বেবিচকের গণশুনানিতে ছিল না কোনো যাত্রী!
১১ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:০৩
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিমানবন্দর গুলোতে যাত্রীসেবার মান উন্নত করণের জন্য গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কিন্তু সেখানে বেবিচক, বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না কোনো যাত্রী। উপস্থিত সাংবাদিকরাই নানা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করেন। অনুষ্ঠান শেষে প্রশ্ন ওঠে এটি কি গণশুনানি ছিল নাকি সংবাদ সম্মেলন।
আজ রোববার (১১ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে বিমানবন্দরের এমটি হল রুমে এই গণশুনানির আয়োজন করে বেবিচক। বিমানবন্দরে লাগেজ চুরির বিষয়টি জোরালোভাবে গণশুনানিতে উঠে আসে। তবে চুরি আগের চেয়ে অনেকাংশে কমে গেছে বলে দাবি করেন বেবিচক চেয়ারম্যান।
সাধারণত কোনো প্রতিষ্ঠানে সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে যেসব দুর্ভোগ, অনিয়ম, হয়রানি বা দুর্নীতির কথা বলতে এবং সেখান থেকে পরিত্রাণ নিয়ে ও সেখানে সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গণশুনানির আয়োজন করে থাকে। সেবাগ্রহীতারা জানান, কী ধরণের হয়রানি বা দুর্ভোগের ভেতর দিয়ে যেতে হয় তাদের।
বিমানবন্দরে নানা সময়ে যাত্রী হয়রানি একটি অলিখিত বিষয় ধরে নিয়েই সাংবাদিকরা সেখানে উপস্থিত হন যাত্রীদের কাছ থেকে এসব বিষয় শুনতে। কিন্তু কোনো যাত্রী সেখানে উপস্থিত না থাকায় আয়োজনটি অঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে পরিণত হয়। সেখানে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল এম নাঈম হাসানের কাছে জানতে চাওয়া হয়, গণশুনানিতে কোনো যাত্রীর উপস্থিতি নেই কেন।
এর জবাবে তিনি পরবর্তী সময়ে ভালো জায়গা নির্বাচন করে গণশুনানিতে যাত্রীদের উপস্থিত করা হবে বলে জানান।
উপস্থিত সাংবাদিকরা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং, লাগেজ চুরি, রানওয়েতে ফাটল, যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা-নিরাপত্তা, বার্ড শ্যুটার, যাত্রী সেবার মান বৃদ্ধিসহ নানা অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করেন।
বিমানবন্দরর প্রবেশমুখে দুদিকে আর্চওয়ে বসিয়ে বাস থেকে নামা বা সিএনজিতে করে আসা যাত্রীদের দেহ, ব্যাগ ও লাগেজ তল্লাসি করা হয়, কিন্তু গাড়িতে করে বিমানবন্দরে যারা প্রবেশ করেন তাদের কেন তল্লাশি করা হয় না এবং এটা কি শুধু দরিদ্র মানুষের জন্য প্রযোজ্য কীনা- প্রশ্ন করলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা ধনী-দরিদ্রের বিষয় নয়। আমরা সকলকে তল্লাশি করি। অনেক সময় গাড়িতে চারজন থাকলে একজনকে নামিয়ে দেওয়া হয়, আর বিদেশ যান এমন শ্রমিকদের ৯৫ শতাংশ গাড়িতে করে বিমানবন্দরে আসেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিমানবন্দরে অনেক সময়ে সংসদ সদস্য (এমপি) ও মন্ত্রীর স্বজন, তাদের গাড়িচালকরা ভেতর পর্যন্ত ঢুকে যান, এতে নিরাপত্তাব্যবস্থায় কোনো সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে নাঈম হাসান বলেন, ‘সারা পৃথিবীর কোনো বিমানবন্দরে শত ভাগ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা সম্ভব হয় না। তবে আমরা চেষ্টা করি, আর মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের ভেতরে প্রবেশ করতে না দিলে আমাদের অনেক সময় মন্ত্রণালয়-দূতাবাস থেকে চিঠি দিয়ে বিষয়টির ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়। তারপরও এমনটি যদি হয়ে থাকে, আমরা বিষয়টি দেখবো এবং বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করছি বলেও জানান তিনি।
আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলো অতিরিক্ত চার্জ ধরার কারণে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে প্রশ্ন করলে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা চার্জ নির্ধারণ করি না, এটা সরকার থেকে করা হয়। এ কারণে আমাদের কিছু করার নেই। অতিরিক্ত চার্জের কারণে অনেক বিমান বন্ধ হয়েছে, এটি সত্য নয়। এখানে চার্জের কোনো সম্পর্ক নেই।’
বিমানবন্দরের ভেতরে নিরাপত্তাকর্মীদের পোশাক নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরে সিভিল অ্যাভিয়েশনের পক্ষ থেকে যারা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের পোশাকের বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে জানিয়ে নাঈম হাসান বলেন, পোশাকের ডিজাইনের কাজও চলছে। পোশাকের পাশাপাশি কীভাবে তাদের আরও প্রশিক্ষিত করা যায়, তার জন্য বিভিন্ন সংস্থার সাথে কথাবার্তা চলছে।’
বিমানবন্দরের ভেতরে রানওয়েতে পাখির জন্য অনেক সময় অনেক দুর্ঘটনার বিষয়ে প্রশ্ন করলে বেবিচক চেয়ারম্যান নাঈম হাসান বলেন, আমাদের বার্ডশ্যুটার রয়েছে। তারপরও মাঝে মাঝে রানওয়েতে পাখি আসে, আমরা চেষ্টা করছি, যেন কোনো পাখি না আসে।
সারাবাংলা/জেএ/এমআই