বৈধভাবে মাছ শিকারের দাবিতে বঙ্গোপসাগরে অন্যরকম প্রতিবাদ
১০ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:১৬
।। ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
বরগুনা : বৈধ জাল ব্যবহার করে হয়রানীমুক্তভাবে ও অবাধে মাছ শিকারের দাবিতে বরগুনার পাথরঘাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের মোহনায় হয়ে গেল এক ব্যতিক্রমধর্মী মানববন্ধন। দু’শতাধিক নৌকায় দেড় হাজার জেলে এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।
শনিবার (১০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিষখালী ও পায়রা নদীর মোহনায় এ ব্যতিক্রম কর্মসূচি পালিত হয়।
মানবন্ধনে অংশ নেওয়া জেলেরা জানান, বংশ পরম্পমরায় যুগ যুগ ধরে তারা বরগুনার বলেশ্বর ও পায়রা নদ ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় মাছ শিকার কেরে আসছেন। ৫ নভেম্বর সোমবার দুপুরে পাথরঘাটার নতুন বাজার এলাকায় জেলা পুলিশের আয়োজনে মৎস্যজীবী, ট্রলার মালিক, আড়তদার সমিতির সদস্য এবং লঞ্চ মালিক প্রতিনিধির সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভা থেকে মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসন নদীতে খুঁটি গেড়ে জাল পেতে মাছ শিকারকে অবৈধ বলে ঘোষণা করে। এ ঘোষণার পরপরই মূলত কোষ্টগার্ড ও পুলিশ বিভাগ তাদের জাল ফেলতে বাঁধা সৃষ্টি করে ও জাল তুলে নিয়ে পুড়িয়ে দিতে শুরু করে।
জেলেদের দাবি, তারা খুঁটা জাল ব্যবহার করেন না, দড়ি দিয়ে ভাসমান জালে মাছ শিকার করেন। এসব জাল নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত না হলেও মৎস্য বিভাগ, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ তাদের এসব দড়ি জালও তুলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলছে। ফলে নদীতে মাছ শিকার করতে পারছেন না। এতে বেকার হয়ে পরেছেন ওই এলাকার অর্ধলক্ষাধিক জেলে।
হরিণঘাটা প্রান্তিক জেলে সমিতির সভাপতি নুরুল আলম বলেন,‘ প্রান্তিক জেলেরা সারাবছর নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। এরা মূলত বংশপরম্পরায় জেলে। এরা সবসময়ই সরকারের নিয়ম মেনে নদীতে মাছ শিকার করে আসছেন। মৎস্যজীবী ট্রলার মালিকও আরৎদতার সমিতির সাথে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সভার পর থেকেই আমাদের উপর অত্যাচারের খড়গ নেমে এসেছে। আমরা চার ইঞ্চি ফাসের জাল দড়িতে গেথে নদীতে মাছ শিকার করি। যা জেলা প্রশাসন ঘোষিত নিষিদ্ধের আওতাভুক্ত নয়। অথচ, গভীর সমুদ্রগামী ট্রলার মলিক সমিতি প্রভাবশালী লোকজন জেলা প্রশাসনের সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবহার কওে আমরা যাতে মাছ শিকার না করতে পারি সে ব্যবস্থা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে আমাদেও হয়রানী শুরু করেছে। আমরা বিষয়টিতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। তাঁরা সরেজমিন পরিদর্শনে এসে আমাদের জাল ও মাছ ধরার প্রকৃয়া যদি অবৈধ হয়, তবে আমরা মাছ শিকার বন্ধ করে দেবো।’
এ বিষয়ে কোস্টগার্ড পাথরঘাটার স্টেশন কমান্ডার সাব লেফটেন্যান্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, স্থায়ী কোনো ব্যবস্থায় মাছ শিকার অবৈধ। সে ক্ষেত্রে স্থানীয় জেলেরা যদি অস্থায়ী প্রক্রিয়ায় মাছ শিকার করে থাকে কোনো বাধা নেই, তবে খুটা হোক বা দড়ি হোক স্থায়ী কিছুতে জাল আটকে রাখা হলে আইনগতভাবে সেটাকে অবৈধ বিবেচনায় ব্যবস্থা নেয়া হয়।
তবে বরগুনার জেলা প্রশাসক মো. কবীর মাহমুদ বলেন, আমরা শুধুমাত্র খুঁটা ব্যবহার করে জাল ফেলে মাছ শিকারকে আইনগতভাবে অবৈধ ঘোষণা করেছি। এছাড়া সঠিক ইঞ্চি মাপ ও সঠিক সুতার জাল দিয়ে মাছ শিকারে আইনগত কোনো বাঁধা নেই। কোনো মহল যদি আমাদের দোহাই দিয়ে জেলেদের যদি অন্যায়ভাবে হয়রানী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সারাবাংলা/এসএমএন