৩০ বছরের পুঞ্জিভুত মামলার জট নিরসনে কাজ করছি: আইনমন্ত্রী
১৮ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:৪৫
।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: বিগত ৩০ বছরের পুঞ্জিভুত ৩৪ লাখ মামলার জট নিরসনে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
রোববার (১৮ নভেম্বর) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে জেলা জজদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, গত ৩০ বছরের পুঞ্চিভুত মামলার জট নিয়ে এখন আপনারা লড়াই করছেন। প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে ৩৪ লক্ষ মামলার জটের কথা।
তিনি বলেন, এটা যখন এক লাখ, দুই লাখ ছিল, তখন যদি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হতো তাহলে হয়তো এখন ৩৪ লাখ মামলার জটের দায়ভার নিয়ে কাজ করতে হতো না।
মন্ত্রী বলেন, তার পরও বিচার প্রার্থী জনগণকে বিচার দিতে হবে একই সঙ্গে মামলার জটও কমাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমরা যে পদক্ষেপ নিয়েছি তার মধ্যে একটা হলো মামলা তাড়াতাড়ি শেষ করার ব্যবস্থা। এর পাশাপাশি দ্রুত কীভাবে মামলা শেষ করা যায় তার জন্য বিপরীত পদও খুঁজছি।
সিভিল মামলা বেগুন খেতের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, একবার লাগালে দীর্ঘ সময় ধরে ফল আসতে থাকবে। আমরা এই সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে চাই। জনগণকে বিচার দিতে হবে। বিচার দিতে যদি আমরা দেরি করি তাহলে যেটা হবে সেটা হবে বিচার বিভাগের ব্যর্থতা। আর এর ফলে স্ট্রিট জাস্টিস উইল প্রিভেন্ট (প্রাধান্য পাবে)। অনেক জায়গায় কিন্তু তাই হচ্ছে। বিচার দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে স্ট্রিট জাস্টিস হ্যাব টেইকেন ওভার। আর এই স্ট্রিট জাস্টিস যদি প্রিভেন্ট করেন তাহলে এনার্কি (নৈরাজ্য) আসতে বাধ্য।
আমরা আইনের শাসনকে কোনভাবে প্রভাবিত করতে চাই না। এ জন্য আমাদেরকে আইনের শাসনের মধ্যে থেকেই এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।
এ কারণে নিম্ন আদালতের বিচারকদের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা জেলা জজ। আপনারা জনগণকে বলবেন যে মামলাগুলো সহজে নিষ্পত্তিযোগ্য সেগুলো যেন কোর্টে না এসে বাইরে তারা সমাধান করে ফেলে। এভাবে যদি তাদের উৎসাহিত করা যায়, তাহলে মনে হয় মামলার সংখ্যা অনেক কমে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, আপনারা অবগত আছেন কিছুদিন আগে অর্থাৎ বছর দেড়েক আগে। আপনাদের (জেলা জজদের) শৃঙ্খলা বিধি নিয়ে তৎকালীন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমার বা আইনমন্ত্রণালয়ের কথা কাটাকাটি হয়েছে। কেন হয়েছিল। এটা কি আমার স্বার্থে হয়েছিল। আমি আমার ইগো স্বার্থে তার সঙ্গে ইয়ে করেছিলাম। না।
এটা হচ্ছে- উনারা যেসব কথা বলছেন। আমি বলবো উনারা না, এখানে একমাত্র একজন ভদ্রলোক তার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন (সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা)। সেখানে উনারা বলেছিলেন, নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে বেনামে একটা অভিযোগ আসলেই তাহলে তারা আপনাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে নেবেন। আপনাদেরকে একটা নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজনও উনারা রাখবেন না। আমি তখন বললাম, এটা কীভাবে সম্ভব। তাদের সম্মানের কথাটি আপনাদের মাথায় রাখা উচিত। তাদেরকে যদি আপনারা সম্মানটুকু না দেন তাহলে তারা কীভাবে কাজ করবে।
মন্ত্রী বলেন, একজন জেলা জজ যদি সব সময় এই ভয়ে থাকেন যে, কেউ একজন তার বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে অভিযোগ দেয় সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে প্রসিডিং শুরু হয়ে যায়। সবচেয়ে আপত্তিজনক কথা হচ্ছে কাউকে অবহিত করারও প্রয়োজন হবে না। এটা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। সবচেয়ে বড় কথা হলো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে তাকে প্রথমত একটা শো’কজ নোটিশ দেওয়ার ব্যব্স্থা থাকবে আপনারা সেটাও রাখবেন না।
এই সমস্যাটা যে আইনমন্ত্রণালয় থেকে তৈরি না। এটাতো পরিষ্কার। সিনহা সাহেব চলে যাওয়ার পরে এই সমস্যা নিয়ে আমি তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সব বিচারপতিদের নিয়ে বসেছি। দুদিনেই তা সমাধান হয়ে গেছে। বিষয়টি তখন সকল বিচারপতির কাছে গ্রহণযোগ্যও হয়েছে। আপনারা আমাকে ক্রেডিট দেন বা না দেন সেটা বড় কথা না। আমি আপনাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছি।
প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক বিচারপতি মুসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন- আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকসহ অনেকে।
সারাবাংলা/এজেডকে/এমআই