Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

৩ ঘণ্টায় শেষ হলো ১৪ দল-যুক্তফ্রন্ট সংলাপ


২ নভেম্বর ২০১৮ ২২:৪৩

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সঙ্গে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটের সংলাপ শেষ হয়েছে।

শুক্রবার (২ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে সংলাপ শুরুর পর শেষ হয় রাত ১০টা ৩২ মিনিটে। এতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অন্যদিকে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নেতৃত্ব দেন যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

এর আগে, সংলাপের সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই, যেন জনগণ তাদের নেতৃত্ব খুঁজে নিতে পারে। কিভাবে সেই নেতৃত্ব খুঁজে নিতে পারে, সেটার চূড়ান্ত একটা ব্যবস্থা করাটাই আমাদের লক্ষ্য।

তিনি বলেন, অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও বাধা অতিক্রম করে আমরা গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখছি। জনগণের কল্যাণে কাজ করছি। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক, এটাই আমরা চাই। গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকলে দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে, আমরা সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে চাই।

পরে সংলাপে যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এসব দাবির মধ্যে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং নিশ্চিত করতে সংসদ ভেঙে দেওয়া বা নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া; নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচন কমিশনের অধীনে ন্যস্ত করা; নির্বাচনকালীন বা জাতীয় সরকার গঠনে প্রয়োজনে একদিনের জন্য সংসদ ডাকা; সীমিত ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনের আগে-পরে সেনাবাহিনী মোতায়েন; নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দিদের মুক্তিসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে গণভবনে পৌঁছান যুক্তফ্রন্টের নেতারা। গণভবনে প্রবেশের সময় যুক্তফ্রন্টের একাধিক নেতা সাংবাদিকদের বলেন, এই সংলাপ নিয়ে তারা আশাবাদী। তারা আশা করছেন, এই সংলাপের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাজমান সমস্যাগুলোর সমাধান বেরিয়ে আসবে।

গণভবনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সদস্যরা হলেন— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, কাজী জাফরুল্লাহ, ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, স্থায়ী কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। তাদের সঙ্গে আছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও মঈনুদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া এবং ওয়াকার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন।

অন্যদিকে সংলাপে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারার মহাসচিব মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বিএনপি থেকে বের হওয়া ও বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, সহসভাপতি মাহমুদা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা; বাংলাদেশ ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া; বিএলডিপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ ও মহাসচিব অ্যাডভাকেট দেলোয়ার হোসেন খান এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা ও জাতীয় জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সংলাপে সম্মত হলে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেও সরকারি দলের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহের কথা জানানো হয়। পরে ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে বি. চৌধুরীর লেখা চিঠি নিয়ে যান বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রউফ মান্নান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। ওইদিন রাতেই বিকল্পধারাসহ যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে সম্মত হয়ে তাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আমন্ত্রণপত্রে জানানো হয়, ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, গতকাল ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ২৩ জন এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ নেতা সংলাপে অংশ নেন। সংলাপ শেষে উভয় পক্ষের নেতারা জানিয়েছেন, এক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাধীন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশসহ কর্মসূচি পালন, জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলাগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়। এর বাইরে ঐক্যফ্রন্টের বৃহত্তম শরিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বাকি দাবিগুলো নিয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি ক্ষমতাসীন দলের। আলোচিত এই সংলাপকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে ‘ফলপ্রসূ’ অভিহিত করা হলেও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এই সংলাপে ‘সন্তুষ্ট নন’ বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন-

সংলাপে যুক্তফ্রন্টের যারা থাকছেন

বিকল্পধারাও সরকারের সঙ্গে সংলাপ চায়

গণভবনে ঢুকতে শুরু করেছেন যুক্তফ্রন্ট নেতারা

সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীকে এবার বিকল্পধারার চিঠি

গণভবনে নৈশভোজে লাল আটার রুটি চান বি. চৌধুরী

দাওয়াত পেলেন বি. চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ ২ নভেম্বর

অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই, সংলাপের সূচনায় প্রধানমন্ত্রী

সারাবাংলা/এমএমএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর