Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘গ্যাসের আগুন আমার সব শেষ করে দিল’


৮ নভেম্বর ২০১৮ ১১:২২

।। জাকিয়া আহমেদ,স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ভোর সাতটা। স্বামী টয়লেটে গেল, আমি মেয়েকে নিয়ে বিছানাতেই বসে ছিলাম। শ্বশুর-শাশুড়ি পাশের রুমে। শাশুড়ি আমার রুমে আসবে, এক পা কেবল দিয়েছে, আর স্বামী রুম থেকে বেরুবে-ঠিক এ সময়টাতে আমি কেবল একটা শব্দ শুনলাম, কেবল দেখলাম, রান্না ঘর থেকে বড় একটা আগুন। সেই আগুনে স্বামী-শাশুড়ি-শ্বশুর দগ্ধ হয়ে গেল।

‘চোখের নিমিষে শ্বশুর-শাশুড়ি আর স্বামী পুড়ে গেল। আমার সব শেষ -আমার আর কিছুই নাই, গ্যাসের আগুন আমার সব শেষ করে দিল’-বলে বিলাপ করছিলেন রিপা।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউ (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) এর দরজার পাশে টুলে বসে ডান হাতে ব্যান্ডেজ আর মুখে মাখা মলম নিয়ে রিপা যখন এসব কথা বলছিলেন তখন আইসিইউর ভেতরে তার দেড় বছরের মেয়ে আয়েশার ড্রেসিং চলছিল।

গত শুক্রবার (২ নভেম্বর) ঢাকার আশুলিয়ার জামগড়া মোল্লাবাজারের কবরস্থান রোডে অবস্থিত আব্দুল হামিদের বাসায় ঘটে এ দূর্ঘটনা। রিপা জানান, গত তিন বছর ধরে তারা এ বাসায় ভাড়া থাকেন।

এর আগেও একবার আগুন লেগে পুরো রান্নাঘর পুড়ে যায়। বাড়িওয়ালাকে বললে সে মেকানিক নিয়ে এসে গ্যাসের পাইপে গামটেপ (স্কচটেপ) লাগিয়ে দিয়ে যায়।  বলে- আর কোনও সমস্যা নাই।  কিন্তু মন মানছিল না, গত সপ্তাহেই আরেক বাসা দেখছিলাম, কিন্তু মাস শেষ না হওয়ায় যাইনি।  আর তাতেই আমার ঘর-সংসার সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল, বলতে থাকেন রিপা।

রিপা বলেন, বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছরও  হয় নাই।  আমি আমার স্বামীরে হারাইলাম, সন্তানের বয়স দেড় বছরও পুরা হয় নাই, এই বাচ্চা এতিম হবে কেন- বলে বিলাপ করতে থাকেন তিনি।  রিপার বিলাপে উপস্থিত সবার চোখ ভিজে আসে।

বিজ্ঞাপন

রিপা জানান, গত মঙ্গলবার মারা গেছেন তার স্বামী, তার আগের শনিবার সকালে মারা গেছেন শাশুড়ি আর তার আগের রাতে মারা যান তার শ্বশুর।

পরিবারের সবাইকে হারিয়ে রিপা এখন পাগলপ্রায়। আইসিইউতে কর্তব্যরত নার্স জানালেন, বা হাত এবং কোমরের নিচ থেকে ‍পুরোটা-প্রায় ৩০ শতাংশ বার্ন নিয়ে এখনও বেঁচে আছে রিপার মেয়ে দেড় বছরের মেয়ে আয়েশা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসকরা বলেন, এ বছর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ এবং গ্যাসের লিকেজ পাইপ থেকে বিস্ফোরণের ফলে দগ্ধ হয়ে আসা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।  গত নভেম্বর মাসেই এখানে ভর্তি হয়েছেন ৩০৭জন। চিকিৎসকরা বলছেন, কঠোর নজরদারি, মনিটরিং এবং সচেতনতা ছাড়া এ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া অসম্ভব।

সারাবাংলা/জেএ/এমএস/জেডএফ

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর