নয়াপল্টনের ঘটনা তদন্তের চিঠি নিয়ে ইসির লুকোচুরি!
১৭ নভেম্বর ২০১৮ ২২:৫৮
।। গোলাম সামদানী, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।
ঢাকা: রাজধানীর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি পাঠানো নিয়ে লুকোচুরি করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইতোমধ্যে চারদিন অতিবাহিত হলেও ইসি থেকে পুলিশকে কোনো চিঠি পাঠানো হয়নি। সারাবাংলাকে ইসির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছেন চিঠিটি এখনো পাঠানো হয়নি। রোববার (১৮ নভেম্বর) সকালে পাঠানো হবে।
নয়াপল্টনের ঘটনা তদন্তে চারদিনেও পুলিশকে চিঠি পাঠায়নি ইসি
এদিকে ইসি থেকে নয়াপল্টনের ঘটনায় পুলিশের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি পাঠানো নিয়ে ইসি সচিব ও যুগ্ম সচিবের মধ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ শনিবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে চট্রগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সহিংস ঘটনার প্রতিবেদন চেয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।
অন্যদিকে শনিবার দুপুরে ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান সারাবাংলাকে বলেন, পল্টনের ঘটনায় পুলিশের আইজিপিকে এখনো চিঠি পাঠানো হয়নি। আগামীকাল (রোববার) সকালে চিঠি পাঠানো হবে। ঘটনার চারদিন পরেও কেন চিঠি পাঠানো হয়নি এমন প্রশ্নে ফরহাদ আহম্মদ খান সারাবাংলাকে বলেন, শুক্র, শনি এই দুদিন নির্বাচন কমিশন খোলা থাকলেও সরকারি ছুটি থাকায় চিঠি পাঠানো যায়নি। রোববার সকালে চিঠিটি পাঠানো হবে। উল্লেখ এ সংক্রান্ত চিঠি ইসির যুগ্মসচিব ফরহাদ আহম্মদ খান স্বাক্ষরে পাঠানো হয়।
এদিকে শনিবার রাত সাড়ে নয়টায় ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ-এর কাছে নয়াপল্টনের ঘটনায় পুলিশ মহাপরিদর্শককে চিঠি পাঠানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি পাঠানো হয়েছে।
ইসির যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, পুলিশ মহাপরিদর্শককে এখনো চিঠি পাঠানো হয়নি, আগামীকাল (রোববার) সকালে চিঠি পাঠানো হবে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে ইসি সচিবকে প্রশ্ন করা হলে তিনি ফোনের লাইনটি কেটে দেন।
এর আগে মনোনয়ন ফরম বিক্রিকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ ও বিএনপির নেতা-কর্মী আহত হন। এ ছাড়াও এই ঘটনায় পুলিশের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে এই ঘটনায় একাধিক মামলা করা হয়। এই মামলায় এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামি গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে রয়েছেন।
এদিকে সংঘর্ষের পর ওইদিন বিকেলে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে ইসির বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে গত ১৪ নভেম্বর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংর্ঘষের বিষয়টি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। এই ঘটনায় কমিশন দুঃখ প্রকাশ করেছে। এখন সঙ্গে বিষয়টি কেন ঘটেছে তা খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দিতে পুলিশকে চিঠি দেওয়া হবে।
ইসি সূত্র জানায়, নয়াপল্টনের ঘটনায় পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) দেওয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবারই একটি চিঠি চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে শনিবার দুপুর পর্যন্ত চিঠিটি পাঠানো হয়নি। চূড়ান্ত করা ওই চিঠিতে ‘নিরাপরাধী কাউকে যাতে হয়রানি করা না হয়, সেজন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।’ একই সঙ্গে চিঠিতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করতেও পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বিএনপি কার্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারণকরা ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণাদিসহ একটি প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে হয়রানি না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় নিরপরাধ ব্যক্তিকে কোনো মামলায় জড়িয়ে নির্বাচনি পরিবেশ যাতে নষ্ট করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনার বিষয়টিও রাখা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠির নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, ‘মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পল্টন কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানকালে লোক সমাগমে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ রাস্তায় যানচলাচল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এ নিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। উচ্ছৃঙ্খল লোকজন কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর করে এবং পুলিশের দুইটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে কর্তব্যরত পুলিশসহ অনেকে আহত হয়। এ বিষয়ে ধারণকৃত স্থিরচিত্র, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণাদিসহ একটি প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য মাননীয় নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছেন।’
সারাবাংলা/জিএস/এমআই