননি। এই দেশের জনগণ তো বিচার পাবেই না। অতএব আমরা এই বিচার প্রত্যাখান করেছি। জনগণতো এ বিচার মানে না।’
খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা না হলে আগামী জাতীয় সংসাদ নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ আমরা যে নির্বাচন চাই, সেই নির্বাচন হতে হবে সকল দলের অংশগ্রহণে। এ দাবি শুধু বাংলাদেশের জনগণের দাবি নয়। সকল বন্ধু রাষ্ট্র একযোগে বলেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে হতে হবে। আর সকল দলের অংশগ্রহণের হতে হলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড লাগেব।’
‘সেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য আমরা ৭ দফা দাবি করেছি এবং সেই ৭ দফা দাবির ১ নম্বর দাবি হচ্ছে খালেদা জিয়ার মুক্তি। কেননা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য হবে না।’
‘তাই আমরা বলতে চাই, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না। হতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনের আগেই খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে’— বলেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মিথ্যা মামলার সাজা কিছুই না। আমাদের নেত্রীকে যখন শোনানো হলো যে, আপনাকে সাজা বাড়িয়ে দিয়েছে। উনি বললেন, কত দেবে দিক। আমি কখনো মাথা নত করব না।’
‘আমরা মাথা নত করব না। আমরা আমাদের অধিকার আন্দোলনের মাধ্যমে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে আদায় করব’— বলেন মির্জা ফখরুল।
এর আগে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর মান্না বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা ৫ বছর থেকে ১০ বছর করা হয়েছে। নতুন করে আরেকটি মামলায় ৭ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। এসব কিছু টিকবে না। আগামী ৭ দিনের মধ্যে সব ধূলোর মতো উড়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা করা যাবে না। সংলাপের নামে কোনো ধাপ্পাবাজি চলবে না। খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিয়ে তফসিল ঘোষণা করতে হবে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. মন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মো. শাহজাহান, বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আব দিন ফারুক, আমান উল্লাহ আমান, আতাউর রহমান ঢালী, আবদু সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নূরে আরা সাফা, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আফরোজা আব্বাস, শিক্ষা বিষয়ক সহ-সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, সহ-জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলম, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারসহ অন্যরা।
এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জে এস ডি) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বিএনপির গণঅনশনে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন।
গণ অনশনে বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলাদল, শ্রমিকদল কৃষকদল, ছাত্রদলের বিভিন্ন ইউনিট ও শাখার হাজার হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক যোগ দেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার এবং সাজা বাতিলের দাবিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা মুহুর্মুহু স্লোগান দিচ্ছেন। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী-সমর্থক মহানগর নাট্যমঞ্চের সামনের চত্বরে অনশন পালন করেন।
টানা ৫ ঘণ্টা অনশনের পর বিকেল ৩ টা ১৫ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পানি পান করিয়ে বিএনপির গণঅনশন ভাঙান।
সম্ভব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় গণঅনশনস্থল এবং আশপাশে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সারাবাংলা/এজেড/টিআর