Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেসব গ্রাউন্ডে খালাস চাইলেন খালেদা জিয়া


১৮ নভেম্বর ২০১৮ ২০:১১

।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছর কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

আপিলে বলা হয়েছে, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টকে ‘প্রাইভেট ট্রাস্ট’ উল্লেখ করে এখানে দুদক আইন প্রয়োজ্য নয়। তাছাড়া এ ট্রাস্টের নামে হিসাব খোলার আবেদন ফরমে খালেদা জিয়ার সই থাকলেও তার পদবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে লেখা ছিল না বলেও উল্লেখ করা হয়। সব মিলিয়ে ২০ থেকে ২২টি গ্রাউন্ড দেখিয়ে এই মামলায় খালাস চান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। যদিও এর মধ্যে ১১টি গ্রাউন্ড তারা প্রকাশ করেছেন। বাকি গ্রাউন্ডগুলো মামলা পরিচালনার স্বার্থে প্রকাশ করা সম্ভব নয় বলে জানান তারা।

আরও পড়ুন- চ্যারিটেবল মামলায় খালাস চেয়ে খালেদা জিয়ার আপিল

রোববার (১৮ নভেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় দায়ের করা আপিলে এই গ্রাউন্ডগুলো তুলে ধরা হয় বলে জানিয়েছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার নওশাদ জমির।

তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে এ আপিল দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে এই মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার খালাস চাওয়া হয়েছে।’ ব্যারিস্টার নওশাদ বলেন, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট। এটা সরকারি কোনো ট্রাস্ট ছিল না। এছাড়া এ মামলায় ক্ষমতা অপব্যবহারের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটাও সত্য নয়।

যেসব গ্রাউণ্ডে খালেদা জিয়ার খালাস চাওয়া হয়েছে:

১. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট একটি প্রাইভেট ট্রাস্ট। এখানে যদি ট্রাস্টের শর্ত ভঙ্গ হয়, তাহলে ট্রাস্টের সদস্যরা মামলা করতে পারেন। এখানে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন প্রযোজ্য নয়। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া এই ট্রাস্টে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করেননি।

২. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে হিসাব খোলার আবেদন ফরমে খালেদা জিয়ার সই থাকলেও তার পদবী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ নেই। কিংবা তার প্রধানমন্ত্রী পদবীর কোনো সিলও নেই। এই ট্রাস্টের কোনো হিসাবেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার নাম উল্লেখ নেই। এই ট্রাস্ট তিনি তার ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে পরিচালিত করতেন।

৩. এই মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে উপযুক্ত কোনো তথ্যপ্রমাণ ছিল না। এই মামলায় তাকে ধারণার ওপর নির্ভর করে অভিযুক্ত করা হয়েছে ও সাজা দেওয়া হয়েছে।

৪. চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ফান্ডে অবৈধ লেনদেন প্রমাণে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হয়েছে।

৫. ডা. ফারজানা আহমেদ নামের এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই মামলায় তার সাক্ষ্য বা কোনো লিখিত বক্তব্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।

৬. দুদক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এবং পক্ষপাতমূলকভাবে এ মামলার অভিযোগের অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যা রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর বক্তব্য থেকে প্রতীয়মান হয়েছে।

৭. কারাগারের অভ্যন্তরে কারাগারের ভেতরে স্থাপিত আদালতে অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে এ মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করা এবং সাজা দেওয়া হয় উল্লেখ করে এ প্রক্রিয়াকে বেআইনি বলে মনে করছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা।

৮. জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি ব্যাক্তিগত ট্রাস্ট, যা ট্রাস্ট আইন ১৮৮২ দ্বারা পরিচালিত হবে। ফলে এর বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষমতা দুদকের নেই।

৯. মামলার ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার পে-অর্ডার সম্পর্কিত বিচারিক আদালতের অনুসন্ধানটি মামলার মূল নথির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

১০. মামলার দালিলিক প্রমাণ ও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য এটা প্রমাণ করে করে, মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপার্স লিমিটেড মামলা সংশ্লিষ্ট পাঁচটি পে-অর্ডারের আবেদন করেছিল।

১১. মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যে প্রমাণিত হয়েছে, মেট্রো মেকারস অ্যান্ড ডেভেলপার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পাঁচটি পে-অর্ডার সম্পর্কিত বক্তব্য সম্পূর্ণভাবে অসত্য।

খালেদা জিয়ার খালাস চেয়ে করা আবেদনের এই ১১টি গ্রাউন্ড গণমাধ্যমে প্রকাশ করলেও আরও বেশকিছু গ্রাউণ্ড মামলা পরিচালনার স্বার্থে প্রকাশ করতে নারাজ  ব্যারিস্টার নওশাদ জমির। তিনি বলেন, মামলাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মামলা পরিচালনার স্বার্থে অবশিষ্ট গ্রাউন্ডগুলো এখনই প্রকাশ করা সম্ভব না।

উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতরে স্থাপিত অস্থায়ী ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক ড. আখতারুজ্জামান।

পরে গত বুধবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালত থেকে ৬৩২ পৃষ্ঠার রায়ের সার্টিফায়েড কপি বুঝে নেন খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি জানান, মামলার রায়ের দিনই সার্টিফায়েড কপি চেয়ে আবেদন করা হয়েছিল।

রায়ের পর খালেদা জিয়ার প্যানেল আইনজীবী ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান জানিয়েছিলেন, বিচারিক আদালত থেকে পূর্ণাঙ্গ রায়ের সার্টিফায়েড কপি আমরা হাতে পেয়েছি। এখন দ্রুততম সময়ে আমরা আপিলের প্রস্তুতি নেব।

ওই রায়ে একইসঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব আবুল হারিছ চৌধুরী, তার একান্ত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্না ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খানকেও একই দণ্ড দেন আদালত। পাশাপাশি চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অনুকূলে কেনা কাকরাইল মৌজার ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট ৩২ জন সাক্ষী। ২০১১ সালের ৮ আগস্ট খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করে দুদক। এ মামলায় ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় সংস্থাটি।

সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর

খালেদা জিয়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর