জনগণের খেদমত করতে আপনাদের দোয়া চাই: প্রধানমন্ত্রী
৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:১১
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি ইচ্ছা করেন নিশ্চয়ই আবার তিনি বাংলাদেশের জনগণের খেদমত করবার সুযোগ দেবেন। আর যদি আল্লাহ না দেন তাও আমার কোন আপসোস থাকবে না।তাই আগামীতেও জনগণের খেদমত করার জন্য আপনাদের দোয়া চাই।
বোরববার (৪ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি বোর্ডের আয়োজনে শোকরানা মাহফিলে তিনি এই দোয়া কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম যে শান্তির ধর্ম, সেটাই আমরা প্রমাণ করতে চাই। তাই বাংলাদেশের মাটিতে কোন জঙ্গিবাদের স্থান হবে না, সন্ত্রাসের স্থান হবে না, মাদকের স্থান হবে না, দুর্নীতির স্থান হবে না। বাংলাদেশ হবে একটা শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধশালী দেশ।
সামান্য কয়েকটা লোক আমাদের ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ইসলাম ধর্মের বদনাম দেয়। আমি যখনি কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাই কেউ যদি বলে ‘ইসলামিস্ট টেরোরিস্ট’ আমি সাথে সাথে আপত্তি জানাই। কারণ সবাই টেরোরিজমে বিশ্বাস করে না। সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না এবং যারা সন্ত্রাসী, তাদের কোন ধর্ম নাই। তাদের কোন দেশ নাই। তাদের কোন সমাজ নাই। তারা হচ্ছে সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী। যারা সত্যিকার ইসলাম ধর্ম বিশ্বাস করে তারা কখনো সন্ত্রাসী জঙ্গিবাদী হতে পারে না। কাজেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের অনেক নিয়ামত দিয়েছেন। কাজেই আমরা এই দেশকে গড়ে তুলতে চাই যেন বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ।
‘আমরা জানি সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়। কাজেই এ অপপ্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না। এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য এরইমধ্যে আমরা সাইবার ক্রাইম আইন তৈরি করেছি। কেউ যদি ওই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার করে সাথে সাথে সেই আইন দ্বারা তাদের বিচার করা হবে। গ্রেফতার করা হবে।
‘আমাদের ধর্ম ইসলাম ধর্ম, আমাদের নবী করিম (স.) সম্পর্কে কেউ কোন কথা বললে আইন দ্বারাই তার বিচার হবে। আইনের দ্বারাই তাদের বিচার করে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেবো। যাতে কখনো তারা এই ধরনের অপপ্রচার চালাতে না পারে। দেশে শান্তি বিঘ্নিত হোক, আমরা চাই না। দেশে শান্তি থাকলেই উন্নতি হবে। উন্নতি থাকলে সবাই লাভবান হবে’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন আমাদের উন্নতি। ওই তৃণমূলের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত। আমরা চাই, বাংলাদেশের কোনো মানুষ ভিক্ষা করবে না। প্রত্যেক মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করব। যার কামাই করার তৌফিক নাই বা যিনি অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, বয়োঃবৃদ্ধ, তাদেরকে আমরা ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাদের বিনা পয়সায় আমরা খাদ্য সরবরাহ করছি।’
‘পিতা মাতা ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব রিক্ত। আমি এতিম। আমরা দুটি বোন আছি। আমাদের জন্য একটু দোয়া করবেন। আমাদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনীর জন্য দোয়া করবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে সুস্থভাবে থাকতে পারে। আর দোয়া করবেন বাংলাদেশের জনগণের জন্য। আমি যখনি নামাজ পড়ি, আল্লাহর কাছে শুধু এইটুকুই চাই, তিনি আমাকে যে শক্তি দিয়েছেন, আমি যেন বাংলাদেশের জনগণের খেদমত করে যেতে চাই। আর এই বাংলাদেশকে একটা সুন্দর দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। তারা যেন কোনো কষ্ট না পায়। তাদের যেন আল্লাহ সবসময় হেফাজত করেন। আল্লাহ সবসময় তাদের সহায় হন। সেই দোয়াটাই সবসময় করি।’
শোকরানা মাহফিল আয়োজনের জন্য আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে এই সনদের জন্য তারা চাকরি পাবে। দেশে-বিদেশে কাজ করতে পারে। দেশে-বিদেশে তারা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। সেই সুযোগটা আমরা কওমি মাদ্রাসার সকল ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য করে দিতে পেরেছি। তাদের জীবনটা সুন্দর হবে এবং সুন্দরভাবে তারা বাঁচতে পারবেন। আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন এবং সকলকে তিনি দোয়া করেন যেন আমরা সবাই সুন্দরভাবে বাঁচতে পারি। বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারি।’
‘সেই সাথে আপনাদের দোয়া চাই। সামনে নির্বাচন আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি ইচ্ছা করেন নিশ্চয়ই আবার তিনি বাংলাদেশের জনগণের খেদমত করবার সুযোগ আমাকে দেবেন। আর যদি আল্লাহ না চান দেবেন না। আমার কোনো আপসোস থাকবে না। কারণ আমি সবকিছু আল্লাহর উপরেই ছেড়ে দিয়েছি।’
শোকরানা মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের আমির ও চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক মাওলানা শাহ আহমদ শফী। মাহফিলে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল জয়নাল আবেদীন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসসহ আরও অনেকে।
সারাবাংলা/এনআর/একে