তফসিল ঘিরে চট্টগ্রামে নিরাপত্তা জোরদার
৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:০৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা নিয়ে হরতাল-অবরোধ এবং গাড়ি ভাঙচুরসহ নাশকতার আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিনা উসকানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলার আশঙ্কার কথাও উঠে এসেছে পুলিশের অভ্যন্তরীণ এক প্রতিবেদনে। নাশকতা ঠেকাতে বন্দরনগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে এবং মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ ও র্যাব।
বৃহস্পতিবার (৮ নভেম্বর) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে টহল-তল্লাশি জোরদার করেছে পুলিশ। আর মঙ্গলবার রাত থেকে ফেনী থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে টহল শুরু করেছে র্যাব সদস্যরা।
র্যাবের চট্টগ্রাম জোনের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি পেট্রল টিম গঠন করেছি। গত রাত থেকে আমরা টহল জোরদার করেছি। সড়ক-মহাসড়কে নাশকতা ঠেকানোকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। সেখানে আমরা কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে দেব না।’
চট্টগ্রাম নগরীতে টহল ছাড়াও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পাঠানোর জন্য র্যাবের একাধিক টিম প্রস্তুত আছে বলে সারাবাংলাকে জানিয়েছেন র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক এএসপি মাশকুর রহমান।
এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আমেনা বেগম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘কোন বাবার সামনে ছেলে পেট্রল বোমার আগুনে পুড়ে কয়লা হোক, সেটা আমরা চাই না। ২০১৩-১৪ সালের দিনগুলো আবারও ফিরে আসুক, সেটা আমরা কেউই চাই না। এই ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স। আমরা এই ধরনের পরিস্থিতি কেউ তৈরি করলে, তাদের ঠেকানোর সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছি।’
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র নির্বাচনকেন্দ্রিক নাশকতা ঠেকানোর জন্য সিএমপি আলাদা একটি নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছে। এতে চট্টগ্রাম নগরীকে ৬টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। চারটি সেক্টরে দায়িত্ব পালন করবে সিএমপির অপরাধ বিভাগের চার জোনের সদস্যরা। নগর গোয়েন্দা পুলিশকে ২টি সেক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের কোতয়ালী থানায় ৭টি পিকেট ও ৪টি মোবাইল টিম মাঠে দায়িত্ব পালন করছে। বাকলিয়া থানায় ২টি পিকেট টিম ও ৪টি মোবাইল টিম, চকবাজার থানায় ১টি পিকেট টিম ও ৪টি মোবাইল টিম এবং সদরঘাট থানায় ১টি পিকেট টিম ও ৩টি মোবাইল টিম বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করছে।
উত্তর জোনের চান্দগাঁও থানায় ৩টি পিকেট ও ৪টি মোবাইল টিম, পাঁচলাইশ থানায় ৪টি করে পিকেট ও মোবাইল টিম, খুলশী থানায় ৪টি করে মোবাইল ও পিকেট টিম এবং বায়েজিদ বোস্তামি থানায় একটি পিকেট ও ৪টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করছে।
পশ্চিম জোনের ডবলমুরিং থানায় ২টি পিকেট ও ৪টি মোবাইল টিম, হালিশহর থানায় ২টি পিকেট ও ৩টি মোবাইল টিম, পাহাড়তলী থানায় ২টি পিকেট ও ৪টি মোবাইল টিম এবং আকবর শাহ থানায় ২টি পিকেট ও ৩টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালন করতে মাঠে নেমেছে।
বন্দর জোনের বন্দর থানায় ২টি পিকেট ও ৫টি মোবাইল টিম, ইপিজেড থানায় ২টি পিকেট ও ৫টি মোবাইল টিম, পতেঙ্গা থানায় ১ টি পিকেট ও ৪টি মোবাইল এবং কর্ণফুলী থানায় ১টি পিকেট ও ৪টি মোবাইল টিম দায়িত্ব পালনে মাঠে আছে।
