দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যা যা করেন ভারতীয়রা
৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:৩১
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
প্রত্যেক বছর শীতের মৌসুম শুরু হতেই ভারতে দেখা যায় তীব্র দূষণ। চিকিৎসকদের চেম্বারে শ্বাসকষ্ট-জনিত সমস্যায় ভোগা রোগীদের লম্বা লাইন লেগে থাকে। হাসপাতালের বেড ভর্তি হয়ে যায় ফুসফুসের সমস্যায় আক্রান্তদের দিয়ে। অনেকে বাধ্য হয়ে কাজ থেকে ছুটি নেন। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ। ভারতের দূষণ এতটাই মারাত্মক।
দূষণ লড়তে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপ তেমন কোন প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হওয়ায় ভারতীয়রা নিজ থেকেই নানা উদ্যোগ নিয়ে থাকেন। এর মধ্যে কিছু ব্যবস্থা যেমন অর্থবহুল তেমনি অকার্যকর। সেসব ব্যবস্থার কয়েকটি হল-
‘এয়ার পিউরিফায়ার’ কেনা
নিজের ঘরে কিছুটা বিশুদ্ধ বাতাস পেতে অনেকেই কিনছেন অর্থবহুল ‘এয়ার পিউরিফায়ার’ বা বাতাস বিশুদ্ধকারী যন্ত্র। গত কয়েক বছর ধরেই ঘরের ভেতরের জন্য প্রযোজ্য এ যন্ত্র কিনছেন বহু ভারতীয়। আশা করছেন, হয়তো ঘরের ভেতরের বাতাসের বিশুদ্ধতার মান কিছুটা বাড়বে।
চলতি বছরের মার্চ মাসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকার বিভিন্ন কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদিসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সুবিধার জন্য সর্বমোট ১৪০টি পিউরিফায়ার কিনেছে।
কিন্তু এই ‘পিউরিফায়ার’ কী আদতেই কাজ করে?
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ড. কারান মাদান বলেন, এয়ার পিউরিফায়ার কেবল কোন সম্পূর্ণরূপে বদ্ধ জায়গায়ই কাজ করে।
তিনি বলেন, আপনি যখন কোন কক্ষের দরজা বা জানালা খোলেন তখন তাৎক্ষণিকভাবে বাইরের বাতাস সেখানে প্রবেশ করে। সহজভাবে, বাইরে দূষণের মাত্রা বেশি থাকলে, ঘরের ভেতরেও তা বেশিই থাকবে।
মুখোশ
ভারতের অনলাইন রিটেইলারগুলোতে দূষণ থেকে বাঁচতে পড়ার জন্য পাওয়া যায় হাজার হাজার ‘ফেস মাস্ক’ বা মুখোশ। এমনকি নিকটবর্তী দোকানেও পাওয়া যায় এসব মুখোশ।
এগুলোর কোনটা কেবল কাপড়ের তৈরি। আবার কোনটায় যোগ করা আছে বিষাক্ত পদার্থ-বিরোধী অত্যাধুনিক ফিল্টারসহ। রাজধানীর হাজারো মানুষকে এসব মুখোশ পড়তে দেখা যায়।
কিন্তু এসব মুখোশ কী সূক্ষ্ম বিষাক্ত কণা থেকে সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট?
মাদান বলেন, হ্যা। মুখোশগুলোতে থাকা ফিল্টারগুলো কার্যকরী। তবে এগুলো সবসময় পরে থাকতে হয়। নাক আর মুখের চারপাশ ভালভাবে ঢেকে রাখতে হয়। আর এতে সাবলীলভাবে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে, শরীরচর্চার সময়। এছাড়া, শিশুরা যখন বাইরে খেলতে যায়, তখন তাদের এসব পড়ানো খুব মুশকিল হয়ে পড়ে।
বৈঁচি ও হলুদ
গত সপ্তাহ থেকে দিল্লির বাতাসের মান আরও কমতে শুরু করেছে। এমতাবস্থায় অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের সকালের সমাবেশ বাদ করে দিয়েছে। বাইরে খেলা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি একটি স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈঁচি ফল বিতরণ করেছে।
ভারতে প্রচলিত রয়েছে যে, বৈঁচির মধ্যে অ্যান্টি-অক্সিডান্ট রয়েছে। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও দূষণের প্রভাব কমে।
এছাড়া পুষ্টিবিদরাও হলুদ,আদা, পুদিনা পাতার মিশ্রণ বা তালের গুড় বা বিশুদ্ধ মাখন খেতে পরামর্শ দিয়েছে।
তবে ড. মাদান জানান, এগুলোর সমর্থনে কতখানি বৈজ্ঞানিক তথ্য রয়েছে সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল সর্বোপরি স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। কিন্তু তা দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কার্যকরী নয়।
অ্যালোভেরা
দূষণ কমাতে অ্যালোভেরা গাছের কার্যকারিতা বেশ পরিচিত। কিন্তু সম্প্রতি ভারতে পত্রিকা ও ওয়েবসাইটগুলো ঘরের ভেতরে রাখা যায় এমন দূষণ-বিরোধী গাছের কথা বলছে। এরকম তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে- অ্যালোভেরা, একটি বিশেষ জাতের পদ্ম, স্নেক প্ল্যান্ট, স্পাইডার প্ল্যান্ট ইত্যাদি।
কিন্তু মাদান জানান, এগুলো বায়ু দূষণে ভূমিকা রাখে এমন পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
তিনি বলেন, দূষণ রোধে কোন সহজ রাস্তা নেই। আমাদেরকে দূষণের উৎস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সারাবাংলা/ আরএ