স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান
২ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৪৩
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
‘দৃষ্টি ফেরায় চক্ষুদান, রক্তদানে বাঁচে প্রাণ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ শুক্রবার (২ নভেম্বর) সারাদেশে পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস’। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ ও সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতির যৌথ উদ্যোগে এই দিবস পালিত হচ্ছে।
দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বটতলায় এসে শেষ হবে। পরে সকাল ১১টায় বিএসএমএমইউ মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
দিবসটি উপলক্ষে আলাদা আলাদা বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি রক্তদান, মরণোত্তর চক্ষুদান, মানবচক্ষু সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সংযোজনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। তাই মানুষের প্রয়োজনে মানুষ সব সময় এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। জরুরি অস্ত্রোপচার, দুর্ঘটনা, অসুস্থতাসহ বিভিন্ন কারণে মানবদেহে রক্তের অভাব পূরণে বাংলাদেশে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন হয়। মানবদেহে রক্ত কয়েকমাস পর পর এমনিতেই নষ্ট হয়ে যায়, আবার নতুন রক্ত তৈরি হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, একজন সুস্থ মানুষ নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘পাশাপাশি প্রতিবছর অসংখ্য মানুষ কর্ণিয়াজনিত সমস্যার কারণে অন্ধত্ববরণ করছে। কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্বের ক্ষেত্রে মানবকর্ণিয়া প্রতিস্থাপন একমাত্র চিকিৎসা। তাই কর্ণিয়াজনিত অন্ধত্ব দূর করতে মরণোত্তর চক্ষুদানে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। মানবকল্যাণে সবাই রক্ত ও মরণোত্তর চক্ষুদানে এগিয়ে আসবে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় স্বেচ্ছায় রক্তদান এরই মধ্যে একটি জনপ্রিয় সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এক্ষেত্রে সন্ধানীর মতো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ধানীর পাশাপাশি সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সব স্তরের জনগণকে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো মানবিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সন্ধানী স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে রক্তদানকে একটি সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করেছে। আমি আশা করি, সন্ধানী চক্ষু দানকেও জনপ্রিয় করে তুলে বিশ্বে বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠা করবে।’
তিনি বলেন, আমরা ‘মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। এর ফলে স্বেচ্ছায় অঙ্গদান ও মৃত্যুর পর চক্ষুদানে আর কোনো জটিলতা থাকবে না। মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আইনানুগ কোনো উত্তরাধিকারের লিখিত অনুমতি সাপেক্ষে অঙ্গ নেওয়া যাবে। মৃত্যুর পর সে পরিবারের কোনো উত্তরাধিকার চোখ সংগ্রহের অনুমতি দিতে এগিয়ে এলে বাংলাদেশে কর্ণিয়া দান ও কর্ণিয়া সংযোজনে বিপ্লব ঘটবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছি। গোপালগঞ্জে শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণ করেছি। ছানি অপারেশসহ অন্যান্য চক্ষু অপারেশনের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে অন্ধত্বের হাত থেকে রক্ষা করে তাদের মূলধারায় যুক্ত করা হচ্ছে।
বাণীতে ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস ২০১৮’-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, ‘জাতীয় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস ২০১৮’ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজকে স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে একটি জনপ্রিয় আন্দোলনে গড়ে তুলেছে। এর স্বীকৃতি হিসেবে সরকার ২ নভেম্বরকে ‘স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান দিবস’ সংক্রান্ত জাতীয় দিবস ঘোষণা করে প্রতিবছর পালন করে আসছে।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশে অন্ধ জনসংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৫ লাখ ব্যক্তির অন্ধত্ব কর্নিয়াজনিত। এ সংখ্যার সঙ্গে প্রতিবছর আরও নতুন করে যোগ হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার। সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি দেশে কর্নিয়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সরবরাহকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান। সবাইকে স্বেচ্ছায় রক্তদান ও মরণোত্তর চক্ষুদান এবং মৃত্যুর পর মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-পরিজনদের কাছে কর্নিয়াদানের কথা বলার অভ্যাস করারও আহ্বান জানান তিনি। বাসস।
সারাবাংলা/টিআর/এমএইচ