দারিদ্র্য নিরসনে প্রবৃদ্ধি ভূমিকা রাখতে পারছে না: গবেষণা
১১ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:১৪
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি থাকলেও ব্যাপক আয় বৈষম্যের কারণে তা দেশের দারিদ্র্য নিরসন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুই দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলনের প্রথম দিন ‘কোয়ালিটি গ্রোথ ইন বাংলাদেশ: সাম নিউ এভিডেন্স’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়, দেশে ধনীদের আয় বেড়েছে, অন্যদিকে গরিবদের আয় কমেছে। পর্যাপ্ত সম্পদের অভাব, আবার যতটুকু সম্পদ আছে সেখান থেকে কম প্রাপ্তি, গরিবদের ব্যাংক ব্যবস্থায় কম অন্তর্ভুক্তি এবং নীতি সহায়তা ধনীদের পক্ষে কাজ করাকে দায়ি করা হয়েছে এ জন্য। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন ড. কাজী ইকবাল ও নাহিদ ফেরদৌস পাবন।
রোববার (১১ নভেম্বর) বিআইডিএসের এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব বেগম কাজল ইসলাম।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ ধনীর আয় ২০০৫ সালে ছিল ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০১০ সালে এসে সেটি কিছুটা কমে গিয়েছে দাঁড়িয়েছিল ৩৫ দশমিক ৮৫ শতাংশে। কিন্তু ২০১৬ সালে এসে আবারও বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৩৮ শতাংশে। অন্যদিকে, এর বিপরীত চিত্র দেখা যায় সর্বনিম্ন অআয়ের ১০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে। তাদের আয় ২০০৫ সালে ছিল ২ শতাংশ। সেটি ২০১০ সালেও একই ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে এসে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১ শতাংশে। এ চিত্রের মাধ্যমেই আয় বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, প্রবৃদ্ধি বাড়লেও সে তুলনায় কর্মসংস্থান হচ্ছে না। বলা চলে, কর্মসংস্থান একস্থানে স্থির রয়েছে। বাংলাদেশে পার্শ্ববর্তী অন্যান্য দেশের তুলনায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার কম। এছাড়া কর্মস্থানের হার যেটি আছে, সেটি ধরে রাখতে হলেও প্রতিবছর ১১ লাখ লোকের চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিবেদনে গত প্রায় চার দশকের প্রবৃদ্ধির হার তুলে ধরা হয়।
অন্যদিকে, ‘ক্লাস্টার্ড ভিএস ইন ক্লাস্টারড এসএমইস: প্রোডাকটিভিটি ডিফারেন্সেস অ্যান্ড মার্শালিয়ান এক্সটার্নালিটিস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের নিম্ন আয়ের দেশগুলোর মোট জিডিপির ৬০ শতাংশ আসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) থেকে। এছাড়া মোট কর্মসংস্থানের ৭০ শতাংশ আসে এই খাত থেকেই। অন্যদিকে, ২০১৩ সালের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট শিল্প প্রতিষ্ঠানের ৫০ দশমিক ৯ শতাংশই এসএমই খাতের। মোট শিল্প কর্মসংস্থানের ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে। পাশাপাশি অর্থনীতিতে যে পরিমাণ মূল্যসংযোজন হয়, তার ৪৭ শতাংশ আসে এসএমই খাত থেকে।
গবেষণাটি বলছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই খাতের অবদান বাড়ানো সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসএমই প্রাতষ্ঠানগুলোকে ক্লাস্টারভিত্তিক ভাগ করা গেলে অর্থনীতিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর অবদান বাড়বে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাংক ঋণ সুবিধা ও পুঁজির জোগান বাড়ালে এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর করা গেলে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। এ ক্ষেত্রে নীতিসহায়তার কার্যকর ভূমিকা বেশি মিলবে।
সারাবাংলা/জেজে/টিআর