ভিডিও দেখে কার্য তালিকা থেকে শহিদুলের জামিন আবেদন বাদ
১ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৫০
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমের জামিন আবেদন কার্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় প্রচারিত শহিদুল আলমের সাক্ষাৎকারের ভিডিও এবং ফেসবুক লাইভের বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখেন বিচারপতিরা।
ফেসবুক লাইভের বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখার পর আদালত জানতে চান এফআইআরে শহিদুল আলমের যে বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে সেটি ফেসবুক লাইভের কোন ভিডিওতে আছে? তখন তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে বলেন, এফআইআরে শহিদুল আলমের বক্তব্য ফেসবুকের বিভিন্ন লাইভের কনসাইজ (সারমর্ম)। তখন আদালত আবার প্রশ্ন করেন ফেসুবকের বিভিন্ন লাইভ ভিডিও থেকে যে এফআইআরে কনসাইজ বক্তব্য লিখেছেন তা কি এফআইআইরে উল্লেখ করেছেন। তাতো এফআইআরে বলেননি।
উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত মামলাটি কার্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন।
এ সময় শহিদুল আলমের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন দাঁড়িয়ে বলেন, রুল দেওয়ার তিন সপ্তাহ পর আজকে ভিডিও দেখে, অনেকটা শুনে এ অবস্থায় এসে মামলাটি কার্য তালিকা থেকে বাদ দেওয়ায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি বর্হিবিশ্বে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল সারা হোসেনের বক্তব্যের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, এ সরকার ফিরে আসবে না শহিদুল আলমের এমন কথাই রাষ্ট্রদ্রোহের সমান।
তখন সারা হোসেন বলেন, করেন, রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করেন। জেলে নিয়ে রাখেন।
এ পর্যায় আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক ব্যারিস্টার সারা হোসেনকে শান্ত করে আদালতের আদালত তালিকা থেকে বাদ দিয়ে এজলাস থেকে উঠে যান।
আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ।
পরে ব্যারিস্টার সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জামিন আবেদনের বিষয়ে রুল জারির তিন সপ্তাহ মামলাটি ঝুলিয়ে রেখে আউট অব লিস্ট (কার্যতালিকা থেকে বাদ) করেছেন হাইকোর্ট।
তিনি বলেন, কোর্টের ভিতরে এভিডেন্স (সাক্ষ্য) দেখে, মামলার তদন্তকারীকে শুনে, তার কাছে প্রশ্ন শুনে এরপরও জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। এ মামলার এফআইআরে যে বক্তব্য আছে, তার কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ নেই। সেটা ওনারা (কোর্ট) দেখেছেন। তারপরও সিদ্ধান্তে আসতে পারেন নাই।
এ অবস্থায় আপনারা কি করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরেকটি বেঞ্চে যেতে হবে। তবে আমাদের কথা হচ্ছে, ওনারে জামিন দিলে কি হবে। একটা মানুষকে জামিন দিলে কি হবে পৃথিবীর উল্টে যাবে? কী ভয় হচ্ছে।? আদালতের দায়িত্ব হচ্ছে প্রত্যেকের ব্যক্তি স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বিচার যা হওয়ার হবে। বিচার তো কোর্টেই হবে। কিন্তু বিচার আর জামিন তো এক জিনিস না। ৯০ দিন হয়ে গেল ওনারা এখনো জামিনের সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। একজন বিচারপতি তদন্তকারীকে সরাসরি সব ধরনের প্রশ্ন তিনি নিজেই করলেন। যেটা হাইকোর্টে করার কতটা নজির আছে আমি জানি না। বিচারপতি নিজেই তদন্তকারীকে প্রশ্ন করছেন, যে বক্তব্য এফআইআরে দিয়েছেন তাতো দেখাতে পারছেন না। তারপরও শুনেছেন তদন্তকাজ দ্রুত শেষ করতে পারবে না। তারপরও কেন জামিন আটকে রাখবেন। আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলে অথচ এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এক ঘণ্টা ধরে কোর্টকে বসিয়ে রেখেছেন। কারণ তিনি কোন ফেসবুক পোস্ট দেখাবেন সেটার মধ্যে যেতে পারছেন না। ইন্টারনেট চালু করতে পারছেন না। এতে কিসের ডিজিটাল বাংলাদেশ ওনি রাখবেন আর কিসের ডিজিটাল নিরাপত্তা ব্যবস্থা করবেন।
কথা হচ্ছে, যে কেউ আইনের কাছে আসলে সবাই সমান থাকবে বিচারকের কাছে। দুপক্ষকে সমানভাবে দেখতে হবে। জামিন শুনানির সময় আগেই রাষ্ট্রকে শোনার কোনো নজির নাই। তিন সপ্তাহ আগে একটা রুল দিয়েছেন আদালত। কেন তাকে জামিন দেওয়া হবে না। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো জবাব দেওয়া হয়নি। এরফলে রাষ্ট্র আদালতকে খাটো করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ বলেন, আদালত উভয়পক্ষকে শুনে মামলাটি আজ কার্য তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। এ অবস্থায় তারা চাইলে ভিন্ন একটি বেঞ্চে যেতে পারেন কিংবা এই কোর্টেও আসতে পারেন।
গত ২৯ অক্টোবর আদালত আল জাজিরার ভিডিও ফুটেজ দেখার জন্য নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ৭ অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
গত ১৮ অক্টোবর দ্বিতীয়বারের মতো ড. শহিদুল আলম হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন।
এ ছাড়া গত ৪ সেপ্টেম্বর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের জামিন আবেদন শুনতে বিব্রতবোধ করেন হাইকোর্টের আরেকটি বেঞ্চ।
গত ১২ আগস্ট তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। ৬ আগস্ট রমনা থানায় করা মামলায় শহিদুল আলমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি শহিদুল আলম তার ফেসবুক টাইম লাইনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কল্পনা প্রসূত অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এর মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণিকে শ্রুতি নির্ভর (যাচাই-বাছাই ছাড়া কেবল শোনা কথা) মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে উসকানি দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকররূপে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপণ করেছেন।
আবেদনে আরও বলা হয়, আসামি শহিদুল ইসলাম আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ জনমনে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচার করেছেন।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই