‘সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে…’
২ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৩৩
লেখা: রমেন দাশগুপ্ত, ছবি: শ্যামল নন্দী
চট্টগ্রাম ব্যুরো: শেষ বিকেলের সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিম দিগন্ত। আকাশজুড়ে বিদায়ী সূর্যের লালচে আভা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটার রাণী জপমালা গির্জার কবরস্থানে তখন আলোর সমাহার। কবরে-কবরে জ্বলে উঠেছে মোমবাতি। আগরবাতির সুঘ্রাণে মােহময় চারদিক। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে হাজারো কবর।
শুক্রবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাণী জপমালা গির্জায় দেখা মিলেছে হাজার হাজার শোকার্ত স্বজনের। অল সোলস ডে-তে কবরে ফুল ছিটিয়ে, মোমবাতি জ্বেলে যারা স্বজনের জন্য অনন্তলোক প্রার্থনা করেছেন।
মাত্র ২৬ ববছর বয়সে মারা যান আন্না পাপড়ি হালদার। ১৯৭৫ সালের ২৩ নভেম্বর জন্ম নেওয়া আন্না ২০০১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি এই পৃথিবী ছেড়ে যান। তার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে অাবেগে আপ্লুত বাবা উইলসন গোমেজ। অান্নার ভাই জেমস গোমেজ ও ভাবি ইভা রোজারিওর চোখ ভেজা। পরম মমতায় কবরে ফুল ছিটিয়ে মোমবাতি জ্বেলে দিচ্ছেন আন্নার মেয়ে। আন্নার ভাতিজা শিশুবয়সী ট্রয় গোমেজও মোমবাতি জ্বেলে প্রার্থনা করছেন পরলোকগত ফুপুর জন্য।
জেমস গোমেজ সারাবাংলাকে বলেন, প্রতিবছরই এই দিনটাতে আমার বোনের কবরে বাতি জ্বালাতে আসি। আমার বোনটাকে তো আর ফিরে পাব না। এদিনে এখানে এলে মনে হয় বোনটা এখনও আমাদের সাথেই আছেন।
২০১৪ সালের জন্ম নিয়েই পৃথিবী ছাড়েন যে শিশুটি, তার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে চোখ মোছেন মা হেনা রড্রিক্স। হেনা সারাবাংলাকে বলেন, সন্তান যেন স্বর্গে শান্তিতে থাকে।
পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া বাবা ইমন কর্মকার ও মা এলিজাবেথ কর্মকারের কবরে মোমববতি-ফুল নিয়ে আসেন ছেলে লাভু কর্মকার।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বাবাকে হারিয়েছি ২০১০ সালে। মা গত এপ্রিলে মারা গেছেন। প্রতিবছরই আসি স্বজনদের স্মরণ করতে। পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি মানুষের আত্মাই যেন শান্তিতে থাকে পরমেশ্বরের কাছে সে প্রার্থনা করি।
চট্টগ্রামের বৃহত্তম এই গির্জায় শেষ বিকেলে শোক ও প্রার্থনা সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। রাণী জপমালা গির্জার সিএসসি পাল পুরোহিত বনিফাস টলেন্টুনু এতে পৌরহিত্য করেন। জীবনের পাঠ চুকিয়ে পরপারে পাড়ি দেওয়া স্বজনদের জন্য প্রার্থনায় গলা মেলান সমবেত খ্রিস্টধর্ম অনুসারীরা।
এ সময় পরলোকগত স্বজনের আত্মা স্মরণের পাশাপাশি যুদ্ধবিগ্রহ অথবা হিংসাত্মক কাজের শিকার হয়ে নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। ‘যারা বিশ্বাসে দুর্বল হয়ে প্রায়শ্চিত্ত করছেন তারা যেন প্রভুর সান্নিধ্য পেয়ে প্রায়শ্চিত্ত শেষে অনন্তলোকের দেখা পান। প্রভুর অনন্ত আলো যেন আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের আলোকিত করে।’ বলেন পাল পুরোহিত। আবেগঘন পরিবেশে সারকথাটি তিনি তুলে ধরেন এভাবে, ‘কবরে আসার আগে প্রিয়জনটির খোঁজ নিন। তার যত্ন নিন। জীবনে যারে তুমি দাওনি মালা, মরণে তাকে ফুল দিয়ে কিছুই হবে না।’
প্রার্থনা শেষে খ্রিষ্ট ভক্তদের জন্য খ্রিষ্ট প্রসাদ বিতরণ করা হয়। ‘অল সোলস ডে’ উপলক্ষে নগরীর বিভিন্ন গির্জায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই