Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘বিশ্বস্ত অর্থ সংগ্রহকারী’ গণপূর্তের রফিক, দুদকে অভিযোগ


২ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৫০

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টেন্ডার বাণিজ্য করে হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে দেশ ও দেশের বাইরে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ও বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগও এসেছে। তিনি মন্ত্রী এবং সচিবের ‘বিশ্বস্ত অর্থ সংগ্রহকারী’ বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে খোদ গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। সম্প্রতি এমন অভিযোগ পাওয়ার পর তা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে দুদক।

লিখিত ওই অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে দুদক সচিব শামসুল আরেফিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তদন্ত শুরু হবে। প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। অর্থাৎ দুদকের নিয়ম অনুযায়ীই সব হবে।’

দুদকের গ্রহণ করা লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘টেন্ডার বাণিজ্য করে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ১ হাজার কোটি টাকা, গণর্পূত সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, গণপূর্ত মন্ত্রী ২ হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। টেন্ডারে প্রধান প্রকৌশলী ৩ শতাংশ, গণপূর্ত সচিব শহীদুল্লাহর জন্য ২ শতাংশ, গণপূর্ত মন্ত্রীর জন্য ২ শতাংশ করে ঠিকাদারদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করেন। এজন্য তিনি মন্ত্রী এবং সচিবের বিশ্বস্ত অর্থ সংগ্রহকারী হিসেবে সুপরিচিত।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। সাংবাদিক পরিচয়ে একাধিকবার ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।

বিজ্ঞাপন

তবে গণপূর্ত সচিব শহীদ উল্লাহ খন্দকার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই। আমার নামে-বেনামে কোনো সম্পদ নেই।’ দুদকে আপনার নামেও অভিযোগ এসেছে, এমন কথায় গণপূর্ত সচিব বলেন, ‘যদি অভিযোগ এসে থাকে দুদক তা তদন্ত করবে। এখানে তো আমার কোনো মন্তব্য থাকতে পারে না। আমি এ ধরনের কোনো কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত নই।’

দুদকে জমা দেওয়া ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান প্রকৌশলীর পদটি বাগিয়ে নিতে রফিকুল ঘুষ লেনদেনে জড়িত হন। অভিযোগ, ২৫ কোটি টাকার বিনিময়ে বর্তমান পদে বসেছেন তিনি। এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও।

লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, রফিকুল ইসলাম তিন মাস আগে গণপূর্ত সচিব এবং তার স্ত্রীসহ একাধিক বার বিদেশ ভ্রমণে গিয়ে কোটি টাকা দামের ডায়মন্ডের নেকলেস সচিবের (গণপূর্ত সচিব) স্ত্রীকে উপহার দেন। এছাড়া সচিব এবং মন্ত্রীর জন্য সংগ্রহকৃত টাকা বিদেশে গিয়ে ডলারের মাধ্যমে সচিব এবং মন্ত্রীর নিকটাত্মীয়ের কাছে হস্তান্তর করেন।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে গ্রেড-১ পদে পদোন্নতি পেতে মন্ত্রীকে ২০ কোটি এবং সচিবকে ১০ কোটি টাকা দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে ডিও লেটারের সুপারিশ নিয়েছেন। অর্থ বিনিময়ের মূল কারণ কমপক্ষে আরও দুই বছর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া। পুনরায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার জন্য রফিকুল কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা নিয়ে মাঠে নেমেছেন বলেও ওই অভিযোগে বলা হয়েছে। তাতে আরও বলা হয়, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের আশীর্বাদপুষ্ট সৈয়দ মাহফুজ আহম্মদ ও এস এম ফজলুল কবির সম্প্রতি ২ বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছে।

দুদকে জমা দেয়া ওই অভিযোগে আরও বলা হয়, কানাডায় অবস্থানরত ছেলের মাধ্যমে বিদেশে ডলার পাঠাতে সহযোগিতা না করায় গণপূর্ত অধিদফতরের ই/এম সার্কেল-৩ এর  (শেরে বাংলা নগর অঞ্চল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল হাসেমকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মানসিকভাবে নির্যাতন করায় তিনি প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলামের রুমেই স্ট্রোক করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। বিষয়টি চিৎকার করে হাসেমের স্ত্রী হাসপাতালের সবাইকে জানাতে চাইলে রফিকুল ইসলাম পেনশনের টাকা না পাওয়ার হুমকি দিয়ে হাসেমের স্ত্রীকে থামিয়ে রাখেন।

রফিকুলের বিরুদ্ধে কানাডায় নিকট আত্মীয়ের নামে বাড়ি কেনার অভিযোগ রয়েছে। দুদকের গ্রহণ করা ওই অভিযোগ বলা হয়েছে, রফিকুল ইসলাম তার প্রথম ঘরের স্ত্রীর ছেলে শাওনের মাধ্যমে হংকংয়ের এইচএসবিসি ব্যাংকে ২০০ কোটি টাকা জমা রাখেন। দুর্নীতি ও অনিয়ম করেন রফিকুল ইসলাম শত শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, রফিকুলের নামে ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ও ফ্ল্যাট রয়েছে। ধানমন্ডির ৮নং রোডে হাউজ নং-৯, রাজধানীর গ্রিনরোডের গ্রিন কর্ণার নামের অ্যাপার্টমেন্টে আলিশান দুটি ফ্ল্যাট, গুলশানের ৩৫ নং রোডে ৪৪ নং বাড়িতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং বনানীর ৭ নং রোডে এফ/১৭ আনোয়ার মঞ্জিল নামে একটি বাড়ি রয়েছে। এছাড়া মিরপুরে ১০ কাঠা জমির উপর ১২টি ফ্ল্যাট বিশিষ্ট ছয় তলা বাড়ির মালিকও তিনি।

এতে আরও বলা হয়, গণপূর্ত অধিদফতরের প্রতিটি বড় বড় কাজের টেন্ডার থেকে ‘নেগোশিয়েশন মানি’ হিসেবে প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম এবং জি কে বিল্ডার্স এর মালিক গোলাম কিবরিয়া শামীম শত কোটি টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে।

অভিযোগে আরও বলা হয়, গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ছাত্রজীবন থেকেই ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। পারিবারিক সূত্রে তিনি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের ভাগ্নে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সময়ে সংসদ সচিবালয়সহ ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কর্মরত ছিলেন তিনি। গোলাম আজমের সুপারিশে বিএনপি সরকারের গণপূর্তমন্ত্রী মির্জা আব্বাসের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন হিসেবে গণপূর্ত অধিদফতর থেকে অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করে স্বল্পসময়ে কোটিপতি হয়ে যান রফিকুল ইসলাম। জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী ও কোরবানির ঈদে মির্জা আব্বাসহ শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের গরু সরবরাহকারী হিসেবে গণপূর্ত অধিদফতরে তার ব্যাপক পরিচিতিও রয়েছে।

গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ঠিকাদারদের পক্ষে দুদকে এই অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। গণপূর্তের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে প্রকৌশলী ফজলে রাব্বী লিংকনের স্বাক্ষর রয়েছে ওই অভিযোগে।

দুদকে অভিযোগ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে লিংকন সারাবাংলার কাছে তা অস্বীকার করলেও অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে দুদক। সংস্থাটি জানিয়েছে, অভিযোগের বিষয়টি প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে প্রমাণিত হলে প্রকৌশলী রফিকুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/এমও/এমএইচ

অভিযোগ টেন্ডার বাণিজ্য দুদক দুদকের তদন্ত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর