বাবা-ছেলে মুখোমুখি ধানের শীষ-নৌকায়
১৩ নভেম্বর ২০১৮ ২০:১৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চারদিকে বইছে নির্বাচনের বাতাস। মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু দিন থেকেই আদা-জল খেয়ে মাঠে নামতে দেখা গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, অঙ্গসংগঠন ও এর শরিক দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের। অন্যদিকে, দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতির মাঠে নিষ্ক্রিয়প্রায় বিএনপি এবং ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা আড়মোড়া ভেঙে উঠেছেন।
ভোটের মাঠে নতুন জোট ঐক্যফ্রন্ট যেন বিএনপি’র পালে মৌসুমি বাতাস হয়ে এসেছে। বিএনপির মনোনয়নপত্র বিক্রির দ্বিতীয় দিনে মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর নয়া পল্টন এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দলীয় নেতাদের নামে ব্যানার-ফেস্টুন, তাজা ধানের শীষ ও হাতি-ঘোড়া নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এবং তাদের সমর্থকদের শোডাউন সেই বার্তাই জানায়।
এদিন বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে বন্ধ হয়ে যায় যানচলাচল। বিএনপির দলীয় মনোনয়নপত্র প্রত্যাশীদের ভিড়ের ঢেউ গিয়ে লাগে মালিবাগ, শান্তিনগর, কাকরাইল, সেগুনবাগিচা পর্যন্ত।
কেবল ঢাকা নয়, সারাদেশের চিত্রেই প্রায় একই। শিল্পপতি মনিরুল ইসলাম ইউসুফ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি। চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসন থেকে ভোটে লড়তে বিএনপির মনিরুল দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার ছেলে তরুণ ব্যবসায়ী নিয়াজ মোর্শেদ এলিট নিয়েছেন একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র।
তারা জানান, ভোটের মাঠে কেউ কাউকে একচুল ছাড় দিতে নারাজ। মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) বিএনপির নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন মুক্তিযোদ্ধা দলের ১০ নেতা, যাদের একজন মনিরুল ইসলাম ইউসুফ। অন্যদিকে ৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন এলিট।
মনোনয়ন পেলে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ভোটের মাঠে মুখোমুখি হবেন বাবা মনিরুল ইসলাম ও ছেলে নিয়াজ মোর্শেদ এলিট।
সারাবাংলা’র সঙ্গে আলাপকালে মনিরুল ইসলাম ইউসুফ বলেন, ‘ভোটে বাপ-ছেলে কিংবা মা-মেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন কোনো বিষয় নয়। আমাদের নেত্রী শামা ওবায়েদের মা আওয়ামী লীগ করেন। তার (এলিট) ইলেকশন সে করবে, আমারটা আমি করব। সে আমার ছেলে বলে বিএনপি’র একটা ভোট তার দিকে যাবে না। আবার আমি তার বাবা বলে আওয়ামী লীগের একটা ভোট বিএনপিতে আসবে না। নির্বাচনের মাঠে কোনো ছাড় নয়।’
নিয়াজ মোর্শেদ এলিট সারাবাংলাকে বলেন, ‘রাজনীতিতে বাপ-ছেলে বলে কিছু নেই। যে যার আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করছে। আমার বাবার আদর্শের বাইরে গিয়েই আমি রাজনীতি করছি। আদর্শের প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়। আদর্শের সঙ্গে কোনো কমপ্রোমাইজ নয়। ভোটের মাঠে যে কৌশলই আমাকে নিতে হবে, সেটা নেব।’
চট্টগ্রামভিত্তিক অটোমোবাইল শিল্প প্রতিষ্ঠান বড়তাকিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ইউসুফ। আর এলিট একই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। পারিবারিক ব্যবসার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বন্দরে ঠিকাদারি পেশায় রয়েছেন এলিট।
মনিরুল ইসলাম ইউসুফ এক সময় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করতেন। বিএনপিতে যোগ দিয়ে গত প্রায় দুই বছর ধরে মিরসরাই উপজেলায় গণসংযোগ করছেন তিনি।
মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী— জানিয়ে মনিরুল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। দেশের জন্য আমার অবদান আছে। বিএনপি মুক্তিযোদ্ধাদের দল। বিএনপি অবশ্যই আমাকে মনোনয়ন দেবে। এলাকায় আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মনোনয়ন পেলে আমিই জিতব।’
চট্টগ্রামের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত এলিট। তার দাবি, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করতেন।
এলিট কয়েক বছর আগে চট্টগ্রামে ‘খুলশী ক্লাব’ নামে একটি অভিজাত ক্লাব এবং জুনিয়র চেম্বার নামে একটি ব্যবসায়ী সংগঠন তৈরি করে মূলত নিজের পরিচিতি গড়ে তোলেন। এরপর থেকেই বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। গত দুই বছর ধরে এলিট মিরসরাই উপজেলায় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হন, বিভিন্ন গণমাধ্যম তা ফলাও করে প্রচারও করে।
তবে গত এপ্রিলে হঠাৎ আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হওয়ার খবরে রাজনৈতিকভাবে আলোচনায় উঠে আসেন তিনি।
মনোনয়ন পেলেই জিতবেন— এমন ধারণা নিয়াজ মোর্শেদ এলিটের। তিনি যে আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী, সেখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। ১৯৭০ সাল থেকে তিনি ওই আসনে নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে এলিট সারাবাংলাকে বলেন, ‘সবাই জানেন মিরসরাইয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং আছে। এখানে একপক্ষ নমিনেশন পেলে আরেকপক্ষ কাজ না করার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আমার সঙ্গে কারও বিরোধ নেই। তাই আমি মনোনয়ন পেলে উভয়পক্ষ আমার হয়ে কাজ করবে। একজন তরুণ হিসেবে যদি আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়, আমি অবশ্যই আসনটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারব।’
সারাবাংলা/আরডি/এটি