দুদক থেকে বেরিয়ে মিন্টু বললেন ‘আমি নির্দোষ’
৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:৩৮
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আনা বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ব্যবসায়ী নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু।
তিনি বলেন, ‘কেন আমি বিদেশে অর্থ পাচার করব? এর কি কোনো যুক্তি আছে? কার জন্য আমি অর্থ পাচার করব? বিদেশে তো আমার কেউ নেই। আমার যা আছে সব বাংলাদেশে আছে।’
সোমবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে দুদক কার্যালয়ে থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে, তাকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা।
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তাকে বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। কথা বলার এক ফাঁকে নিজের হাসিখুশির বিষয়টিও সাংবাদিকদের স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
গত ৩১ অক্টোবর উপ-পরিচালক সামছুল আলমের এক তলবি নোটিশে ৫ নভেম্বর মিন্টুকে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির থাকতে বলা হয়। সকাল সাড়ে নয়টায় তিনি দুদক কার্যালয়ে আসলে ১০ টা থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। জিজ্ঞাসাবাদ চলে সাড়ে চারটা পর্যন্ত।
অর্থ পাচারের বিষয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আমি নিজেই বিদেশ থেকে পাচার হয়ে বাংলাদেশে এসেছি। আমি এমন বাংলাদেশি যে ১২ বছর বিদেশে পড়াশুনা করে চাকরি করে ব্যবসা করে নিজের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশে ফিরে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে, উনাদের কাছে অভিযোগ আসতেই পারে। যা সত্য আমি সেই জবাবই দিয়েছি।’
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আমি রাজনীতিকে এখানে টানতে চাই না।’
নিজের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা মিন্টু বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ উঠেছে, একটা হলো ব্যাংক থেকে বেআইনিভাবে ঋণ নিয়েছি, সেটাতো বাংলাদেশ ব্যাংকে আছে, আমি নিয়েছি কি না? কোনো খেলাপি ঋণ আছে কি না চাইলেই ব্যাংক থেকে বের করা যাবে। উনারা (দুদক) বলতেছে, আমি সন্দেহজনক লেনদেন করেছি, সন্দেহজনক লেনদেন করে থাকলে, এটার ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট আছে। থাকলে তো ব্যাংক স্ট্যাটমেন্টেই থাকবে। আমি তো আর নগদ লেনদেন করি না, নগদ লেনদেনে ব্যবসাও করি না।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন অনেক জিনিসেরই ভিত্তি থাকে না। তারপরও জিনিসের ভিত্তি হয়। কয়েকদিন আগে অনেক মামলা হয়েছে। পুলিশ মারার মামলা, বিস্ফোরক মামলা, কেউ কেউ গায়েবি মামলা বলে। বাংলাদেশে কোনটার ভিত্তি আছে, আর কোনটার ভিত্তি নাই…এখন বাংলাদেশ সম্ভাবনার একটি দেশ, সব সম্ভবের দেশে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে বহু জিনিস ওভারকাম করে এসেছি। আমি সরকারি দলে ছিলাম, বিরোধী দলে ছিলাম, এখনও সরকার-বিরোধী কোনটাতে আমি, কে কী বলে আমি তো জানি না। এগুলো ওভারকামের বিষয়। যেটা সত্য সেটাই প্রমাণিত হবে।’
কোনটা সত্য এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি আরও বলেন, ‘সত্যটা হলো আমি হাসতেছি দেখে আপনারা বুঝলেন না! আমি যে হাসিখুশি আছি। তাতে তো আপনাদের বোঝা উচিত যে, আমি কোনটাকে এখন কোনো কিছু মনে করি না।’
অভিযোগের বিষয়ে মিন্টু বলেন, ‘ওই অভিযোগের সঙ্গে আমি অবশ্যই জড়িত না। এটা আমার জন্য নতুন কিছু না। দুদক আগেও তদন্ত করেছে। এখনো তদন্ত করছে, আমার পরিবারের সদস্যের সম্পর্কেও তদন্ত করছে, তারাও এসেছে, আমরা আসতেই থাকব। কোনো অসুবিধা নেই। যতবার ডাকে ততবার আসব। আমি দুদকে আসতে কোনো সময় চাইনি। কেন সময় চাইব? কী করছি যে আমাদের সময় চাইতে হবে?’
দুদক বলছে, প্রকৃত তথ্য গোপন করে একাধিক ভুয়া অডিট রিপোর্ট তৈরি করে ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি দফতরে জমা দিয়ে ঋণ গ্রহণ, শতশত কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ, বিভিন্ন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় সন্দেহজনক লেনদেন ও মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে অর্থ পাচার এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে