নির্বাচন পিছিয়ে দিতে গিয়ে অপশক্তিকে সুযোগ দেবেন না: কাদের
৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৭:২৭
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন নির্বাচনকে পিছিয়ে দিতে গিয়ে কোনো অপশক্তিকে ফাঁক-ফোকর দিয়ে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেবেন না। যেটা আপনাদের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতে পারে, আমাদের সবার জন্য সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। কিছু কিছু প্রস্তাব আছে এগুলো মেনে নিতে আমাদের তো আপত্তি নেই।’
বুধবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, একটা সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এমনকি বৈঠকের পর পারসোনালি তাদের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তিনি (শেখ হাসিনা) কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আপনারা আসুন, আমি একটা অবাধ এবং সুষ্ঠ ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন দেখতে চাই, এ ব্যাপারে সহযোগিতা করুন।’
তিনি বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চায় জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোটের শরিকরা চান সংসদ বহাল রেখে সংবিধানসম্মতভাবে ৯০ দিনের মধ্যে বলে জানিয়েছেন। নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণার আগেই তারা কিছু বিষয়ে নিশ্চয়তা চান বা কিছু বিষয় ঐক্যমত চান। এর মধ্যে মূল কথা হচ্ছে, তারা আসলে সংবিধানসম্মতভাবে ২৮ জানুয়ারি থেকে এদিকে যে ৯০ দিন। যেদিন সংসদ বসছে। এটা হচ্ছে সংবিধান। কিন্তু তারা চাইছেন যে, সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনে নির্বাচন করার জন্য। এছাড়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও রাজবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে কথা হয়েছে। এসব বিষয়ে আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে, এসব দাবি মেনে নিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। শিডিউল ঘোষণার পরে এগুলো নির্বাচন কমিশন করবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ব্যাপারে আমরা সম্মত। ঐক্যফ্রন্ট বা অন্যান্য প্রার্থীরা যে সুযোগ সুবিধা পাবে আওয়ামী লীগ বা মহাজোটের মনোনীত প্রার্থীরাও একই সুযোগ-সুবিধা এনজয় করবে। এর অতিরিক্ত কিছু হবে না।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেনাবাহিনীর ম্যাজেস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে তারা যে কথা বলেছেন, এটা আমাদের দেশে হয় না। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এই ধরনের নিয়ম চালু নেই। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েন থাকবে, টাস্কফোর্স হিসাবে তারা যেখানেই প্রয়োজন লোকাল সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহায়তায় তারা যেখানে চাইবে সেখানে স্টাইকিং ফোর্স হিসাবে সেনাবাহিনী নিয়োজিত থাকবে। তারা যে দাবি আজকে ৭ দফা দিয়েছেন। ৭ দফার বেশির ভাগই মেনে নিতে আমাদের নেত্রী দলনেতা শেখ হাসিনা সম্মত হয়েছেন। কিন্তু তারা আজ এমন কিছু বিষয় নিয়ে এসেছেন, এটা পরবর্তী ৯০ দিনে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটার মধ্যে আমরা…হয়ত তাদের মধ্যে অনেকেরই সদিচ্ছা আছে, কিন্তু এটা আসলে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার একটা বাহানা এবং এই পিছিয়ে দেওয়ার মধ্য দিয়ে ফাঁকফোঁকর হয়ত তুলে দেওয়া হচ্ছে। যেখান দিয়ে অপশক্তি তৃতীয় কোনো শক্তি এসে ওয়ান ইলেভেনের মতো সেই অনপ্রিভেত ও অস্বাভাবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে পারে।’
‘তারপরও আমাদের নেত্রী তার বক্তব্যে পরিষ্কার করে তাদের অনুরোধ করেছেন, আপনারা আসেন, আমি অবাধ, সুষ্ঠ, নির্বাচন করে দেখিয়ে দেবো, আমি যা বলেছি, সেটাই সত্য। আমি আমার দেশের জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক অভিসন্ধি নিয়ে কাজ করি না। জনগণ যদি আমাকে ভোট আমরা থাকবো। আপনারা জিতলে আপনারা জিতবেন, এখানে কোনো কারচুপি-জালিয়াতি হবে না। আমরা সংবিধানের বাইরে যাবো না। এটা আমরা পরিষ্কার করে বলেছি’, যোগ করেন কাদের।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখন তারা প্রস্তাব দিচ্ছেন যে সংবিধানের মধ্যে। কিন্তু বিষয়টা তো সংবিধানের বাইরে। এখানে একটা বিরাট গ্যাপ আছে। তাদের প্রস্তাবের মধ্যে। তারপরও আমার কাছে মনে হলো, যাওয়ার বেলায় তাদের অনেকটা নমনীয় মনে হয়েছে। তাদের কথাবার্তা-আচরণে।’
তাদের সাথে কি আবার আলোচনা হতে পারে এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘এরকম কোনো আলোচনার আর সুযোগ নাই। সংলাপে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। আগামীকাল আমাদের দলনেতা প্রধানমন্ত্রী আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা কয়েকদিনের সংলাপে যে বক্তব্যগুলো হয়েছে, এগুলো নিয়ে তিনি আমাদের অবস্থান, আমাদের সিদ্ধান্ত আমাদের বক্তব্য জানিয়ে দেবেন।’
খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কিনা এবিষয়ে জানতে চাইলে কাদের বলেন, ‘তারা আসলে জামিন চাইছে। বেগম জিয়ার মুক্তি তারা ওইভাবে চাননি। আর আপনারাই প্যারোল বানিয়েছেন, তারা কিন্তু প্যারোল বলেনি। আমরা বলেছি, এই মামলাটি যারা করেছে, তারা সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২০০৭ সালে এই মামলা করেছে। এটা দেখতে দেখতে ১১ বছর পার হয়েছে। এই মামলাটা আগেই নিষ্পত্তি করা যেত কিন্তু তারা এব্যাপারে আগ্রহী বা সিরিয়াস ছিলেন না। যে কারণে এই মামলার রায় দিতে প্রলম্বিত হয়েছে এবং এখন আদালত তাকে দণ্ড দিয়েছে। তারা আদালতে জামিন চাইতে পারেন। আদালত যদি তাকে জামিনে মুক্তি দেয় আমাদের কোনো আপত্তি নাই।’
সংলাপ সফল না হলে তারা তো আন্দোলনের কর্মসূচি পালন করবে এবিষয় কাদের বলেন, ‘পদযাত্রা, রোডমার্চ করতে গিয়ে আবার যদি বোমাবাজি করে বা জ্বালাও পোড়াও শুরু করে সেই পরিস্থিতিতে আমরা তো চুপ থাকতে পারি না।’
নির্বাচনকালীন সরকারে তাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি থাকবে কি না কিংবা তারা থাকতে চায় কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘এগুলো হয়নি। তারা বলছেন যে, একজন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ১০ জন উপদেষ্টা, এটা পরবর্তী ৯০ দিন। এইটা মেনে নেওয়ার কোনো কারণ নেই।’
তাহলে কি সংলাপ ব্যর্থ হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘আমি ফেইল একথা বলি নাই। সংলাপ হয়েছে, রাষ্ট্রীয় উচ্চ পর্যায়ের প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেছেন, এদেশের ইতিহাসে এই ঘটনা কঠিন। আলোচনা হয়েছে এবং আলোচনার পরিবেশটা ছিল সৌহাদ্যপূর্ণ। আলোচনার পরিবেশে কোন প্রকার আনপ্রাজেডল ঘটেনি। এটাও ইতিবাচক অগ্রগতি। আর কিছু কিছু দাবি মেনে নিতে আমাদের আপত্তি নাই সেটাও তো বলেছি। নির্বাচনের প্রক্রিয়াও এগিয়ে যাবে। এর মধ্যে প্রয়োজনে আলোচনা এগিয়ে যাবে। তবে সংলাপ শেষ।’
সারাবাংলা/এনআর/এমও