Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে রাজি, সংলাপ শেষে যুক্তফ্রন্ট


২ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:০২

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের সংলাপ ‘ফলপ্রসূ’ হয়েছে জানিয়েছেন উভয় পক্ষের নেতারা। তারা বলছেন, সংলাপে এই সরকারের অধীনেই কিছু শর্তসাপেক্ষে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে।

শুক্রবার (২ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় এই সংলাপ। প্রায় তিন ঘণ্টার বৈঠক শেষ হয় রাত ১০টা ৩২ মিনিটে। এতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অন্যদিকে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে নেতৃত্ব দেন যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

বৈঠক শেষে একে একে বেরিয়ে আসেন উভয় পক্ষের নেতারা। এসময় উভয় পক্ষের নেতারাই বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীও এই সংলাপকে ফলপ্রসূ বলেছেন। তবে সরকারের অধীনে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে কি না, সে বিষয়ে বাসায় গিয়ে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিংয়ে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

এসময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। আলোচনায় তারা যেসব দাবি করেছেন, বেশিরভাগই মেনে নেওয়া মতো। সেগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে। দুয়েকটি দাবি নিয়ে দ্বিমত থাকলেও সেই দ্বিমত কেটে যাবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তফ্রন্ট সংলাপে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

১৪ দলের শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, যুক্তফ্রন্টের দলগুলো স্বাধীনতার সপক্ষের দল। তারা নির্বাচনে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তাদের সাত দফা দাবির কিছু দাবিতে দ্বিমত রয়েছে। সেগুলো বিবেচনা করা হবে।

প্রায়ই একই সুরে কথা বলেন যুক্তফ্রন্টের নেতারাও। বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম গোলাম সারোয়ার মিলন বলেন, সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে। কিছু দাবিতে সরকারের অমত আছে। সেগুলো মীমাংসার জন্য বিবেচনায় রেখেছে।

বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া বলেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে। আলোচনায় আমরা সন্তুষ্ট। আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব।

বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা বলেন, আমরা সংলাপে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, ওয়াদা দিয়েছেন, তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করবেন। আমরা সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। তবে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়া যায় না। তবে প্রধানমন্ত্রী আমাদের জানিয়েছেন, আজ থেকে সরকারের এমপি-মন্ত্রীরা কোনো ধরনের প্রকল্প বা উদ্বোধনের কোনো অনুষ্ঠান করবেন না। তারা কেউ কোনো প্রটোকল নেবেন না। সরকার সুষ্ঠু-অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেবে।

ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা বলেন, আমরা এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাব। তবে আমরা শর্ত দিয়েছি, নির্বাচনের সময় যেন সরকারের ক্ষমতা নিষ্ক্রিয় থাকে। প্রধানমন্ত্রী বা অন্য মন্ত্রীরা যেন বাড়তি সুবিধা না পায়। সরকারও এই দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গণভবনে অনুষ্ঠিত এই সংলাপে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সদস্যরা হলেন— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মতিয়া চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, কাজী জাফরুল্লাহ, ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, স্থায়ী কমিটির সদস্য আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রহমান, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। তাদের সঙ্গে আছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও মঈনুদ্দিন খান বাদল, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া এবং ওয়াকার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন।

অন্যদিকে সংলাপে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে বিকল্পধারা প্রেসিডেন্ট ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারার মহাসচিব মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, বিএনপি থেকে বের হওয়া ও বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরী, গোলাম সারোয়ার মিলন, আবদুর রউফ মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ ইউসুফ, সহসভাপতি মাহমুদা চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক ও সাবেক সংসদ সদস্য এইচ এম গোলাম রেজা; বাংলাদেশ ন্যাপ সভাপতি জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া; বিএলডিপির সভাপতি নাজিম উদ্দিন আল আজাদ ও মহাসচিব অ্যাডভাকেট দেলোয়ার হোসেন খান এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তুজা ও জাতীয় জনতা পার্টির সভাপতি শেখ আসাদুজ্জামান।

এর আগে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সংলাপে সম্মত হলে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেও সরকারি দলের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহের কথা জানানো হয়। পরে ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে বি. চৌধুরীর লেখা চিঠি নিয়ে যান বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রউফ মান্নান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। ওইদিন রাতেই বিকল্পধারাসহ যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে সম্মত হয়ে তাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আমন্ত্রণপত্রে জানানো হয়, ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

এর আগে, গতকাল ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ২৩ জন এবং ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ২০ নেতা সংলাপে অংশ নেন। সংলাপ শেষে উভয় পক্ষের নেতারা জানিয়েছেন, এক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাধীন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশসহ কর্মসূচি পালন, জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলাগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়। এর বাইরে ঐক্যফ্রন্টের বৃহত্তম শরিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বাকি দাবিগুলো নিয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি ক্ষমতাসীন দলের। আলোচিত এই সংলাপকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে ‘ফলপ্রসূ’ অভিহিত করা হলেও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এই সংলাপে ‘সন্তুষ্ট নন’ বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন-

সংলাপে যুক্তফ্রন্টের যারা থাকছেন

বিকল্পধারাও সরকারের সঙ্গে সংলাপ চায়

গণভবনে ঢুকতে শুরু করেছেন যুক্তফ্রন্ট নেতারা

সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীকে এবার বিকল্পধারার চিঠি

গণভবনে নৈশভোজে লাল আটার রুটি চান বি. চৌধুরী

দাওয়াত পেলেন বি. চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ ২ নভেম্বর

সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর