Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করি না: প্রধানমন্ত্রী


৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:০৩

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের জন্য কাজ করতে গিয়ে নানা বাধা এসেছে, ষড়যন্ত্র হয়েছে। আমি সবসময় আল্লাহকে বিশ্বাস করি এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমি ভয়ও করি না।

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি বোর্ডের আয়োজনে শোকরানা সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে দেওয়া ভাষণে তিনি রোববার (৪ নভেম্বর) এ কথা বলেন।

ইসলামী মূল্যবোধ প্রচার ও প্রসারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে ভাষণের প্রথমে তিনি বলেন, ‘এখন টঙ্গিতে যে বিশ্ব ইজতেমা হয় সেটি শেখ মুজিবুর রহমান করেছিলেন। ওআইসির স্বীকৃতি লাভ তার সময়ে হয়েছিল। তিনি কওমি শিক্ষার্থীদের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’

কিন্তু জাতির জনক সেটা করতে পারেননি। ১৯৭৫ সালে আমি পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি। ১৯৭৭ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারা কওমির স্বীকৃতি দেওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। আমি অবাক হয়েছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা দ্বীন ইসলামের খেদমত করছেন, তাদের মধ্যে উপস্থিত হতে পারা একটা সৌভাগ্যের বিষয়। আমাকে যখন আল্লামা শফী সাহেব জানালেন, এই বিল পার্লামেন্টে পাস হওয়ায় তিনি সংবর্ধনার আয়োজন করবেন। আমি বললাম, সংবর্ধনা আমার জন্য না, এটা হবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা। আমরা এইটুকু যে করতে পেরেছি, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে শুকরিয়া আদায় করতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ইসলাম ধর্ম হচ্ছে শান্তির ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম ধর্ম মানুষকে শান্তির পথ দেখায়। আর সেই দ্বীন শিক্ষা যারা দেয় তারা কেন অবহেলিত থাকবে। কাজেই তাদের কখনো অবহেলিত থাততে দেওয়া যায় না।’

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতার পর জাতির পিতার নেতৃত্বে ইসলাম শিক্ষার উন্নয়নের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাবার কাছ থেকে সব সময় এটাই শিখেছি। আমার পিতা আমাদের এই শিক্ষাই দিয়েছেন, মানুষের সেবা করো। আর সাধারণভাবে জীবনযাপন করো। আমরা সেই শিক্ষাই পেয়েছি।’

পাক-ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের শিক্ষা গ্রহণ করবার একমাত্র প্রথম উপায়ই ছিল কওমি মাদ্রাসা। কওমি মাদ্রাসার মধ্য দিয়েই মুসলমানরা শিক্ষা গ্রহণ শুরু করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। পাশাপাশি কওমি মাদ্রাসা যারা সৃষ্টি করেছিলেন তারা ওই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলেন। কাজেই তাদের সব সময় আমরা সস্মান করি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

‘আমি সব সময় আল্লাহকে বিশ্বাস করি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন বাংলাদেশে ফিরে এসেছি, তখন খুনিরা ঘুরে বেড়াচ্ছে, আমি বিচার চাইতে পারি না। আমার বিচার চাওয়ার অধিকারও ছিল না। কারণ আইন করে বন্ধ করা হয়েছিল। তারপরও আমি বাংলাদেশের জনগণ এবং উপরে আল্লাহর উপর ভরসা করে আমাদের দল আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত করলে দেশের মাটিতে ফিরে আসি। আমি শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করেই চলে এসেছিলাম এবং ভেবেছিলাম, আল্লাহ তো একটা পথ করে দেবেনই। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে কষ্ট করে কোনমতে থেকেছি। আর দেশের জন্য কাজ করার চেষ্টা করেছি। কারণ আমার বাবা এই এদেশ স্বাধীন করেছেন।’

‘‘আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি, একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করবে না এবং তিনিও করতেন না। আমিও তা করি না। শুধু আল্লাহর কাছে ছাড়া কারো কাছে মাথা নত করা না। আর আল্লাহ ছাড়া কাউকে আমি ভয়ও করি না।’

‘শুধু আল্লাহর কাছে এইটুকু চাই, যেন মান-সস্মানের সাথে যেতে পারি এবং মানুষের সেবা করে যেতে পারি। মানুষের কল্যাণ করে যেতে পারি।’

বিজ্ঞাপন

‘আজকে কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি এটা শুধু স্বীকৃতি না। আমি যেটা মনে করি, আমাদের দেশের লাখ লাখ ছেলেমেয়ে এই মাদ্রাসায় শিক্ষাগ্রহণ করছে। শুধু তাই না, সব থেকে বড় কাজ আপনারা করছেন। যখন যারা এতিম হয়ে যাচ্ছে, যারা একেবারে হতদরিদ্র, যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নাই। আপনারা তাদেরকে আশ্রয় দেন। তাদেরকে খাদ্য দেন। তাদেরকে শিক্ষা দেন। অত্যন্ত তারা তো একটা আশ্রয় পায়। এতিমকে আশ্রয় দিচ্ছেন, এর থেকে বড় কাজ আর কি হতে পারে। কাজেই যেখানে আপনাদের স্বীকৃতি দেব না। এটা তো কখনো হতে পারে না। তাই আমি যখনই আমি সরকারে এসেছি, আমরা চেষ্টা করেছি।’

‘আমরা যে শিক্ষার নীতিমালা ঘোষণা করেছিম সেই নীতিমালায় ধমীয় শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। কারণ আমি মনে করি, একটা শিক্ষা তখনই পূর্ণাঙ্গ হয় যখন ধর্মীয় শিক্ষাও সেই সাথে গ্রহণ করা যায়। তখনই একটা শিক্ষা পূর্ণ হতে পারে। লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। অথচ তাদের সেই ডিগ্রীর যদি স্বীকৃতি না থাকে তবে তারা কোথায় যাবে কি করবে? কি করে তারা চলবে?’

এ লক্ষ্যে সংসদে আইন পাস করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আজকে আমরা করে দিলাম হয়ত কালকে আর কেউ ক্ষমতায় এলে সেটা আবার ওই ১৯৭৭ সালের মতো বন্ধ করে দিতে পারে। সেটা যাতে বন্ধ করতে না পারে তার জন্যই আমরা এটা করেছি। আপনারা সকলে এমনভাবে কাজ করবেন, এই মাদ্রাসা থেকে যারা শিক্ষা নেয় তারা দেশ ও জাতির জন্য যেন কাজ করতে পারেন। এই দেশকে যেন আমরা আরও উন্নত করতে পারি। বাংলাদেশে একটা মানুষও যেন গরীব না থাকে। একটা মানুষও যেন ক্ষুধার জ¦ালায় কষ্ট না পায় এবং আমরা মানুষের সেবা করে যেতে পারি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এছাড়াও ইমাম-মুয়াজ্জিনদের কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি।’ এই কল্যাণ ট্রাস্টের মধ্য দিয়ে ইমাম-মুয়াজ্জিনরা যে কোনো সময় যে কোনো কাজে ভাতা নিতে পারেন সে বিষয়টি তুলে ধরে সারাদেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদি আরব সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

‘আপনাদের কাছে দোয়া চাই দোয়া করবেন। আমরা সব সময় নবী করিম (সা.) পথ অনুসরণ করে চলি। কারণ তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, ইসলাম ধর্মের মূল কথা শান্তি, ইসলাম ধর্মের মূল কথা ভ্রাতৃত্ব সৌহার্দ্য, অসাম্প্রদায়িক চেতনা।

এই দুনিয়া আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর হুকুম ছাড়া গাছের পাতাটাও নড়ে না। আসলে যা কিছু সৃষ্টি ভালো মন্দ যা কিছুই আছে আল্লাহ করে দিয়েছেন।  নবী করিম (সা.) আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছেন, সেই শিক্ষা নিয়েই আমরা পথ চলব। আমরা কারো প্রতি বিদ্বেষ না, কারো প্রতি ঘৃণা না। কারো প্রতি কোনো খারাপ চিন্তা না। আমরা সব সময় মনে করি মানুষের কল্যাণ, মানুষের উন্নতি, মানুষের মঙ্গল। মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে, সেই চিন্তাই করি।

শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীকে আলেমরা ‘কওমি জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেন গওহরডাঙ্গা (গোপালগঞ্জ) শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান পীরে কামেল আল্লামা মুফতি রুহুল আমিন।

শোকরানা মাহফিলে সভাপতিত্ব হেফাজতে ইসলামের আমির ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা শাহ আহমদ শফী। মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসসহ আরও অনেকে।

সারাবাংলা/এনআর/একে

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর