Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বয়কট করব না, নির্বাচনে থাকব: ড. কামাল


১৭ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:১৮

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বয়কট করা হবে না- সিদ্ধান্ত জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমরা নির্বাচন বয়কট করব না। একবার বয়কট করে আমাদের যে খেসারত দিতে হয়েছে- এটা যাতে আর না হয়।

তিনি বলেন, যত রকমের ১০ নম্বরি তারা করে, আমরা ভোট দেবো। আপনারা তৈরি হোন। আমরা হাজারে হাজারে গিয়ে ভোট দেবো।

শনিবার (১৭ নভেম্বর) সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রাঙ্গণে জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত আইনজীবীদের মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন তিনি।

ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরা দ্রুত নির্বাচন চাই। অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, এটা খুবই ন্যায় সঙ্গত। দেশের একটি বিরোধী দলের প্রধান ছিলেন তিনি। যেহেতু একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এতদিন পর হতে যাচ্ছে, তাতে একটি দলের নেত্রী সরকারের প্রধান থাকবেন আর আরেক দলের নেত্রীকে সেই সেন্ট্রাল জেলে রেখে দেওয়া হবে- এই অপমান একদমই মেনে নেওয়া যায় না। উনাকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা দরকার। যাতে তিনি তার নেতাদের নিয়ে দেশের মানুষের কাছে গিয়ে নির্বাচনে ভোট চাইতে পারেন।

শুধুতো খালেদা জিয়া জেলে নন। হাজার হাজার লোককে জেলে রাখা হয়েছে। আমি প্রতিদিনই শুনছি গ্রেফতারের কথা। এভাবে বৈষম্য সৃষ্টি করলে গণতন্ত্র ফিরে আসবে না, সাংবিধানিক শাসনও থাকবে না। দেশ একটা অরাজকতার মধ্যে পড়বে। এ জন্য তাকে মুক্তি দেওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন ড. কামাল।

বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত এমপিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হয়ে এমপি পরিচয় দেওয়া ভাওতাবাজি।

বিজ্ঞাপন

নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, সকলের মতামত উপেক্ষা করে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কেন ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এই সরকারের বড় ঘাটতি হলো- দেশ ১৬ কোটি মানুষের কিন্তু এরা পাঁচজন মিলে যা মনে করেন, তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন। জাতীয় নীতির তোয়াক্কা করেন না তারা।

সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সাতজন বিচারপতি মিলে একটা রায় দিলেন কিন্তু কথা শুনতে হলো সিনহা সাহেবকে। এত লজ্জা আমি জীবনে পাইনি, যেদিন দেখেছি কোনো একজন মন্ত্রী হবে কি না জানি না- যিনি প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে বলেছিলেন ‘তোকে কে নিয়োগ দিয়েছিল‘।

‘তোকে কে নিয়োগ দিয়েছিল’ একজন প্রধান বিচারপতিকে কেউ এভাবে বলতে পারে না। তিনি যেই হোক। যিনি এসব কথা বলেছেন, তার আদালত অবমাননা এখনও হতে পারে। তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা হতে পারে। এসব বিষয় হালকাভাবে নেওয়া উচিৎ না। আজ হোক কাল হোক এসব বলে কেউ পার পাবেন না, বলেন ড. কামাল।

তিনি বলেন, ২০১৪ সালে একটা নির্বাচন হয়েছিল। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে আমাকে ডাকা হয়েছিল। কোর্ট জিজ্ঞেস করেছিল, আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন? আমি বললাম, মূল্যায়ন করলে তো দুই মিনিটেই বলা যায় যে এটা কোনো নির্বাচনই ছিল না। আরেকটা নির্বাচন করতে হবে। সরকার তো বলছে দ্রুত আরেকটা নির্বাচন করবে। সরকারের পক্ষের লোকই সেখানে বলেছে। তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য একটা সরকার করে নেওয়া হয়েছে, আমরা সকলের সঙ্গে আলোচনা করছি যেন, দ্রুত একটা নির্বাচন করা যায়। আমিও স্বাভাবিকভাবেই মনে করেছি সরকার যখন কোর্ট দাঁড়িয়ে এই কথা বলছে, তখন এটা হবে। আমি কোর্টকে বললাম আমার কিছু বলতে হবে না, তারা তো নিজেই বলছে যে, একটি পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য করেছে, তারাও এটাকে ডিফাইন করতে পারছে না, বলছে দ্রুত আরেকটা নির্বাচন দেবে। দ্রুত মানে কি পাঁচ বছর- প্রশ্ন রাখেন ড. কামাল।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, সরকার এত হালকা হয়ে গেছে যে, তারা এ রকম কথা বলে যে তার অর্থও তারা বোঝে না। যারা আজ সরকারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা দেখেন ২০১৪ সালে দাঁড়িয়ে আপনারা কী বলেছিলেন। যদি কথাগুলো মনে না থাকে তাহলে কোর্টের অর্ডার বের করে দেখেন। ১৬ কোটি মানুষের দেশ। সরকার কোনো কথা বললে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে হয়। ১৬ কোটি মানুষকে যা-তা বলে পাঁচ বছর শাসন বজায় রেখেছেন।

সংবিধানের মৌলিক কথা হচ্ছে, জনগণ ক্ষমতার মালিক। কিন্তু জনগণ যদি তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দিয়ে তাদের ক্ষমতা প্রয়োগ না করাতে পারে তাহলে স্বাধীনতার ওপরে আঘাত করা হয়। দেশ স্বাধীন থাকে না। এই দেশটাকে পরাধীন দেশ বানাতে দিতে পারি না। লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। এই স্বাধীনতার অর্থ হলো জনগণ এই ক্ষমতার মালিক।

লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করলাম। এটা খেলার কথা না। আমরা তাদের উত্তরসূরী হিসেবে এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারি না, শহীদের রক্তের সাথে আমরা বেঈমানি করতে পারি না। আমাদের জনগণকে ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, আমাদের সুশাসন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, সাংবিধানিক শাসন থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে- এটা মেনে নেওয়া যায় না।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জাতীয় আইনজীবী ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, গণফোরামের মহাসচিব সুব্রত চৌধুরী, সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বারের সদস্যরা।

সমাবেশ থেকে সাত দফা দাবি তুলে ধরেন সংগঠনের আহ্বায়ক জয়নুল আবেদীন।

সারাবাংলা/এজেডকে/এটি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর