Sunday 20 Oct 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘সংলাপ আশাবাদের দিকে যাচ্ছে’


২ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:৩৪

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ক্ষমতাসীনদল এবং তাদের জোট শরিকদের সঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোরসংলাপ আশাবাদের দিকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট  অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (বি. চৌধুরী)।

তিনি বলেছেন, শুক্রাবার রাতে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে যুক্তফ্রন্টের দাবিগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত যৌক্তিক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং নির্বাচনের আগে ন্যূনতম নিরপেক্ষ পরিবেশ তৈরি হলে বিকল্পধারা নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট আগামী নির্বাচনে যাবে। অবশ্য তার আগে বিকল্পধারা এবং জোট নেতাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

আরও পড়ুন- যুক্তফ্রন্টের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে : কাদের

শুক্রবার (২ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১টায় বারিধারায় নিজ বাসভবন ‘মায়াবি’তে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরী এসব কথা বলেন। গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত যুক্তফ্রন্টের সংলাপের বিষয়বস্তু তুলে ধরতে মধ্যরাতে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।

বি. চৌধুরী বলেন, `আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে যে সব দাবি দাওয়া তুলে ধরেছি প্রধানমন্ত্রী এতে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।  নির্বাচন প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড অর্থাৎ সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দাবির সাথে প্রধানমন্ত্রী একমত পোষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের অধীনে থাকবে না, তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রপতির অধীনেই থাকবে। এ সব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কোনো দ্বিমত নেই।

‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের দাবির সাথে একমত হয়েছেন যে, নির্বাচনের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত কর্মচারীরা নির্বাচন কমিশনের অধীনেই  ন্যাস্ত থাকবে। তফসিল ঘোষণার পর এমপিগণ সংশ্লিষ্ট এলাকায় কোনো প্রকল্প উদ্বোধন বা প্রতিশ্রুতি যাতে না দিতে পারেন সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রধানমন্ত্রী রাজি হয়েছেন।  তফসিল ঘোষণার পর  মন্ত্রী ও এমপিদের সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রত্যাহার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী সরকারি দলের প্রর্থীদের বিল বোর্ড-ব্যানার, পোস্টার ইত্যাদি প্রসঙ্গে বলেন এসব অপসারণ করা হবে’— বলেন বি. চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে রাজি, সংলাপ শেষে যুক্তফ্রন্ট

তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বা জাতীয় সরকার গঠন প্রসঙ্গে আমাদের দাবির সাথে প্রধানমন্ত্রী একমত হন নাই। তবে তিনি বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষ থাকবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন সেনাবাহিনী উপজেলা পর্যায়ে ষ্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে থাকবে।

বি. চৌধুরী বলেন ইভিএম ব্যবহারে ইভিএম ব্যবহারে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা নেই। সেই জন্য আমরা এই নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না বলে মনে করি। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ ব্যাপারে অধ্যাদেশ হয়ে গেছে। তবুও তিনি রাষ্ট্রপতির সাথে কথা বলবেন।’

‘নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক কারণে আটক বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এ ব্যাপারে আমরা আগেই রাজি হয়েছি। এটা বাস্তব দাবি’— বলেন বি. চৌধুরী।

আরও পড়ুন- সংলাপে যুক্তফ্রন্টেরও ৭ দফা দাবি

এর আগে বি. চৌধুরীর নেতৃত্বে সন্ধ্যা ৬-৪০ মিনিটে বারিধারা থেকে গণভবনে উদ্দেশে যুক্তফ্রন্ট ও বিকল্পধারার প্রতিনিধিরা রওনা দেন। প্রতিনিধি দলে ছয় জন নতুন করে অর্ন্তভূক্ত হন।  ৭টা ২৪ মিনিটে প্রতিনিধি দল গণভবনে পৌঁছেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শমসের মবিন চৌধুরীসহ বিকল্পধারা এবং যুক্তফ্রন্টের শরিক দল বাংলাদেশ ন্যাপ, বিএলডিপি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) ও জাতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে সংলাপ শেষ হওয়ার পর গণভবন থেকে বেরিয়ে ১৪ দল ও যুক্তফ্রন্টের নেতাদের বেশিরভাগই বলেন, সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে। তারা সংলাপে সন্তুষ্ট। সংলাপে যুক্তফ্রন্টের বেশিরভাগ দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে। যে দাবিগুলো নিয়ে দ্বিমত রয়েছে, সেগুলোও বিবেচনা করা হচ্ছে। এসব নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

বিজ্ঞাপন

সংলাপ শেষে গণভবন থেকে বের হওয়ার মুখে তাৎক্ষণিকভাবে ডা. বি. চৌধুরী বলেন, সংলাপ ফলপ্রসূ হয়েছে। পরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তফ্রন্ট যেসব দাবি জানিয়েছে, সেগুলোর কোনোটিই সংবিধান বহির্ভূত নয়। যে কারণে তাদের সব দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন- সংলাপ নিয়ে আশাবাদ যুক্তফ্রন্টের

এর আগে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দল সংলাপে সম্মত হলে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেও সরকারি দলের সঙ্গে সংলাপে বসার আগ্রহের কথা জানানো হয়। পরে ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যায় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে বি. চৌধুরীর লেখা চিঠি নিয়ে যান বিকল্পধারার প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রউফ মান্নান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক। ওইদিন রাতেই বিকল্পধারাসহ যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপে সম্মত হয়ে তাদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আমন্ত্রণপত্রে জানানো হয়, ২ নভেম্বর সন্ধ্যায় গণভবনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে, বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায়ও গণভবনে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের সঙ্গে সংলাপ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সংলাপ শেষে উভয় পক্ষের নেতারা জানান, এক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবির মধ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্বাধীন রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশসহ কর্মসূচি পালন, জাতীয় নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতি এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মামলাগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়। এর বাইরে ঐক্যফ্রন্টের বৃহত্তম শরিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বাকি দাবিগুলো নিয়ে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি ক্ষমতাসীন দলের। আলোচিত এই সংলাপকে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের পক্ষ থেকে ‘ফলপ্রসূ’ অভিহিত করা হলেও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এই সংলাপে ‘সন্তুষ্ট নন’ বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন-

সংলাপে যুক্তফ্রন্টের যারা থাকছেন

বিকল্পধারাও সরকারের সঙ্গে সংলাপ চায়

৩ ঘণ্টায় শেষ হলো ১৪ দল-যুক্তফ্রন্ট সংলাপ

গণভবনে ঢুকতে শুরু করেছেন যুক্তফ্রন্ট নেতারা

সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীকে এবার বিকল্পধারার চিঠি

গণভবনে নৈশভোজে লাল আটার রুটি চান বি. চৌধুরী

দাওয়াত পেলেন বি. চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ ২ নভেম্বর

অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চাই, সংলাপের সূচনায় প্রধানমন্ত্রী

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর