যানজটে স্থবির ঢাকা
৪ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা : সপ্তাহের প্রথম কর্ম দিবসে রাজধানী জুড়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। একদিকে সপ্তাহের প্রথম দিনের কর্মমুখী মানুষের চাপ, অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘শোকরানা মাহফিল’ এ অংশ নিতে সারাদেশ থেকে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ঢল ভোগান্তিতে ফেলেছে রাজধানীর বাসিন্দাদের।
যানজটের কবলে পড়ে রাজপথে সব ধরনের বাহনের চলছে ধীরগতিতে। কোথাও কোথাও ঘণ্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকলেও সেগুলো নড়ছে না এক চুলও। ফলে দুর্ভোগে নাকাল হচ্ছেন জরুরি কাজে বের হওয়া মানুষ।
রোববার (৪ নভেম্বর) সকালে আল হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের উদ্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয়েছে শোকরানা মাহফিল। অনুষ্ঠানটিতে অংশ নিতে শনিবার (৩ নভেম্বর) রাত থেকে দেশব্যাপী কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করেন রাজধানীতে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে শুক্রবার ট্রাফিক নির্দেশনায় বলা হয়, অনুষ্ঠানকে ঘিরে শাহবাগ ও মৎস ভবন এলাকার কয়েকটি সড়ক জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে। সেই সঙ্গে বাংলামোটর, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহাবাগ, কাঁটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী, বকশিবাজার, চাঁনখারপুল, গোলাপ শাহ মাজার, জিরো পয়েন্ট, পল্টন, কাকরাইল চার্চ, অফিসার্স ক্লাব, মিন্টো রোড ক্রসিংগুলো থেকে গাড়ি ডাইভারশন করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু সড়ক ইন্টারসেকশন ডাইভারশন হতে পারে বলেও ডিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ফলে রোববার ভোর থেকেই এসব সড়কে চলাচলকারী সকল গণপরিবহনকে পড়তে হয়েছে বিপাকে। এসব রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন অন্য রুটে চলাচল করতে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। কোথাও কোথাও যানজট তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। আর যানজটের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে সড়কের পাশের অলিগলিগুলোতেও।
সকাল থেকেই মৎসভবন থেকে মিন্টো রোড ও কাকরাইলের সড়কগুলোতে ঘন্টারপর ঘন্টা গণপরিবহনকে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সেই সঙ্গে এ যানজট বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতেও। শাহবাগ থেকে কাওরান বাজার হয়ে ফার্মগেট, বিজয় স্মরণী, মিরপুর ও সাইন্সল্যাব হয়ে নিউ মার্কেট, মোহাম্মদপুর এবং ধানমন্ডিগামী সড়ক গুলোতে যানজটের কবলে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। একই অবস্থা মহাখালী ও রামপুরা সড়কেও।
দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরও যানজট না কমায় অনেকে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন নিজেদের গন্তব্যে।
উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বিচারিক হাকিম মামলার হাজিরা দেয়ার জন্য সকাল ৭টায় সুপ্রভাত পরিবহনে উঠেছেন আহাদ মিয়া। কিন্তু সকাল সাড়ে দশটা পর্যন্ত তিনি কাকরাইল পৌঁছেন। অথচ আদালতে পৌঁছানোর কথা সকাল দশটায়। তাই আজ কাজ হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত তিনি।
সারাবাংলাকে আহাদ মিয়া বলেন, ‘তিন ঘণ্টা হাতে নিয়ে বাসে উঠেছি। কিন্তু তিন ঘন্টা তো কাকরাইল আসতেই শেষ। অথচ সেখান থেকে সর্বোচ্চ দেড় ঘন্টা লাগে আদালতে যেতে। এখন কি হয় জানি না।’
একই অবস্থা সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী রাইসা জাহানের। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাপ্তাহিক ক্লাসের একটা পরীক্ষা আছে আজ।কিন্তু রামপুরা থেকে বাস না পাওয়ায় ২ শ টাকা দিয়ে সিএনজি ভাড়া করলাম। কিন্তু সেটিও এখন পর্যন্ত মহাখালীর যানজটে বসে আছে। ১১টায় পরীক্ষা। সাড়ে দশটা বেজে গেল এখানেই। কতক্ষণে পৌঁছাবো জানি না।’
তবে ট্রাফিক বিভাগের অতিরক্ত পুলিশ কমিশনার মীর রেজাউল আলম জানিয়েছেন, যানজট যেন বেশিক্ষণ স্থায়ী না হয় সে জন্য তারা কাজ করছেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, সপ্তাহের প্রথম দিনে যানবাহনের চাপ তো এমনিতেই বেশি থাকে। সেখানে আজ যোগ হয়েছে সোহরাওয়ার্দীর সমাবেশ। তবে যানজট যেন দীর্ঘস্থায়ী না হয় সেজন্য তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন। চালক ও পরিবহন মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কেউ যেন অযথা যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং না করেন।
সারাবাংলা/এসএইচ/এসএমএন/জেডএফ
আরও পড়ুন
রোববারের শোকরানা মাহফিল নিয়ে ডিএমপি’র ট্রাফিক নির্দেশনা