নির্বাচনমুখী সব দল: প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে স্থায়ী সাংবিধানিক কাঠামো
১২ নভেম্বর ২০১৮ ১০:০২
।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: দেশের সব রাজনৈতিক দল এখন নির্বাচনমুখী। শুরুতে তফসিল নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখালেও শেষ পর্যন্ত গতকাল রোববার (১১ নভেম্বর) নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নবগঠিত জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আলাদা করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটও জানিয়েছে, নির্বাচনে আসছে তারা। এর মধ্য দিয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব দলের অংশ নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা কেটে গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান সরকার ও সরকারপ্রধানের অধীনে স্থায়ী সাংবিধানিক ব্যবস্থা তৈরির পথও খানিকটা এগিয়ে গেল। তবে নির্বাচনকালীন সরকারের স্থায়ী রূপ নিয়ে এখনও সরকার ও বিরোধী দলকে আরও আলোচনা করতে হবে।
এদিকে, ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে আবারও উল্লেখ করেন।
আরও পড়ুন: আগামী নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী
বিশ্লেষকরা বলছেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত মনে হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনেই এই নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে রাজনৈতিক বির্তক তৈরি হয়েছিল, তা অনেকটা প্রশমিত হয়ে এসেছে।
কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় ঐক্যফ্রন্ট তাদের সাত দফা নিয়ে সরকারি দলের মনোভাব নেতিবাচক উল্লেখ করলেও প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না— নির্দিষ্ট করে এমন কথা বলেনি। বরং তারা সরকারি দলের সঙ্গে সংলাপের পরও নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনের সময় পেছানোর দাবি জানানো হয়েছে এবং সেই দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।
কমিশনকে পাঠানো ঐক্যফ্রন্টের চিঠিতে নির্বাচন একমাস পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জোট যুক্তফ্রন্টের পক্ষ থেকেও ভোট একসপ্তাহ পেছানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। আওয়ামী জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নির্বাচন পেছানোর দাবি সম্পর্কে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সব দল চাইলে নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ পরিবর্তন করতে পারে। এতে আইনের কোনো হেরফের হবে না। সবচেয়ে বড় কথা, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিয়ে যে উদ্বেগ ছিল, তা এখন আর নেই।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, সব দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে— এটা গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য ভালো। এতে করে জনগণের ভোট দেওয়ার অনিশ্চয়তা কেটে গেল।
আরও পড়ুন: ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে’ নির্বাচনে যাচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট
এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর অধীনের নির্বাচন করা বা স্থায়ী সাংবিধানিক কাঠামো তৈরি হচ্ছে কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আরও সংলাপ হতে পারে। তবে এঠা ঠিক, প্রতিবার নির্বাচনের আগে কার অধীনে নির্বাচন বা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে যে হুড়োহুড়ি-বির্তক হয়, তার অবসান হওয়া জরুরি। সেদিক থেকে চিন্তা করলে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এখন সংবিধানে যা আছে, এতে সব দল একমত হলে সেটা সংসদীয় গণতন্ত্রের খুবই ভালো। তাহলে ভবিষ্যতে এটা নিয়ে আর বির্তক হবে না। একটি কাঠামোর মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হবে। এজন্য নির্বাচনী মাঠে সব দলের সমান প্রচার-প্রচারণার সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। এই কাজটি নির্বাচনকালীন সরকারকেই করতে হবে। সব দলের আস্থা অর্জন করতে হবে।
ইতিহাসবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ অনোয়ার হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত যা দেখা যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, দেশের সব রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নেবে। বিরোধী পক্ষ থেকে বরং নির্বাচনের তারিখ পেছানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করা হয়েছে। এটা সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য মঙ্গলজনক।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে হয়তো আমরা স্থায়ী একটি সমাধান পাব এবং এটা জরুরি। প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনের আগে কোন ফর্মুলাতে নির্বাচন হবে, তা নিয়ে বির্তক হওয়া গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য ভালো নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে চলতি সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ওই সময় সরকারের ক্ষমতাও কমে আসে। অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে। এটা আমাদের এখানেও হতে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, দু’টি জোট নির্বাচন পেছানোর দাবি জানিয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের জানিয়েছেন, সব রাজনৈতিক দল চাইলে ভোট পেছানো হবে।
নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্থায়ী সাংবিধানিক কাঠামো বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সুজন সম্পাদক বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সংবিধান অনুযায়ী স্থায়ী সাংবিধানিক সমাধান করা গেলে দেশের জন্য মঙ্গল। দেশের বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এখনও একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার চায়, যা সরকারি দলের পক্ষ থেকে নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষ নিজ নিজ দাবির পক্ষে অনড় অবস্থানে থাকলেও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। অমীমাংসিত বিষয়গুলো সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করাই হবে সরকারের কাজ।
সারাবাংলা/এইচএ/টিআর
আওয়ামী লীগ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন কমিশন (ইসি) বিএনপি সংবিধান