বিস্ফোরণের পর শিবিরের কার্যালয় থেকে ককটেল জব্দ
৩ নভেম্বর ২০১৮ ২২:৫৮
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রাম নগরীতে ছাত্রশিবিরের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ৬টি ককটেল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করেছে পুলিশ। তবে কার্যালায়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বিস্ফোরণের পর সেখানে থাকা ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা গোপন পথ দিয়ে পালিয়ে গেছে- ধারণা পুলিশের।
শনিবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে নগরীর চকবাজার থানার চন্দনপুরা ডিসি রোডের আল ইসরা ভবনে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে শিবির কার্যালয়ে বিস্ফোরণ, ঘিরে রেখেছে পুলিশ
ওই সময় আল ইসরা ভবনের আশপাশের এলাকায় ব্লক রেড পরিচালনা করছিল পুলিশ। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে পুলিশ সদস্যরা ওই ভবনের সামনে জড়ো হন বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন নগর পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মেহেদী হাসান। তিনি জানান, গ্রেফতারি ও সাজা পরোয়ানার আসামিদের ধরতে ব্লক রেড পরিচালনা সময় চারবার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
এ সময় চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন এবং সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নেজাম উদ্দিনের নেতৃত্বে আলাদা আলাদা দল ঘটনাস্থলে যায়। তারা আল ইসরা ভবনে প্রবেশের বিকল্প পথ দিয়ে ভবনের নিচতলায় প্রবেশ করেন। সেখানে মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের মুক্তির দাবি সম্বলিত পোস্টার-ব্যানার এবং লাঠি পায় পুলিশ।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) এস এম মোবাশ্বের হোসাইন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিস্ফোরণের শব্দ শুনে আমরা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। কয়েকজন ভেতরে প্রবেশ করে দোতলা পর্যন্ত যায়। সেখানে সিলিং ফ্যান ভাঙা, টেবিল উল্টানো, আসবাবপত্র অগোছালো দেখা যায়। সেখানে আরও বিস্ফোরণের আলামত থাকতে পারে ভেবে পুলিশ দ্রুত বাইরে চলে আসে। পরে গোয়েন্দা ইউনিটের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটকে খবর দেওয়া হয়।’
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো.আব্দুর রউফ সারাবাংলাকে বলেন, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট চারতলা ভবনের প্রতিটি কক্ষে তল্লাশি চালায়। তৃতীয় তলা থেকে ৬টি লাল টেপে মোড়ানো ককটেল, বোতলভর্তি অকটেন ও পেট্রোল, ব্ল্যাক পাউডার এবং কাঁচের গুঁড়া পাওয়া গেছে।
উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ধারণা করছি আমাদের ব্লক রেড দেখে ছাত্রশিবিরের সন্ত্রাসীরা ছাদে উঠে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর তারা গোপন পথ দিয়ে পালিয়ে যায়।’
নগরীর চন্দনপুরায় আল ইসরা ভবনটিতে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রশিবির উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখার কার্যালয়। সেই ভবনে শিবির পরিচালিত কোচিং সেন্টার এবং মেসও রয়েছে। এর আগেও একাধিকবার ওই ভবনে পুলিশ অভিযান চালিয়েছিল।
এর আগে নির্বাচনকে সামনে রেখে নাশকতার পরিকল্পনা করার অভিযোগে লোহাগাড়া উপজেলা থেকে দুই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদিন (শনিবার) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার দুই যুবক জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিতে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে কমপক্ষে ১০টি করে মামলা রয়েছে।
গ্রেফতার দু’জন হলেন, লোহাগাড়া উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের আতিয়ারপাড়া গ্রামের মো. জিয়াবুল (৩০) ও মো. ইকবাল (২৮)।
জানতে চাইলে লোহাগাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী মাসুদ ইবনে আনোয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ২০১৩-১৪ সালে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় পুলিশের ওপর হামলা এবং কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়া, বোমাবাজি, সড়ক অবরোধসহ যেসব নাশকতার ঘটনা ঘটেছিল, তাতে এই দু’জনের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। এদের মধ্যে জিয়াবুল শিবিরের সাথী পর্যায়ের নেতা। ইকবাল ছাত্রশিবিরের ক্যাডার।
পুলিশ সূত্র জানায়, জিয়াবুল বর্তমানে চিটাগং বিল্ডার্স লিমিটেড নামে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের সেলস ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। ইকবাল লোহাগাড়ার খালারাবাদ জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন।
মাসুদ ইবনে আনোয়ার আরও বলেন, কয়েক বছর এলাকা থেকে পালিয়ে থাকার পর সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তারা আবার ফিরে এসেছে। বিভিন্ন জায়গায় গোপন বৈঠক করে নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে।
সারাবাংলা/আরডি/এটি