‘শেখ হাসিনার জন্য আইন প্রযোজ্য নয়, তাই নিশ্চুপ ইসি’
১৫ নভেম্বর ২০১৮ ১২:৫৯
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলীয় নেতাকর্মীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের আয়োজনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনও কোনো টুঁ শব্দ করছে না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, গণভবনে আওয়ামী লীগের প্রায় সাড়ে চার হাজার প্রার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের নামে দলীয় সভার আয়োজন করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। অথচ এরকম একটি রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় ও সরকারি অর্থায়নে সম্পূর্ণরূপে নিয়মবহির্ভূত দলীয় কার্যক্রমের বিষয়ে নিশ্চুপ নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আরও পড়ুন- নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি ২০ দলের
বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) সকালে চতুর্থ দিনের মতো দলের মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের মধ্যে মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রমের শুরুতে এসব কথা বলেন রিজভী।
এসময় তিনি বলেন, ‘এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) টুঁ শব্দটিও করেন না। গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক নির্বাচনি আচরণবিধির ১৪ (২) ধারার সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। ওই ধার অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে নির্বাচনি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন না,’— বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার জন্য কোনো আইনই প্রযোজ্য নয়। তার যেকোনো কথাই আইনের সমতুল্য বলে তিনি মনে করেন। গণভবনের আশপাশের রাস্তায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভিড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আক্রমণ চালায় না। শাসকগোষ্ঠীর চোখের ইঙ্গিতেই পুলিশ নড়াচড়া করে। ভোটারশূন্য করে রক্তাক্ত পথেই তারা নির্বাচন পার করতে চায়।’
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা পর অস্ত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দেশনা দেয়নি নির্বাচন কমিশন। বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হাতে প্রচুর পরিমাণ বৈধ-অবৈধ অস্ত্র দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও বৈধ অস্ত্র জমাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হলেও নির্বাচন কমিশন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে।’
কমিশন স্ববিরোধী বক্তব্য রাখছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন বিশেষ দলের পক্ষেই নির্বাচনি মাঠ সমতল করছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের তৎপরতা আইনানুগ নয়। গতকাল কমিশন বলেছে, নয়াপল্টনে শোডাউন আচরণবিধির লঙ্ঘন নয়। তাহলে তফসিল ঘোষণার পর কোন সাহসে পুলিশ বিএনপি’র উচ্ছাসমুখর উপস্থিত নেতাকর্মীদের ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েছে? কার নির্দেশে এই পৈশাচিক আক্রমণ চালানো হয়েছে?— প্রশান রাখেন রিজভী।
তিনি বলেন, একতরফা নির্বাচনের পদক্ষেপ হিসেবে গতকাল পুলিশ ও আওয়ামী ক্যাডারদের দিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সহিংসতা ও নাশকতা করা হয়েছে। প্রথমেই পুলিশ বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মিছিলে গাড়ি উঠিয়ে দিয়ে ঘটনার সূত্রপাত করে, এই গাড়ি চাপায় অন্তত ২০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়। পুলিশ কীভাবে জনগণের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেয়, সেটি নির্বাচন কমিশনের নিকট জানতে চাই।
রিজভী বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে হেলমেটধারীরা পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে। এই হেলমেটধারী কারা, তা জনগণ জানে। যারা আগুন দিয়েছে, তারা পুলিশের প্রোটেকশনে এই নাশকতার কাজ করেছে। এরা ছাত্রলীগ-যুবলীগের ঢাকা মহানগর নেতা, যার সুস্পষ্ট প্রমাণ গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।
এদিকে, চতুর্থ দিনেও নয়াপল্টন কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম কিনতে এবং জমা দিতে আসা নেতাকর্মী-সমর্থকদের ভিড় দেখা গেছে। দলীয় কার্যালয়ের সামনে পছন্দের প্রার্থী নামে স্লোগান দিচ্ছেন তারা।
আমেরিকা প্রবাসী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অখণ্ড ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিয়ার ইরাক হোসেন মনোনয়ন কিনতে এসে বিশাল শোডাউন দেন।
গতকাল মির্জা আব্বাসের এমন একটা শোডাউনের সময় পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে আজ পুলিশ ছিল নীরব।
আরও পড়ুন-
নয়াপল্টনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেওয়া ছাত্রদলকর্মী শনাক্ত
সারাবাংলা/এজেড/টিআর