প্রতিটি জোন বা সেক্টরের মূল দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট জোনের উপ-কমিশনার। অতিরিক্ত উপ-কমিশনার থাকবেন তার সঙ্গে। এছাড়া প্রত্যেক জোনে একটি করে সাজোয়া যান, স্ট্যান্ডবাই একটি করে মোবাইল টিম, ২টি করে স্ট্রাইকিং টিম এবং রাতের ডিউটির জন্য চারটি করে নাইট রাউন্ড টিম গঠন করা হয়েছে।
বুধবার (৮ নভেম্বর) থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব টিমকে মাঠে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান।
সিএমপির এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘গোপন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে যে, হরতাল সমর্থকগণ বিভিন্নস্থানে গাড়ি ভাঙচুর করতে পারে। ককটেল-বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। কোন এলাকায় পিকেটিং-ভাঙচুর, জানমালের ক্ষতিসাধন, মিছিল-সমাবেশ অথবা অনভিপ্রেত কোন ঘটনা ঘটলে তার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়ী থাকবেন এবং তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে- ‘হরতাল চলাকালে সংবাদকর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতা ও নারী কর্মী এবং কোন ব্যক্তিকে অযথা হয়রানি না করাসহ কঠোর ধৈর্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হবে। হরতাল চলাকালে কোনোভাবেই মিছিল-সমাবেশ হতে দেওয়া যাবে না।’
সিএমপির নির্দেশনায় যেসব বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- বোমাবাজি, যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহন ভাঙচুর, দোকানপাট ও সরকারি-বেসরকারি অফিস ভাঙচুর, ট্রেন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি এবং বিনা উসকানিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা।
২০টি স্পর্শকাতর পয়েন্ট চিহ্নিত করেছে সিএমপি, যেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম স্টেশন (নতুন ও পুরাতন), সিআরবি এলাকা, টেলিকম এক্সচেঞ্জ/ সিআরবি, টেলিকম কক্ষ/সিআরবি, সেন্ট্রাল কন্ট্রোলরুম/সিআরবি, পাহাড়তলী লোকোসেড, পাহাড়তলী রেল কন্ট্রোলার অফিস, পাহাড়তলী কেবিন, পাহাড়তলী পাওয়ার স্টেশন, পাহাড়তলী ওয়ার্কশপ হাউজ, পাহাড়তলী লোকো ওয়ার্কশপ গেইট, সিজিএস/পাহাড়তলী মেইন গেইট, চট্টগ্রাম পোর্ট ইয়ার্ড/হালিশহর, পাহাড়তলী রেলস্টেশন, ঝাউতলা রেলস্টেশন, ষোলশহর রেলস্টেশন, ইস্পাহানী মোড় রেলক্রসিং এবং আমিন টেক্সটাইল মিল।
সিএমপির তিনজন অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে নাশকতা ঠেকানোর দায়িত্বে আছেন ৭ জন উপ-কমিশনার, ৯ জন অতিরিক্ত উপ-কমিশনার, ১০ জন সহকারী কমিশনার, ২৮ জন পরিদর্শক, ১৫৮ জন উপ-পরিদর্শক, এসএএফ’র ৩২২ জন, পিওএম’র ৪০৬ জন, এসএএফ’র ২০ জন নারী সদস্য, বন্দর পুলিশ লাইনের ৪০ জন সদস্য, পুলিশ ফাঁড়ির ১৯৯ জন সদস্য, স্পেশাল রিজার্ভ ফোর্সের ৬৪ জন, ডিবি ইউনিটের ৮০ জন, ড্রাইভার/দেহরক্ষী ৯০ জন, কন্ট্রোল রুমের ১১ জন এবং লজিস্টিক বিভাগের ১০০ জন সহ মোট ১৫৪৭ জন।
এ দিকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে যানবাহন চলাচল যে কোনভাবে স্বাভাবিক রাখাকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা পুলিশ। জেলার ১৬ থানা এবং মহাসড়কে ২ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
‘সীতাকুণ্ড এবং হাটহাজারী, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া, বাঁশখালী এলাকার সম্ভাব্য নাশকতার পয়েন্টগুলোতে আমরা গিয়েছিলাম। কোন ধরনের সহিংসতা আমরা অ্যালাউ করব না, এই ম্যাসেজ দিয়ে এসেছি।’ বলেন এসপি
সারাবাংলা/আরডি/এমএইচ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তফসিল ঘোষণা নিরাপত্তা জোরদার নির্বাচনের তফসিল