দক্ষিণবঙ্গের ২৯ আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ
১৩ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:১১
।। এমএকে জিলানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ভোটের ময়দানে গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গের ২৯ আসনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সামরিক সরকার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে হটানোর পর গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ও দশম— এই দুইটি বাদে সবগুলো জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে এমন চিত্রই পাওয়া যায়।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র সারাবাংলা’কে জানিয়েছে, গোপালগঞ্জসহ দক্ষিণবঙ্গের ২৯ আসন নিয়ে দলটি তেমন চিন্তিত নয়। দলটি মনে করে, এসব আসনের ভোটাররা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং এই ভোটারদের অন্যদিকে যাওয়ার কোনো আলামত এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ওই সময়ের স্বৈরশাসক এরশাদকে হঠানোর পর থেকে দেশে গণতন্ত্রের যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। এর আগে বহুবার গণতন্ত্রের যাত্রা পদে পদে হোঁচট খেয়েছে। নির্বাচন কমিশন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের আগে চার বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯০-এর পর ছয় বার জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির অধীনে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের অধীনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় একতরফাভাবে। প্রথম নির্বাচনটিতে বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এবং দ্বিতীয়টিতে বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়নি। এই দুইটি নির্বাচন বাদ দিলে বাকি চারটি নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রায় সব দলেরই অংশগ্রহণ ছিল।
১৯৯০-এর পরের ছয়টির মধ্যে ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন বাদ দিয়ে বাকি চারটি নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯ আসনের ভোটারদের মধ্যে আওয়ামী লীগ অনেক বেশি শক্তিশালী। তাই আসন্ন নির্বাচনে এই ২৯ আসন নিয়ে নির্ভার রয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম— এই চারটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবারেই ২৭ আসনে আওয়ামী লীগ একটানা চার বার জয় পায়। এছাড়া পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিবারেই দুই আসন থেকে আওয়ামী লীগ একটানা তিন বার জয়লাভ করেছিল। তাই এই ২৯ আসন নিয়ে আসন্ন ভোটে তেমন চিন্তিত নয় দলটি।
যে ২৭ আসনে আওয়ামী লীগ একটানা চার বার জয়লাভ করেছিল, সেই আসনগুলো হচ্ছে— দিনাজপুর-৫, সিরাজগঞ্জ-১, নড়াইল-২, বাগেরহাট-১, বাগেরহাট*৩, খুলনা-১, পটুয়াখালী-৩, পটুয়াখালী-৪, টাঙ্গাইল-১, জামালপুর-৩, ময়মনসিংহ-১০, কিশোরগঞ্জ-৫, গাজীপুর-১, ফরিদপুর-১, গোপালগঞ্জ-১, গোপালগঞ্জ-২, গোপালগঞ্জ-৩, মাদারীপুর-১, মাদারীপুর-২, মাদারীপুর-৩, শরীয়তপুর-২, শরীয়তপুর-৩, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভীবাজার-৪, হবিগঞ্জ-২, হবিগঞ্জ-৪ ও পার্বত্য বান্দরবান।
অন্যদিকে, নড়াইল-১ ও চট্টগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগ একটানা তিন বার জয়ী হয়েছিল। এ ছাড়া ফরিদপুর-৫ আসন থেকেও আওয়ামী লীগ পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটানা তিন বার জয় পেয়েছিল। গত ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করলে ফরিদপুর-৫ আসনটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯১’ শীর্ষক নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয়, ১৯৮৬ সালে তৃতীয়, ১৯৮৮ সালে চতুর্থ, ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ, ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম, ২০০৯ সালে নবম এবং ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
সারাবাংলা/জেআইএল/টিআর