একদিন পরেই প্রত্যাবাসন, ফিরতে চান না অনেক রোহিঙ্গা
১৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:৫৩
।। ওমর ফারুক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।
কক্সবাজার: মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে পুরোপুরি প্রস্তুত প্রত্যাবাসন ঘাট নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও টেকনাফের কেরণতলী (নয়াপাড়া)। ঘোষনা অনুযায়ী, আর মাত্র একদিন পরেই বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) এই পয়েন্ট দিয়ে প্রথম দফায় ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো হবে।
এদিকে প্রত্যাবাসনের জন্য মাত্র একদিন বাকি থাকলেও নিরাপত্তা শঙ্কায় ফিরে যেতে আগ্রহী না রোহিঙ্গারা। সেই সঙ্গে তারা বলছেন, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব, নিজের জমি ফিরে পাওয়ার বিষয়েও নিশ্চয়তা চান তারা। জানা গেছে, মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চায়- জানার পর অনেকে ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর চেষ্টাও করে।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের চুক্তি অনুযায়ী, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ও টেকনাফের কেরণতলী ঘাট দু’টি প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়ে স্থলপথে এবং কেরণতলী পয়েন্ট দিয়ে নাফ নদী হয়ে নৌপথে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো হবে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রথম দফায় ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন সদস্যকে প্রত্যাবাসন করা হবে।
প্রত্যাবাসনের জন্য নির্মিত কেরণতলী (নয়াপাড়া) প্রত্যাবাসন ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, টিনের তৈরি আধা-পাকা সারি সারি ঘর তৈরি করা হয়েছে। ওখানে বিদুৎ ও পানির লাইনের কাজও শেষ হয়েছে। ওই ঘরগুলোর পাশেই তাদের তত্ত্বাবধায়নের জন্য সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদাভাবে চারটি ঘর রয়েছে। একইরকম ব্যবস্থা করা হয়েছে ঘুমধুমেও।
তবে ফিরতে চান না শরনার্থী শিবিরের বেশিরভাগ রোহিঙ্গা। নাগরিকত্ব, নিরাপত্তা, নিজেদের জমি ফিরে পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা পেলেই তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন বলে জানান বেশ কয়েকজন। এছাড়া এই মুহূর্তে সেখানে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি, দাবি তাদের। তাই তারা বাংলাদেশেই থাকতে চান।
বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কোরবান আলী বলেন, ‘আমাদের জমি-জমা, ঘর-বাড়ি ফিরিয়ে দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে আমাদের নাগরিকত্ব। তখনই যাব নয়ত না।’
কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা লিয়াকত মিয়া সারাবাংলাকে জানান, তাদের নিজ দেশ ফিরে যেতে বাধা নেই। তবে তাদের সব ফিরিয়ে দিতে হবে।
একইভাবে বাবেয়া খাতুন নামে আরেক রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘মিয়ানমার আমার দেশ হলেও ওখানে আমি যাবনা। আমার সন্তান, গরু, মহিষ থেকে শুরু করে সব ফিরিয়ে দিলে যাব নয়ত না।’
এর আগে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে আসা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব উ মিন্ট থু জানিয়েছিন, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে। একই কথা বলেন, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক।
তবে মিয়ানমার সফরের পর সাম্প্রতি বাংলাদেশে সফর করা জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল বলছে ভিন্ন কথা। তাদের অভিমত, রাখাইনে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ এখনও তৈরি হয়নি।
তবে রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম জানান, ১৫ নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তুত। উভয় দেশের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বেচ্ছায়, সম্মতি, ভিত্তিক, নিরাপত্তা ও মর্যদার সাথে প্রত্যাবাসন হবে।
সারাবাংলা/এসএমএন