বাদুড়েরও রয়েছে উপকারী ক্ষমতা!
১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৯:১৩
।। বিচিত্রা ডেস্ক ।।
‘নিশাচর’ শব্দটি বললেই অনেকের চোখেই ভেসে ওঠে বাদুড়ের ছবি। এই বাদুড় অবশ্য মানুষের অপছন্দের তালিকাতেই স্থান পেয়ে থাকে। ছাতার মতো পাখা, বড় বড় কান, অনেকটা শেয়ালের মতো মুখ— এমন শারীরিক গঠন নিয়ে বাদুড় কারও পছন্দের প্রাণী হয়ে উঠবে, সেটা ভাবাটাও একটু কঠিন। তাছাড়া রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ারের সঙ্গে মিলিয়ে এটি রীতিমতো কুখ্যাত প্রাণী হিসেবেই পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়ার কারণে বাদুড় তো রীতিমতো আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
এসব বিবেচনায় নিয়েও বাদুড় কিন্তু আদতে অতটা ভয়ংকর বা খারাপ কোনো প্রাণী নয়। বাদুড়কে নিয়ে যত রটনাই থাক, নানাভাবে এটি আমাদের উপকার কিন্তু কম করছে না। বিশেষ করে পরিবেশ রক্ষায় যখন সবাইকে হিমশিম খেতে হচ্ছে, তখন পরিবেশের বাদুড়ের ইতিবাচক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে এর প্রতি একটু সহানুভূতিশীল হওয়াই যায়।
জানা যায়, পৃথিবীজুড়ে ১৩শ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে। এদের সবাই-ই উড়তে পারে। আর এদের বেশিরভাগই পতঙ্গভুক। এরা পরিবেশের জন্য যেমন উপকারী, তেমনি কৃষিকাজেও এর অবদান কম নয়। ফসলের জন্য ক্ষতিকর— এমন পোকা খেয়ে প্রতিবছর বাদুড় শত শত কোটি টাকার কৃষিপণ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে। এজন্য বাড়ির আশপাশে বাদুড়ের আস্তানা থাকলে তাদের না তাড়ানোটাই শ্রেয়।
আরও পড়ুন: প্যারিসের পথে মিললো সিংহের বাচ্চা!
কিছু বাদুড় আবার গাছের পাকা ফল খেয়ে থাকে। এতেও বাদুড়কে নিয়ে বিরক্তির শেষ নেই। কিন্তু ফল খেয়ে একইসঙ্গে ওই ফলের বীজ ছড়িয়ে দেওয়ার কাজটিও বাদুড় অভ্যাসবশতই করে থাকে। এতে করে ওই গাছের বিস্তার ঘটে থাকে প্রাকৃতিকভাবেই। এর প্রভাবটাও বৈশ্বিকভাবে চিন্তা করলে নেহায়েত কম নয়। তাছাড়া বাদুড়ের বিষ্ঠা আবার ব্যবহৃত হয় প্রাকৃতিক জৈব সার হিসেবে। রাসায়নিক সারের কারণে যেখানে গোটাবিশ্বের কৃষিজমির উর্বরতা হুমকির মুখে, এই জৈব সার সেই হুমকির বিপরীতে খানিকটা সহায়ক তো বটেই।
শুধু তাই নয়, অনেক বাদুড় আছে যেগুলো ফুল থেকে রস আস্বাদন করে থাকে। আর সেটা করতে গিয়ে পাঁচশ প্রজাতির ফুলের পরাগায়ণে সাহায্য করে থাকে বাদুড়। তাহলে এই যে ফুলের সৌন্দর্য, তাতে বাদুড়ের অবদান কি অস্বীকার করা যায়!
বাদুড়ের এসব অবদানের কারণেই বেশিরভাগ মানুষ বাদুড় অপছন্দ করলেও বাদুড়ের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মানুষেরও দেখা যায়। বিভিন্ন প্রজাতির বাদুড় সংরক্ষণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে এবং নিয়ে চলেছে। যেমন— অন্টারিও পাওয়ার জেনারেশন, কোভিয়া, ডিটিই এনার্জিসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান কাজ করছে বাদুড় ও বাদুড়ের আবাসস্থল সংরক্ষণের জন্য। আরও কিছু সংগঠন রয়েছে, যেগুলো বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থল গড়তে নিচ্ছে বহুমুখী উদ্যোগ।
দেখতে কুৎসিত হলেও যে প্রাণীটি প্রকৃতির জন্য অবদান রেখে চলেছে, তার জন্য এটুকু তো করাই যায়।
সারাবাংলা/আরএ/টিআর