Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

অর্থনীতিকে রাজনীতির ওপরে স্থান দিতে হবে: ড. ফরাস উদ্দিন


১২ নভেম্বর ২০১৮ ২১:০২

।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: বাংলাদেশে রাজনীতিই সবসময় অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে উল্লেখ করে অর্থনীতিকে রাজনীতির ওপরে স্থান দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতি ও অর্থনীতি দুইটি পরাশক্তি হিসেবে কাজ করে। তবে সবসময় রাজনীতিই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারকে অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

সোমবার (১২ নভেম্বর) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) দুই দিনব্যাপী গবেষণা সম্মেলন-২০১৮-এর সমাপনী দিনে সমাপনী অধিবেশনে ড. ফরাসউদ্দিন এসব কথা বলেন।

অধিবেশনের অন্য বক্তারা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার আসবে, তার জন্য বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানো, কর্মসংস্থান তৈরি, রাজস্ব আয় বাড়ানো, ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন। এসময় তারা আরও বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে। সেজন্য দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে।

রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বিআইডিএস সম্মেলনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে ‘দ্য ডেভেলপমেন্ট আউটলুক: কি মেসেজ ফর দ্য নেক্সট গর্ভনর্মেন্ট’ শীর্ষক অধিশেনে সভাপতিত্ব করেন ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারে উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম, পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) চেয়ারম্যান ড. জাহিদি সাত্তার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এম এ তসলিম, ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব গভার্নেস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (বিআইজিএম) পরিচালক ড. মোহাম্মদ তারেক ও প্রফেসর ড. স্বপন আদনান।

বিজ্ঞাপন

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক বাণিজ্য চক্র আছে। যেমন— গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তড়িঘড়ি করে অসংখ্য প্রকল্প পাস করা হচ্ছে। এগুলোর অর্থায়ন কোথায় থেকে, কিভাবে হবে— সেটি চিন্তা করা হয়নি।  অনেকের চাওয়া-পাওয়ার দিকে তাকিয়ে এসব প্রকল্প পাস করা হয়েছে। পরবর্তী সরকারকে প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন নিয়ে চিন্তায় পড়তে হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচন ঘিরে বাড়তি ব্যয়ের কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়বে। আবার বৈদেশিক লেনদেনে কিছুটা টানাপড়েন আছে। ফলে রিজার্ভ  কমে গেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে পরিসংখ্যান ব্যুরোর দুর্বলতা আছে বা তারা কারসাজি করছে। পরবর্তী সরকার বিষয়টিকে নতুন করে মূল্যায়ন করতে পারে।

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, সরকার একদিকে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, দুর্নীতি ও অন্যায়কে সুযোগ-সুবিধা দেয়, একইসঙ্গে কল্যাণমুখী ধারণাও বহন করে। দু’টি একসঙ্গে হওয়াটা প্যারাডক্স। এটি মূল্যায়ন করতে হবে। অন্যদিকে, ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি অনিয়ম দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে এবং কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে শিল্পায়ন করতে হবে। শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। প্রবৃদ্ধিকে দ্বিতীয় ধাপে নিতে হলে মেধার লালন করতে হবে।

ড. শামসুল আলম বলেন, আগামী মার্চ মাস থেকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরির কাজ শুরু হবে। সেইসঙ্গে ২০২২ সাল থেকে ২০৪১ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরির কাজও শুরু হবে। বাংলাদেশ যেন মধ্য আয়ের ফাঁদে না পড়ে, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ রয়েছে। জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলায় শত বছরের ডেল্টা প্ল্যান তৈরি হয়েছে, পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, পায়রা বন্দর তৈরি এবং মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন দ্রুত করা হচ্ছে। আগামী দিন হবে মেগা প্রকল্প প্রকল্পের দিন। তিনি বলেন বাংলাদেশের উন্নয়নে কোন যাদু নেই, আছে পরিকল্পনা, গবেষণা এবং সৃজনশীলতা।

বিজ্ঞাপন

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ অর্থনীতির মধ্য আয়ের হাইওয়েতে অবস্থান করছে। এজন্য সে অনুযায়ী জ্বালানি দিতে হবে। আগামী নতুন সরকারের জন্য স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি চ্যালেঞ্জ হিসেবে তিনি বলেন, বৈদেশিক আর্থিক বাজারে অস্থিরতা,এক্সচেঞ্জ রেটে অস্থিরতা, ফিন্যান্সিয়াল মার্কেটে বেশি সুদের হার, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের অধিক মূল্যস্ফীতি, রফতানি বহুমুখীকরণ করা, বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বৈষম্য কমানো, বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ বাস্তবায়ন, সৃজনশীলতা বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যেও উন্নয়ন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির চালেঞ্জ রয়েছে।

ড. জাহিদি সাত্তার বলেন, অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে আগামী সরকারকে বিশেষ নজর দিতে হবে। দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উচ্চ প্রযুক্তির প্রয়োগ, শ্রম শক্তিকে বিশ্বায়নের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করতে হবে।

ড. এম এ তসলিম বলেন, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। সুশাসন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এখাতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

ড. তারেক বলেন, যখন কোনো একটি দেশে দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়, তখন এটাকে ছেড়ে দেওয়া বা অবহেলা করা উচিত নয়। সরকারের উচিত সেটি নিয়ন্ত্রণ করা। আগামী ১০-১৫ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কে নিয়ে যেতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।

বিআইডিএস মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদ বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতি করতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বিনায়ক সেন বলেন, আর্থিক অনেক সূচকে নেতিবাচক অবস্থা দেখা যাচ্ছে। আগামী সরকারকে সেগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

ড. ফরাস উদ্দিন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

উর্মিলার সংসার ভেঙে যাওয়ার কারণ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০২

নতুন পরিচয়ে কুসুম সিকদার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২০:৫৭

সম্পর্কিত খবর