৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন, পেছানোর সুযোগ নেই
১৩ নভেম্বর ২০১৮ ১১:৫০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন করতে আমরা সব প্রস্তুতি শেষ করেছি।’
মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
সিইসি বলেন, ৩০ তারিখ নির্বাচনের দিন নির্ধারিত হয়েছে। এরপর আর তারিখ পেছানোর সুযোগ নেই। নির্বাচনের পর ফলাফল আসবে, এরপর গেজেট করা। তিনশ’ আসনের গেজেট করার জন্য সময় দরকার। দ্বিতীয়ত হলো, টঙ্গীর ইজতেমা হবে জানুয়ারির ১১ তারিখে। এটি আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ সময় সারাদেশ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আনতে হয়। যাতে কোন সহিংসতা না ঘটে।
তিনি বলেন, ৩০ তারিখও একটি যথেষ্ট সময় নয়, আরও সময় নেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু আমরা সেটি করতে পারিনি। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ২৩ তারিখ নির্বাচনের বিষয়টি পরিকল্পনা করা হয়। যেহেতু নির্বাচনে সবদল অংশ নিয়েছে,তাতে আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু ভোটের তারিখ আর পেছানোর সুযোগ নেই।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কে এম নূরুল হুদা বলেন, আপনারা দেশী-বিদেশী সকল স্তরের পর্যবেক্ষনে রয়েছেন। এ বছর নির্বাচনের পরিবেশ হবে ভিন্ন। আমাদের দেশে কখনও নির্বাচন হয়েছে রাষ্ট্রপতি শাসিত নির্বাচন, কখনও সেনাবাহিনী, কখনও কেয়ারটেকারের অধীনে। কিন্তু অন্যান্য নির্বাচন থেকে এই নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ সংসদ থেকে, সরকার থেকে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৪ সালে এমন একটি নির্বাচন হয়। কিন্তু সেই নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি। আমরা সেজন্য আনন্দিত, যে এই নির্বাচনে সব দল অংশ নিতে যাচ্ছে। সে কারণে আপনাদের দায়িত্ব অনেক বেড়ে গেছে।
সিইসি বলেন, নির্বাচন হতে হবে সম্পূর্ণ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। ভোট একটি উৎসব। ভোটের দিন ভোটাররা আনন্দমুখর পরিবেশে ভোট দিতে যাবে। সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথ পালন করবে। ভোটের বুথ ছাড়া বাকি সব স্থানে পর্যবেক্ষকসহ সবাই যেতে পারবেন, এবং তা পর্যবেক্ষণ করতে পারেবন। যে নির্বাচন জনগণ গ্রহন করবেন, যে নির্বাচন নিয়ে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে- সেটিই হবে গ্রহনযোগ্য নির্বাচন। এই অবস্থা আপনাদের (রিটার্নিং কর্মকর্তা) সৃষ্টি করতে হবে। এখন থেকে নির্বাচনের সকল দায়িত্ব আপনাদের। কিভাবে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করবেন, ভোটকক্ষ তৈরী করবেন সব দায়িত্ব আপনাদের। সবাই আন্তরিকভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেন, তাহলে সামগ্রিকভাবে আমাদের উপর জনগণের সন্দেহ হবে না।
প্রার্থী এবং রাজনীতিবিদরা সম্মানিত ব্যক্তি উল্লেখ করে সিইসি বলেন, অনেকেই এমপি ছিলেন, অনেকে যারা এমপি ছিলেন না তারা এলাকায় সম্মানিত ব্যক্তি। তাদের সাথে যদি সুসম্পর্ক রাখেন, তাহলে কেউই নির্বাচনে সমস্যা সৃষ্টি করবেন না। তাদেরকে কখনো প্রতিপক্ষ হিসেবে নেবেন না। তাদের সহযোগীতা করলে তারাও আপনাদের সহযোগী, বন্ধু হিসেবে কাজ করবে। বিরোধীতা করবে না। নিরপেক্ষতা হবে একমাত্র মাপকাঠি। কেএম নূরুল হুদা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, এবার নতুন আইনে এবং ভিন্ন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে। তাই জাতি রিটানিং কর্মকর্তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। এছাড়া মন্ত্রী, এমপি ও প্রভাবশালি ব্যাক্তিদের থেকে চাপ আসলে আইনী ব্যবস্থা নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্ব পালনে কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবেন না। কমিশনের আইন ও নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করবেন। অতি উৎসাহী আচরণ বা ক্ষমতার অপব্যবহার করবেন না।
নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি চালক হয়। নির্বাচন সুষ্ঠ ও সফল করতে হলে রিটানিং কর্মকর্তারা সেই গাড়ির ফুয়েল হিসাবে কাজ করে। তাই সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য এদের জনগুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করবেন।
দলগুলোর দাবি পরিপ্রেক্ষিতে ২৩ ডিসেম্বরের পরবর্তে সোমবার ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের পুনঃতফসিল দেয় ইসি। নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ২৮ নভেম্বর, বাছাই ২ ডিসেম্বর। প্রার্থীতা প্রত্যাহার ৯ ডিসেম্বর।
নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য বিভাগীয় কমিশনার এবং অন্য জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
অনুষ্ঠানে অন্য নির্বাচন কমিশনার ও ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/জিএস/জেএএম