চোখ হারানো ১৭ জনকে ক্ষতিপূরণ দিতেই হবে আইরিশ এন্টারপ্রাইজকে
১৫ নভেম্বর ২০১৮ ১৩:৫২
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসার পর ‘চোখ হারানো’ ১৭ জনকে ক্ষতিপূরণের রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান আইরিশ এন্টারপ্রাইজকে এই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ বিষয়ে নো অর্ডার দেন। ফলে হাইকোর্টের দেওয়া ক্ষতিপূরণের আদেশ বহাল থাকলো।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর চেম্বার বিচারপতি নুরুজ্জামানের আদালত আইরিশের করা আপিল শুনানির জন্য পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে আপিল আবেদনের পক্ষে ছিলেন শ ম রেজাউল করিম। রিটের পক্ষে ছিলেন আইজীবী অমিত দাসগুপ্ত।
চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা প্রাপ্ত‘চোখ হারানো’ ১৭ জনকে প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে গত ২১ অক্টোবর রায় দেন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদেশে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টারকে ৫ লাখ টাকা ও আইরিশ কোম্পানিকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। এর মধ্যে ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার কর্তৃপক্ষ ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিলেও ওষুধ কোম্পানিটি হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করে।
চলতি বছরের ১ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গা শহরের ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়ালকমিউনিটি হেলথ সেন্টারে চক্ষু শিবিরে চিকিৎসা প্রাপ্ত ‘চোখ হারানো’ ২০ জনকে প্রত্যেককে এক কোটি করে টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
একটি জাতীয় দৈনিকে ‘চক্ষু শিবিরে গিয়ে চোখ হারালেন ২০ জন!’ শীর্ষক প্রতিবেদন গত ২৯ মার্চ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনযুক্ত করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চুয়াডাঙ্গার ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়ালকমুনিটি হেল্থ সেন্টারে তিন দিনের চক্ষু শিবিরের দ্বিতীয় দিন ৫ মার্চ ২৪ জন নারী-পুরুষের চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের দায়িত্বে ছিলেন চিকিৎসক মোহাম্মদ শাহীন। তবে বাসায় ফিরেই ২০ জন রোগীর চোখে ইনফেকশন দেখা দেয়। এসব রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়, ৫ মার্চ অপারেশনের পর ৬ মার্চ তাদের প্রত্যেককেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। বাড়ি ফিরে ওই দিনই কারও বিকেলে, কারও সন্ধ্যায়,কারও বা রাত থেকে চোখে জ্বালা-যন্ত্রণা ও পানি ঝরতে শুরু করে। পরদিনই তারা যোগাযোগ করেন ইম্প্যাক্ট হাসপাতালে। তাদের তখন গুরুত্ব না দিয়েকোনো রকম চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে উঠলে ফের তারা ইম্প্যাক্টে যান। সেখান থেকে তখন কয়েকজন রোগীকে স্থানীয় এক চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।স্থানীয় ওই চক্ষু বিশেষজ্ঞ তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। এদের মধ্যে চারজন রোগী নিজেদের উদ্যোগে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত স্বজনদের নিয়ে ঢাকায় আসেন। পরে ইম্প্যাক্ট থেকে ১২ মার্চ একসঙ্গে ১৬ জন রোগীকে ঢাকায় নেওয়া হয়। ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ঢাকার চিকিৎসকরা জানান, ৫ মার্চের ওই অপারেশনের ফলে এদের চোখের এত ভয়াবহ ক্ষতি হয়ে যায়।
সারাবাংলা/এজেডকে/এসএমএন
আইরিশ এন্টারপ্রাইজ ইম্প্যাক্ট মাসুদুল হক মেমোরিয়াল কমিউনিটি হেলথ সেন্টার চোখ হারানো