জোর করে নির্বাচন করা যাবে না, সমাবেশে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা
৬ নভেম্বর ২০১৮ ১৬:৩৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তারা বলছেন, এই সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্যই নিজেদের অধীনে নির্বাচন চায়। কিন্তু জোর করে নির্বাচন করা যাবে না। আর সরকার যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালাচ্ছে, তা তাদের পতনেরই নির্দেশক। বক্তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন- সোহরাওয়ার্দীতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে মানুষের ঢল
তাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার অধিকার আছে আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পাওয়ার। কিন্তু তাকে জামিন দেওয়া হচ্ছে না। তাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকারের কবর হবে। বিএনপিকর্মীরা গুলি খাবে, মারা যাবে, কিন্তু আপস করবে না।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সেনাবাহিনী ছাড়াও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিনা বিচারে মানুষ মারা থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধ করে চলেছে এই সরকার। উন্নয়নের কারণে সরকারের কানে পানি জমেছে, দুর্নীতির কারণে উচ্চ রক্তচাপ তৈরি হয়েছে। যার কারণে সরকারের কানে আমাদের কথা পৌঁছায় না।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দেশের প্রতিটি জায়গায় আওয়ামী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে। বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল মানুষ গণতন্ত্রের জন্য। সেই গণতন্ত্রই যদি না থাকে, তাহলে রক্তের কী হবে সেটা আওয়ামী লীগকে ভাবতে হবে। আমরা সংলাপে বলেছি, জোর করে নির্বাচন করা যাবে না।
জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির নুর হোসেন কাশেমী বলেন, এই সরকারের পতন না ঘটানো পর্যন্ত ঘরে ফেরা ঠিক হবে না।
বিজেপি সভাপতি আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, সুলতান মনসুর এসেছেন, আসম আবদুর রব এসেছেন, ড. কামাল হোসেন এসেছেন, কাদের সিদ্দিকী এসেছেন। আর কে বাকী থাকল? আর কয়েকজন এলে তো আওয়ামী লীগেরই আর কেউ থাকবে না।
এর আগে, বিকেল ৩টায় সমাবেশের মঞ্চে ওঠেন গণফোরামের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। এ সময় সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি আ স ম আবদুর রব, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহীম। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে নতুন করে বিনির্মাণ করা হবে এই জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, কোনো সরকার যখন জনগণকে ভয় পায়, তখন সেই সরকার বিভিন্ন নির্যাতনের মাধ্যমে জনগনকে দমন করতে চায়। অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারও তাই করছে।
তিনি বলেন, শাসকরা যখন অত্যাচার শুরু করে তখন বুঝতে হবে বিরোধীদের বিজয় সুনিশ্চিত। যে লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে, আন্দোলনের মাধ্যমে সেই লক্ষ্য পূরণ হবে।
যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বলেন, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কেউ এ দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
আমান উল্লাহ আমান বলেন, সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে, বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকায় প্রবেশের ব্রিজগুলোতে আটকে দেওয়া হচ্ছে। এরপরও লাখ লাখ লোক সমাবেশে এসেছেন। আগামী দিনে আন্দোলন সফল করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
এর আগে, দুপুর ২টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হয় ঐক্যফ্রন্টের মহাসমাবেশ। এর আগে থেকেই এই সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের বিভিন্ন শরিক দলের নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
সারাবাংলা/ইউজে/এএইচএইচ/টিআর