‘শুরা কাউন্সিলে’ খাশোগি হত্যা নিয়ে নীরব সৌদি বাদশাহ
১৯ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৩৫
।। আন্তর্জাতিক ডেস্ক।।
সৌদি আরবের ‘শুরা কাউন্সিল’র বার্ষিক সভায় খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেননি দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ। সোমবার (১৯ নভেম্বর) কাউন্সিলের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে বাদশাহ ‘ন্যায়ের সেবায় দায়িত্ব পালন’ করায় দেশের বিচার বিভাগ ও সরকারি আইনজীবীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কিন্তু সরাসরি খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে কোন কথা বলেননি। খবর আল জাজিরার।
গত সপ্তাহে সৌদি প্রসিকিউটররা এক ঘোষণায় জানান যে, সৌদি লেখক ও সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডে দায়ী প্রধান পাঁচ আসামির মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে কাজ করবেন। উল্লেখ্য, খাশোগিকে ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে হত্যা করা হয়।
সোমবারের ভাষণে বাদশাহ সালমান ইয়েমেনে যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়ে জাতিসংঘের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানান। তিনি আরও বলেন যে, ফিলিস্তিন ইস্যুর সমাধান সৌদি আরবের জন্য একটি প্রধান বিষয়। এছাড়া সিরিয়ায় রাজনৈতিক সমাধানের প্রতিও সমর্থন জানান তিনি।
উল্লেখ্য, শুরা কাউন্সিল হচ্ছে সৌদি আরবের পার্লামেন্টের সরকারি উপদেষ্টা পরিষদ। পরিষদটির উদ্দেশ্যে রাখা ভাষণে খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে বাদশাহ কথা বলবেন কিনা এ বিষয়ে নানা জল্পনা বিদ্যমান ছিল আন্তর্জাতিক মহলে। তবে সে বিষয়ে সরাসরি কথা না বলে তিনি নিজের ছেলে ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন বলেই জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্রাউন প্রিন্সের পাশে বাদশাহ
আরব সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড পলিসি স্টাডিজের পরিচালক মারওয়ান কাবালান বলেন, বাদশাহ খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে সরাসরি না বললেও পরোক্ষভাবে কথা বলেছেন।
আরও পড়ুন- ‘খাশোগি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল গোয়েন্দা কর্মকর্তা’
বাদশাহর ভাষণ নিয়ে কাবালান বলেন, তিনি ঐতিহ্যগতভাবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদির পররাষ্ট্রনীতি যেমন ছিল তেমনটাই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তিনি ইয়েমেন নিয়ে কথা বলেছেন। বুঝিয়েছেন, ইয়েমেন সংঘাত নিয়ে সৌদি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজছে। তিনি সিরিয়া ও সিরিয়ার শরণার্থীদের প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বিশ্ব বাজারে সৌদির তেল রপ্তানি অব্যাহত রাখা নিয়ে কথা বলেছেন। আর তার ভাষণের শেষে তিনি সৌদি আরবের বিচার ব্যবস্থার কথা বলেছেন। এটা সত্যিকারেই ইঙ্গিতমূলক অংশ। তার ভাষণ শুনে মনে হচ্ছিল তিনি জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ড ইস্যুতে কথা বলছেন।
কাবালান আরও বলেন, আমার মনে হয় তিনি বিশ্বকে এটা জানাতে চেয়েছেন যে, তিনি তার নিজের ছেলের পাশে আছেন। এটা দু‘দিক দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। প্রথমত অর্থনৈতিক দিক দিয়ে, যখন তিনি সৌদির বেসরকারি খাত নিয়ে কথা বলেছেন। এ সময় তিনি ক্রাউন প্রিন্সের ২০৩০ ভিশনের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। দ্বিতীয়ত যখন তিনি বিচার ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছিলেন।
খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্রাউন প্রিন্স
তুর্কি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে বিয়ের কাগজপত্র আনতে গিয়ে খুন হন খাশোগি। দূতাবাসে প্রবেশের পরপরই তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার দেহ টুকরো টুকরো করে দূতাবাস সংলগ্ন সৌদি মহাদূতের বাসভবনে নিয়ে গিয়ে সেখানে দুই সপ্তাহ ধরে এসিড দিয়ে গলিয়ে দেওয়া হয় তার মৃতদেহের সকল চিহ্ন।
তুর্কি গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, এই অভিযান পরিচালনা করতে ঘটনার দিন তুরস্কে প্রবেশ করেছিল ১৫ সদস্যের একটি সৌদি দল। ওই দলে ক্রাউন প্রিন্সের তিন সহযোগীও ছিলেন।
আরও পড়ুন- খাশোগি হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল যুবরাজ সালমান: সিআইএ
অভিযোগ ওঠেছে খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন ক্রাউন প্রিন্স নিজে। তবে সৌদি প্রসিকিউটররা ১৫ নভেম্বর এক ঘোষণায় ওই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, খাশোগি হত্যাকাণ্ড পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছিল ওই ১৫ সদস্যের দলের প্রধান- এক শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
তবে ১৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) বরাত দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, সিআইএ’র অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসা তথ্য সৌদি আরবের জানানো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে। সিআইএ কর্মকর্তাদের মতে, খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান।
এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন বহু শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা। তারা জানিয়েছেন, সিআইএ’র সিদ্ধান্তে তাদের প্রবল আত্মবিশ্বাস রয়েছে।
সারাবাংলা/ আরএ