Thursday 15 May 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাড়ছে শীতের অসুখ, সতর্ক থাকার পরামর্শ


৬ জানুয়ারি ২০১৮ ২২:৫০ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৮:৪৩

জাকিয়া আহমেদ সোহেল রানা

ঢাকা: জানুয়ারি মাসের শুরুতে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। আর সেই তীব্রতায় বেড়েছে শীতজনিত সব ধরনের অসুখ। ছোট থেকে বৃদ্ধরা এই অসুখে আক্রান্ত হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতের তীব্রতায় শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে । মূলত শীতের সঙ্গে অপুষ্টির কারণে এ সময়ে শিশুরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং এ কারণে শিশুরা রোগে ভোগে বেশি।

তাই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বলছেন, শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টির দিকেও নজর দিতে হবে।

গত ৪ জানুয়ারি ঢাকা শিশু হাসপাতালে বহির্বিভাগে মোট আসা শিশুর সংখ্যা ছিল ২০৭ জন, এর মধ্যে জরুরি বিভাগে ছিল ১১৭ জন আর সেদিন হাসপাতালে ভর্তি হয় ৭১ জন শিশু। আর গত ৫ জানুয়ারি জরুরি বিভাগে আসা ১৪৯ জন শিশুসহ সেদিন চব্বিশ ঘণ্টায় শিশু রোগীর সংখ্যা ছিল মোট ২৫৯ জন। এর মধ্যে ২৮ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়। এসব শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত।

রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, শিশু-রোগীদের সংখ্যা বেড়েছে। গত ২৬ ডিসেম্বর চার মাসের মেয়ে রাইসাকে নিয়ে সাভার থেকে এসেছেন মা মাহমুদা বেগম। ঢাকা শিশু হাসপাতালের চার নম্বর ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রাইসার নাকে নল, হাতে স্যালাইন। ‘নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত রাইসার কৃত্রিম অক্সিজেন ছাড়া তার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আর এই অক্সিজেন মাস্কের ফলে মেয়েটার আরও বেশি কষ্ট হচ্ছে’— বলেন মাহমুদা।

মাহমুদা আরও বলেন, ‘জন্মের পর থেকেই মেয়েটা আমার ভুগছে, তবে ডিসেম্বরের শেষে এসে হাসপাতালে ভর্তি হতেই হলো।’

বিজ্ঞাপন

ঢাকা শিশু হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীই শীতের ঠাণ্ডাজনিতে অসুখে আক্রান্ত। একই অবস্থা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে জানা যায়, এখানে শিশু-রোগীর সংখ্যাই বেশি। আর  এদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্রনবিউলাইটিসে আক্রান্ত। এ ধরনের রোগীরা ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে। এর সঙ্গে রয়েছে, ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার রোগী।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ শিশু বিভাগের সঙ্গে কথা হয় হাজারীবাগ থেকে আসা রিপা বেগমের সঙ্গে। রিপা বেগম এসেছেন তার দুই বছরের মেয়ে মার্জিয়াকে নিয়ে। রিপা জানান, গত কয়েকদিন ধরেই ঠাণ্ডা-জ্বরে আক্রান্ত ছিল মার্জিয়া। আর বেশি শীত পড়ার পর থেকে ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছে মেয়ে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রাজেশ মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরো বছর জুড়ে গরমের তুলনায় শীতের সময়ে রোগীর সংখ্যা কম থাকে। কিন্তু শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় শীতের সময়ে।’

ডা. রাজেশ মজুমদার আরও বলেন, ‘শীতের তীব্রতা বেড়ে গেলে বৃদ্ধদের তুলনায় শিশুরা আক্রান্ত হয় বেশি। প্রথমে ঠাণ্ডা-জ্বর, শ্বাসকষ্ট, পরে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয় শিশুরা। এদের মধ্যে যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পরে, তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হয়।’

ঢাকা শিশু হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক ডা. রিজওয়ানুল আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আসলে ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শীতকালীন রোগের প্রার্দুভাব বেড়ে গিয়েছে। নিউমোনিয়া, ঠাণ্ডা-কাশি জ্বর নিয়ে শিশুরা বহির্বিভাগে বেশি আসছে। সেই সঙ্গে রয়েছে শীতকালীন ডায়রিয়া।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, শীতের আগে বহির্বিভাগে প্রতিদিন দেড় শ’ থেকে দুই শ’ রোগী হলেও শীতের এই সময়টায়ে সে সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে তিন শ’ থেকে চার শ’তে। আর এই সাড়ে চার শ’ রোগীর মধ্যে শতকরা দশ শতাংশ শিশুই নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত। আর ডায়রিয়াতে আক্রান্ত হয়ে আসার রোগীর ভর্তির সংখ্যাও বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।

আর আবহাওয়া যেহেতু শুষ্ক এবং শহরে ধুলোর পরিমাণে বেড়ে যাওয়াতে বিদ্যালয়ে যাওয়া শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে অ্যাজমাতে।

শীতকালীন ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা-কাশিতে আক্রান্ত শিশুদের বেলায় বাবা-মাকে একটু বেশিই সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে বলে জানালেন ডা. রিজওয়ানুল আহসান।

তিনি বলেন, ‘সকাল থেকে রাতে ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত শিশুদেরকে হালকা কুসুম গরম পানি খেতে দিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে হবে রঙিন ফল।’

ঠাণ্ডা-কাশি জ্বর হলে প্রচুর তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে ডা. রিজওয়ানুল আহসান বলেন, ‘পাতলা আরামদায়ক পোশাক পরাতে হবে শিশুদের। আর নবজাতক শিশুদের বেলাতে আরও সতর্ক থাকতে হবে কারণ, সবদিক দিয়েই তারা খুব স্পর্শকাতর।  ঠাণ্ডা যেন না লাগে, গরম কাপড় সব সময় গায়ে থাকাতে অনেক সময় শিশুরা ঘেমে যায়  এবং সেই ঠাণ্ডাটাও কিন্তু নিউমোনিয়ার অন্যতম কারণ। তাই শিশুদের পোশাক হতে হবে নরম এবং ঢোলাজাতীয়। উষ্ণ আরামদায়ক কাপড় আর এ সময়ে শিশুদের মাস্ক পরতে হবে এবং ধুলো এড়িয়ে চলতে হবে, তাইলেই এ সময়ের রোগবালাই থেকে দূরে থাকা যাবে বলে মন্তব্য করেন।’

সারাবাংলা/জেএ/আইজেকে

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর