গায়ে র্যাবের জ্যাকেট, কোমরে পিস্তল, কাজ ছিনতাই
৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:২৯
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ‘গায়ে র্যাবের জ্যাকেট, কোমরে পিস্তল, হাতে ওয়াকিটকি। আর মাইক্রোবাসে র্যাবের স্টিকার লাগিয়ে অভিনব কায়দায় ছিনতাই করতো তারা। তাদের হাত থেকে রক্ষা পাননি কৃষক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু সদ্য অবসর নেওয়া সেনাবাহিনীর সার্জেন্টও।’
সোমবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে কাওরান বাজার র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ বিফ্রিংয়ে অপরাধী এক চক্রের বিষয়ে এসব কথা বলছিলেন র্যাবের পরিচালক (মিডিয়া) মুফতি মাহমুদ খান। গতকাল গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর কাউলা এলাকা থেকে আটক করা ওই সাত অপরাধীকে আটক করে র্যাব-১। গ্রেফতারকৃতরা র্যাব সদস্যের পরিচয় দিয়ে অপরাধ করতো।
গ্রেফতারকৃত ভুয়া র্যাব সদস্যরা হলেন- মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি এলাকার মৃত আবেদ আলী ব্যাপারীর ছেলে মো. কাসেম ওরফে জীবন (৫৮), ভোলার চরফ্যাশন এলাকার মো. আবুল বাসারের ছেলে মো. ইব্রাহীম খলিল (৪০), মাদারীপুরের শিবচর এলাকার শহীদ ব্যাপারীর ছেলে মো. জাকির হোসেন সুমন (২৭), বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ এলাকার আব্দুর রাকিবের ছেলে মো. বিল্লাল হোসেন ওরফে আসলাম (৩২), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এলাকার মৃত সাইজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল মান্নান (৫০) ও আব্দুল গফুরের ছেলে মো. আরিফ (২৮) এবং বরগুনা সদর এলাকার সিদ্দীক ভূইয়ার ছেলে সোহাগ (২৭)।
গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ম্যাগাজিন, ২ রাউন্ড গুলি, ২টি হ্যান্ডকাফ, ১টি ওয়াকিটকি সেট, ২টি র্যাব জ্যাকেট, ১টি র্যাব বোর্ড, ২টি কালো গ্লাসের র্যাব স্টীকার যুক্ত মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।
র্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ বলেন, ‘তাদের কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। সেসব গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে টার্গেট করে। এক্ষেত্রে তারা ব্যাংকের গ্রাহকদের টার্গেগ করে বেশি। এজন্য তাদের চক্রের এক কিংবা দুজন সদস্য ব্যাংকে অবস্থান করে। সেখানে কেউ ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করলে সে খবর বাইরে থাকা অন্য সদস্যদের জানায়। এরপর বাকি সদস্যরা র্যাব সেজে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়।’
এসময় ভুক্তভোগী ব্যক্তিকে বলা হয় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে। এরপর তাকে কাপড় দিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে হাতে হ্যান্ডক্যাপ পরিয়ে নির্জন জায়গায় নিয়ে যায় তারা। গ্রেফতারকৃতরা ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ১৩ জন আটক করে ৩০ লাখ ৭০ হাজার টাকা আদায় করেছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতদের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে আমাদের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এরকম আরও গ্রুপ রয়েছে। তাদেরকেও আটকের জন্য চেষ্টা চলছে।’
ব্রিফিংয়ে গ্রেফকারকৃতদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন ভুক্তভোগী ব্যক্তি তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন। তাদের মধ্যে সদ্য অবসর নেওয়া সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট রফিক বলেন, ‘আমি ২৮ তারিখে কুমিল্লার একটি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আরেক ব্যাংকে নিয়ে যাচ্ছিলাম। এসময় রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ তারা এসে র্যাব পরিচয় দিয়ে আমাকে জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপর আমাকে অনেক মারধর করে সঙ্গে থাকা টাকাগুলো নিয়ে ভোররাতে রূপগঞ্জে ফেলে রেখে চলে যায়।’
এভাবে নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানান কেরানীগঞ্জ ও লক্ষীপুরের রামগঞ্জের ভুক্তভোগীরাও।
সারাবাংলা/এসএইচ/এমও