নাইকো দুর্নীতি মামলার চার্জ শুনানি ৩ জানুয়ারি
১৪ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৪১
।। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় চার্জ শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৩ জানুয়ারি। বুধবার (১৪ নভেম্বর) পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী, ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মাহমুদুল কবীর এই দিন ঠিক করেন।
এ মামলার আসামি ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের পক্ষে আংশিক চার্জ শুনানি শেষ হবার পরবর্তী শুনানির দিন খালেদা জিয়ার পক্ষে চার্জ শুনানি শুরু হবে। খালেদা জিয়া এদিন ১১ টা ৫৮ মিনিটে কারাগার থেকে এজলাসে আসেন। দুপুর ১২টার দিকে বিচার কাজ শুরু হয় এবং শেষ সোয়া ১টার দিকে।
শুরুতেই কারাগারের ভেতর আদালতের পরিবেশ ও আইনজীবীদের বসার মতো জায়গা নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মওদুদ আহমদ। মওদুদ আহমদ বলেন, এই আদালতে বিচার করার মতো কোন পরিবেশ নেই। নাইকো মামলাকে এত বড় করে দেখার কি আছে? এত টাইট সিকিউরিটি কেন?
তিনি আরও বলেন, একটা মামলা পরিচালনার করার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ প্রয়োজন। এখানে আইনজীবীরা বসতে পারছেন না।
খালেদা জিয়া শুরুতে বলেন, আমাদের মামলাগুলো এত দ্রুত বিচার হচ্ছে কেন? আদালতের ভিতরে মামলা পরিচালনা করার মত কোন পরিবেশ নেই।
খালেদা আরও বলেন, একদল নির্বাচনের নিয়ে ব্যস্ত থাকবে অন্যদল মামলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করবে। রাজনৈতিকভাবে সবাই ব্যস্ত থাকবে। সবাই কেনডিডেট না হলেও সবাই নির্বাচন নিয়ে কাজ করবে।
তাই তিনি মৌখিকভাবে মামলার বিচারকার্য পিছানোর কথা বলেন বিচারককে।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল আজ বুধবার শুনানি শেষ করতে বলেন। আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আগামী ৩ জানুয়ারি এ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
নাইকো দুর্নীতি মামলার প্রধান আসামিরা হলেন- সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন।
এই মামলায় তিনজন পলাতক। এরা- সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহা-ব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
চলতি বছরের ৫ মে এই মামলায় অভিযুক্ত আরেক আসামি সাবেক সচিব শফিউর রহমান মারা যাওয়ার ফলে বর্তমানে আসামি সংখ্যা- ১০।
গত বছরের ২০ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ মামলার ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন জানান।
কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেন।
২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান।
অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
নাইকো ছাড়াও গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা বাতিলের আবেদন জানিয়ে পৃথক রিট করেছিলেন খালেদা জিয়া। এসব রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত ও রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
কয়েক বছর ধরে স্থগিত থাকার পর মামলাগুলো সচলের উদ্যোগ নিয়ে রুল নিষ্পত্তির আবেদন জানায় দুদক। পরে গতবছর পৃথক পৃথক শুনানি শেষে মামলা তিনটি সচলের রায় দেন হাইকোর্ট।
সারাবাংলা/এআই/এনএইচ