‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাহার শ্রদ্ধার, সাংবাদিক হিসেবে অনন্য’
১ নভেম্বর ২০১৮ ২১:২৭
।। সারাবাংলা ডেস্ক।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: রইসুল হক বাহার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্মরণীয় ও শ্রদ্ধার মানুষ এবং সাংবাদিক হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য। প্রয়াত গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আ ক ম রইসুল হক বাহার স্মরণসভায় এ মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক মাহফুজ আনাম।
বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এই নাগরিক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা রইসুল হক বাহার স্মরণসভা পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।
সভায় ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, চারদিকে বৈষম্য বেড়েছে, দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। মূল্যবোধের অভাব। আমরা রাষ্ট্র, সরকার, রাজনৈতিক দলগুলোর দোষ দিচ্ছি। কিন্তু এখানে আমাদের ব্যক্তিপর্যায়ের দায়িত্বও কম নয়। ব্যক্তিপর্যায়ে সৎ, বৈষম্যহীন এবং মূল্যবোধসম্পন্ন জীবনযাপন সমাজে ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে রইসুল হক বাহারের মতো মানুষ অনন্য।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাহার স্মরণীয় এবং শ্রদ্ধার। স্বাধীন দেশ পেয়েছি। স্বাধীন দেশ পাওয়ার অর্থ কি? বৈষম্যহীন, স্বাধীন চেতনাবোধ, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠন এসবই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা।
রইসুল হককে সততার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বন্দরের মতো জায়গায় চাকরি করলে মানুষকে পরিবার চালানোর জন্য ভাবতে হয় না। কিন্তু তিনি সংসার চালানোর জন্য খণ্ডকালীন হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নিয়েছিলেন। এটা তার সততার অনন্য দৃষ্টান্ত। সৎ ও মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ রইসুল হকের মধ্যে পরিবেশ নিয়ে চিন্তাও ছিল অনেক বেশি। এটাও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকেই এসেছে।
সভাপতির বক্তব্যে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, ‘তিনি মুক্তিযোদ্ধা, তিনি সাংবাদিক আবার তিনি বন্দরের মতো জায়গায় চাকরি করেছেন। এরপরও তিনি নিজেকে নির্মোহ এবং সৎ রাখতে পেরেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে আজ অনেকে অনেক কিছু করছে। সাংবাদিকতাকেও নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে অনেকে। আর বন্দরের মতো সরকারি চাকরি করেও বাহার নিজেকে কখনো ক্ষয় হতে দেননি। তিনি আপস করেননি।’
তিনি আরও বলেন, বাহার তরুণদের পথ দেখিয়েছেন। তার কোনো সংগঠন ছিল না। কিন্তু তিনি জনে জনে বন্ধন তৈরি করেছিলেন। নানা স্তরের মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল।
পরিষদের সদস্য সচিব সুশান্ত বড়ুয়ার সঞ্চালনায় মুক্তিযোদ্ধা গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাহাব উদ্দিন, মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহমেদ, খেলাঘর চট্টগ্রাম মহানগরী কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা, উদীচীর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ডা. চন্দন দাশ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি নাজিমুদ্দীন শ্যামল, আওয়ামী লীগ নেতা জামসেদুল আলম চৌধুরী, জাসদ নেতা জসিম উদ্দিন, বাসদ (মাক্সবাদী) নেতা অপু দাশগুপ্ত, গণসংহতি আন্দোলনের হাসান মারুফ রুমি, আইনজীবী ভূলন লাল ভৌমিক, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্রের সিরাজুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন।
এতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন সাংবাদিক সুভাষ দে। সভার শুরুতে সংগীত পরিবেশন করেন রক্তকরবীর শিল্পীরা।
১৯৭১ সালের মার্চে বাঙালির ওপর নিধনযজ্ঞ চালানোর জন্য পাকিস্তান থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা অস্ত্রবোঝাই সোয়াত জাহাজ প্রতিরোধের অন্যতম বীর ছিলেন রইসুল হক বাহার।
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ সেপ্টেম্বর এই মুক্তিযোদ্ধার জীবনাবসান হয়েছে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সাংবাদিকতা পেশায় ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইসুল হক বাহার।
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