Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ডেঙ্গুতে মৃত্যু: ২৩ জনের মধ্যে ৯ জনের বয়স ১০ বছরের নিচে


৭ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:২৮

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এই বছর মোট ২৩ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী এবং শিশু। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে শিশু ছিল ৯টি। তাদের বয়স ১০ বছরের নিচে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় যেকোনো রোগে আক্রান্ত হলে অসুস্থতার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না হলে শিশু মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

পরিসংখ্যান বলছে, এই বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের হার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে আগেই। এর আগে গত বছরগুলোর মধ্যে ২০০২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ সংখ্যক ৬ হাজার ২৩২ জন। কিন্তু ২০১৮’র শুরু থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৮ হাজার ৬৩৩ জন। এদের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়েছেন ৮ হাজার ৪৩৭ জন, মারা গেছেন ২৩ জনের। বাকিরা এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার সারাবাংলা’কে বলেন, এ বছরে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এবং মারা যাওয়া রোগীদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি ছিল। ডেঙ্গু হেমোরেজি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও ছিল বেশি। মোট ২৩ জনের মধ্যে ১৫ জন ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর এবং অন্য ৮ জন ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

কন্ট্রোল রুম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রথম শিশুটি মারা যায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে। ১ বছর ৭ মাস বয়সী আরইয়ানকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১২ জুলাই। তিনদিন পর ১৫ জুলাই তার মৃত্যু হয়। এরপর ৩ বছর ৮ মাস বয়সী প্রাপ্তী সরকার মারা যায় ঢাকা শিশু হাসপাতালে। ৯ বছর বয়সী তাহমিদ শিশু হাসপাতালে, ২ বছরের শ্রেষ্ঠা ঘোষ ইউনাইটেড হাসপাতালে, ৫ বছরের আমিনা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ৫ বছর ৩ মাস বয়সী আরাফাত ইসলাম স্কয়ার হাসপাতালে, ২ বছরের সাফায়েত  স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে, তিন বছর ১ মাস বয়সী সুমাইয়া এবং ১ বছর ৫ মাস বয়সী হাফিজের স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যু হয়। এদের বেশিরভাগই ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে আক্রান্ত ছিল।

বিজ্ঞাপন

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরের ধরন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, এই বছর ধরনও বদলেছে। যাতে করে অনেক সময় চিকিৎসকরাও হিমশিম খেয়েছে। আবার রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসেছেও দেরিতে। ফলে বেড়েছে মৃত্যু ঝুঁকি।

ডেঙ্গু রোগের বিভিন্ন ধরন সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর সারাবাংলাকে বলেন, প্রথমবার ডেঙ্গু জ্বর হলে তাকে কেবল ডেঙ্গু জ্বরই বলা হয়- জ্বরের পাশাপাশি শরীরে ব্যথা হবে আবার সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তখন তাকে বলা হয়, হেমোরেজিক শক। আর জ্বরের সঙ্গে রক্তপাত হওয়া সত্ত্বেও যদি সময় মতো চিকিৎসা না দেওয়া হয় এবং প্লাটিলেট অনেক কমে যায়, তখন তাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলা হয় চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায়।

জানতে চাইলে প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী সারাবংলাকে বলেন, মানুষের বেড়ে ওঠার সময়টাই হচ্ছে শৈশব। এই সময় একটি শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরিপূর্ণতা লাভ করে না। ফলে যেকোনো সংক্রমণ-আক্রমণে শিশুরা বেশি ভোগে।

ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রেও আমরা এটাই দেখেছি। এটি তাদের অপূর্ণাঙ্গ, অপরিণত শরীরের অপ্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য হয়ে থাকে। আর শিশুরা যেহেতু ঘরে বাইরে কখনও কখনও অন্ধকারে খেলাধূলা করে- তাই মশা ওদের বেশি কামড়ায়।

ডেঙ্গুকে ক্লাসিক্যাল ফিভার এবং হেমোরেজিক ফিভার দুইটি ভাগে ভাগ করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুতে রোগী যখন শকে চলে যায় তখন তাকে বলা হয় ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম। যেমন- রক্তচাপ কমে যাওয়া, শরীরের জলীয় পদার্থ কমে যাওয়া অর্থ্যাৎ পানি স্বল্পতা, শরীর ঘেমে যাওয়া, স্পন্দন কমে যায় এবং রোগী জ্ঞান হারানোর পর্যায়ে চলে যায়। কখনও কখনও জ্ঞান হারিয়েও ফেলে। এ অবস্থাকেই আমরা শক বলি। এটি ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের একটি অবস্থা মাত্র, বলেন ডা. লেলিন চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, প্রথমবার ডেঙ্গু হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। যে কারণে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে সুস্থ হতে তুলনামূলক দীর্ঘ সময় লেগে যায়। কারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে। মৃত্যু ঝুঁকিও হতে পারে। শীত মৌসুম শুরু হলেই ডেঙ্গুর ঝুঁকি অনেক কমে আসবে।

ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, এডিস মশার ডিম তিন থকে চার বছর পর্যন্ত জীবিত থাকে। তাই একটু বৃষ্টি হলেই ডিম থেকে মশার জন্ম হয়। আর গত কয়েকদিন থেমে থেমে বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর সিজনকে আরও কয়েকদিন বাড়িয়ে দিলো। এডিস মশা নির্মূল করতে হলে কেবল জনপদের মশা নির্মূল করলে হবে না, খাল-বিল-নদী-নালা থেকেও মশা নির্মূল করতে হবে।

সারাবাংলা/এটি

ডেঙ্গুতে মৃত্যু শিশু মৃত্যু

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর