Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নাশকতা প্রতিরোধে গাড়িতে দেওয়া হচ্ছে ‘অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র’


৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৮:৩৮

।। উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে সারাদেশে সহিংসতার পর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের নাশকতা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাই নাশকতা প্রতিরোধে বাস, ট্রাক, ট্রেনসহ সব যানবাহনে অগ্নিনির্বাপনের জন্য ‘অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র (ফায়ার এক্সটিংগুইসার)’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা চিঠি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে পাঠানোর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাতে অনুমোদন দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সারাবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ওই কর্মকর্তা বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত চিঠি অনুমোদন পেয়ে তা পুলিশের কাছে এসেছে। খুব শিগগিরই ‘ফায়ার এক্সটিংগুইসার’ ক্রয় করা হবে এবং তা বিতরণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে বিআরটিসি, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও সরকারি যেসব সংস্থা গাড়ি ব্যবহার করে সেগুলোতে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে পরিবহন কোম্পানিগুলোকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোন পরিবহন কোম্পানি কতটি করে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র পাবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বেসরকারি পরিবহন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথভাবেও এসব অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দেওয়া হতে পারে। এমন হতে পারে যে, কোনো পরিবহন কোম্পানির একশটি গাড়ি চলে, সেই কোম্পানিকে সরকার দেবে ৫০টি আর নিজেরা ক্রয় করবেন ৫০টি।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ সালে সারা দেশে যে সহিংসতা হয়েছে সেটি মাথায় রেখে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের যাতে দেশে নাশকতা কেউ চালাতে না পারে সেজন্য ২০১৭ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি পরবর্তীতে সব যানবাহনে নাশকতা প্রতিরোধে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ‘ফায়ার এক্সটিংগুইসার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রথম পর্যায়ে ৫০ হাজার ‘অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র’ ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ওই কমিটি সুপারিশ করে যে, ২০১৪-১৫ সালে সারাদেশে যে ধরনের নাশকতা হয়েছে তার মূলে ছিল বাসে অগ্নিসংযোগ ও পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ। এছাড়া মোটরসাইকেলে আগুন, বসতবাড়িতে আগুন দেওয়া, ককটেল নিক্ষেপ করাসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতা চালানো হয়েছিল। সেটি মাথায় রেখে ২০১৮ সালের নির্বাচনে নাশকতাকারীরা কেমন সহিংসতা চালাতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবির কোন ভূমিকায় থাকে তা দেখার ওপর নির্ভর করবে বলে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়। শিবিরের নেতাকর্মীরা যদি মাঠে না নামে সেক্ষেত্রে বিএনপি ও ছাত্রদল একা সহিংসতা করে তেমন একটা সুবিধা করতে পারবে না বলে আলোচনায় উঠে আসে। এরপরেও কেউ নাশকতা চালালে পরিবহন খাতকেই বেছে নেবে আর তাই পরিবহনগুলোতেই অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র হিসেবে ‘ফায়ার এক্সটিংগুইসার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ ও ১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধ চলাকালে মোট ১ হাজার ৮০০ গাড়ি নষ্ট হয়েছে। এর মধ্যে পোড়ানো হয়েছে ৭৫০টি গাড়ি। এসব গাড়ির মধ্যে অনেক দামি গাড়িও ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪২ জন গাড়ি মালিককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে মোট ৪ কোটি ২০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। এ সব মালিক প্রত্যেকেই গাড়ি প্রতি ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পান।

রাজধানী ঢাকা ছাড়াও চট্টগ্রাম, সিলেট, ফরিদপুর, গাইবান্ধা, রাজশাহী, রংপুর, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার গাড়ির মালিকেরা সেই অনুদান গ্রহণ করেন। ওই সময় শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষের ৩৯টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি পেয়েছিলেন ৩২ লাখ টাকা।

এবারে নাশকতার আশঙ্কা করে আগেই সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে জেনে খুবই খুশি শ্যামলী পরিবহনের মালিক রমেশ চন্দ্র ঘোষ। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, “গাড়িতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র হিসেবে ‘ফায়ার এক্সটিংগুইসার’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুবই ইতিবাচক। এতে কেউ গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিলেও তা সহজেই নেভানো সম্ভব হবে। ফলে গাড়ি অন্তত চলার অনুপযোগী হবে না। ক্ষতি হলেও পরিমাণে অনেক কম হবে। তাছাড়া কোনো প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকবে না। নাশকতার সময় প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণহানি ও আরও তিন হাজারের মতো মানুষ দগ্ধ হওয়া পুরো জাতিকে কাঁদিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে আর এরকম দিন ফিরে না আসে।’

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, এবারে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগের মতো গতানুগতিক নাশকতা হবে না। কারণ পূর্বের নাশকতাকারীরা ৪/৫ বছর পর অনেক দক্ষ হয়েছে। তারা কৌশল পাল্টে নতুন নাশকতার ছক তৈরি করেছে। এর মধ্যে এবার সবার আগে টার্গেট হবে সাংবাদিক ও পেশাজীবীরা। পেশাজীবী ও সাংবাদিকদের গাড়িতে আগুন দেওয়ার বিষয়টি এবার খুবই প্রাধান্য পেতে পারে। বাসের পরিবর্তে এবার নিরাপদ ভ্রমণ হিসেবে পরিচিত ট্রেনে নাশকতা চালানো হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ট্রেনকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে ফায়ার সেফটির ব্যবস্থা করার জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়েকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

গোয়েন্দা সূত্রে আরও জানায়, নির্বাচন ঠেকানোর জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে মহাজোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। সেক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে থাকা জামায়াত-শিবিরের বর্তমান ভূমিকা নিয়ে সরকার একটু স্বস্তিতে থাকলেও তফসিলের পর কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তা নজর রাখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকে ভোট পর্যন্ত নাশকতাকারীরা সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে খবর রয়েছে। সেজন্য সাইবার সিকিউরিটিও বাড়ানো হয়েছে। লোকবল ও যন্ত্রপাতি উভয়ই যথেষ্ট বাড়ানো হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ যাতে কেউ চক্রান্ত করে নস্যাৎ করতে না পারে সেজন্য কাজ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সিভিল ডিফেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহাম্মেদ খান (অব.) বলেন, ‘২০১৪ ও ১৫ সালের তুলনায় ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তার মানে এই নয় যে, দেশের যেকোনো স্থানে অগ্নিসংযোগ কিংবা নাশকতা ঠেকাতে পারবে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি যদি গাড়িতে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থাকে তাহলে খুব সহজেই আগুন নেভানো সম্ভব হবে। এতে অনেকগুলি জীবন অন্তত বেঁচে যাবে। গাড়িতে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দেওয়া নিঃসন্দেহে একটি সরকারের ভালো কাজ।’

যানবাহনে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘যাত্রীরা যাতে নিরাপদে থাকে এ জন্য সবসময় আন্দোলন করে আসছি। নাশকতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানুষের মৃত্যুতে। সেই নাশকতা প্রতিরোধে যদি যানবাহনে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দেওয়া হয় তবে নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ হবে।’

বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যানবাহনে নাশকতা ঠেকানোর জন্য সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা অত্যান্ত প্রশংসার দাবি রাখে। এর ফলে নাশকতায় আর কেউ প্রাণ হারাবে না সেটি নিশ্চিত। গাড়ির কিছুটা ক্ষতি হলে হোক। গাড়িতে ফায়ার এক্সটিংগুইসার দেওয়ার পাশাপাশি সেটি চালানোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করাটা জরুরি। তা না হলে আগুন নেভানো বাদ দিয়ে সবাই পালাবে।’ আমরা ব্যক্তি পর্যায়েও এটি যানবাহনে রাখতে পারি বলেও মত প্রকাশ করেন তিনি।

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘যানবাহনে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র দেওয়া হবে তা আগেই জেনেছি। তবে বর্তমানে সেটি কি অবস্থায় আছে তা আমি ঠিক জানি না।’

সারাবাংলা/ইউজে/এমও

অগ্নি নির্বাপক নাশকতা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর