Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নূর হোসেনের স্মৃতি ধরে রাখতে নেই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা


১০ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৫১

।। মো.শাহাদাৎ হোসেন, পিরোজপুর।।

নূর হোসেন, এক অমিত সাহসী আত্ম-উৎসর্গকারী প্রেরণাদায়ক যুবকের নাম। যার উদোম গায়ে লেখা ছিল- ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক’। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী নূর হোসেন মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বুকে-পিঠে ধারণ করেছিল গণতন্ত্র ও মুক্তির স্লোগান। ১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকার জিপিও মোড়ে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হয়েছিল ২৯ বছরের নূর হোসেনকে। সেই থেকে প্রতি বছর ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে বাঙালি। কিন্তু নূর হোসেনের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তার নিজ বাড়ি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া উপজেলার পূর্ব সাপলেজা গ্রামে আজও গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিস্তম্ভ। শহীদ নূর হোসেনের গ্রামের বাড়িতে স্মৃতি রক্ষার দাবি জানিয়েছেন তার স্বজন ও এলাকাবাসী।

বিজ্ঞাপন

১৯৮৭ সালের এ উত্তাল দিনে স্বৈর শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মী নূর হোসেন প্রতিবাদী যুবকের জীবন্ত পোস্টার হয়ে ঢাকার রাজপথে নেমে এসেছিলেন। তার উদোম বুকে পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি’ পাক লিখে হাজারো মানুষের প্রতিবাদে অংশ নেন যুবক নূর হোসেন। সেদিন স্বৈরাচারের সশস্ত্র বাহিনী জনতার প্রতিবাদ মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। প্রতিবাদী নূর হোসেনের বুকের রক্তে সেদিন ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়।

শহীদ নূর হোসেনের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সাথে কথা হয়। নূর হোসেনের বড় চাচা মৃত মোকলেসুর রহমানের দুই ছেলে নিয়ে ওই বাড়িতে আলাদা বসবাস করেন। নূর হোসেনের পৈত্রিক ভিটায় তার চাচাত ভাই স্থানীয় একটি মসজিদের ইমাম মো. রুহুল আমীন হাওলাদার বসবাস করেন।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, সে সময় নূর হোসেন ঢাকায় থাকত। তখন গ্রামে মোবাইল ছিলনা আমরা ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে গ্রামে খবর পাই সদরের টেলিফোন অফিসের মাধ্যমে যে নূর হোসেন ঢাকায় গুলিতে মারা গেছে। দুইদিন পর আমরা বিস্তারিত জানতে পারি।

তিনি বলেন, আমার ভাই গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিয়েছে। তবে, জন্মভিটায় শহীদ ভাইয়ের স্মৃতি সুরক্ষায় কোনো ব্যবস্থা হইল না। শহীদ ভাইয়ের নামে একটা এবতেদায়ী মাদরাসা করেছিলাম পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা এখন অচল হয়ে পড়ে আছে। গ্রামের কাঁচা রাস্তায় বছর দুই আগে ইট বিছানো হয়েছে। এর বাইরে আর কিছু না। মাদরাসাটা চালু করতে চাই, পাশে একটি পাঠাগার আর শহীদ ভাইয়ের একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানাই।

জানা গেছে, ঢাকায় মঠবাড়িয়াবাসী কয়েকজন তরুণ মিলে শহীদ নূর হোসেনের স্মৃতি রক্ষায় জাগো লক্ষ নূর হোসেন নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এছাড়া, নূর হোসেনের গ্রাম ঝাঁটিবুনীয়া ও পূর্ব সাপলেজা গ্রামের কতিপয় তরুণ মিলে গড়ে তোলেন নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ। সংগঠন দুটি শহীদ নূর হোসেন দিবসে স্মরণসভার আয়োজন ছাড়া কিছুই করতে পারছে না।

শহীদ নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. নূরুল আমীন রাসেল বলেন, তার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। কারণ তিনি আমাদের মঠবাড়িয়ার সূর্য সন্তান। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সুরক্ষার প্রতীক এই তরুণ। তার পৈত্রিক ভিটায় স্মৃতি সুরক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ ও একটি পাঠাগার নির্মাণের দাবি জানাই। সেই সাথে মঠবাড়িয়া সদর হতে সাপলেজা-ঝাঁটিবুনীয়া সড়কটি নূর হোসেনের নামে নামকরণের দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে সাপলেজা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিরাজ মিয়া বলেন, আমি গর্বিত যে শহীদ নূর হোসেন আমার ইউনিয়নের কৃতি সন্তান। তার পৈত্রিক ভিটায় স্মৃতি সুরক্ষা করা হলে আগামী প্রজন্ম অনুপ্রাণিত হবে।

মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আশরাফুর রহমান বলেন, শহীদ নূর হোসেন গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতীক। সে মঠবাড়িয়ার বরেণ্য সন্তান। তার জীবনদানের ইতিহাসের জন্য আমরা গর্বিত। তবে তার স্মৃতি রক্ষায় পৈত্রিক ভিটে মাটিতে কোনো কিছু গড়ে ওঠেনি। আমি মঠবাড়িয়াবাসীর পক্ষ হতে তার পৈত্রিক ভিটে মাটিতে স্মৃতি রক্ষার দাবি জানাচ্ছি।

সারাবাংলা/এমএইচ/জেএএম

শহীদ নূর হোসেন স্মৃতি পরিষদ

বিজ্ঞাপন

খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমলো
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২১:০৮

আরো

সম্পর্কিত খবর