‘সমুদ্র অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপের কোনো বিকল্প নেই’
১৯ নভেম্বর ২০১৮ ২০:৫৮
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের উন্নত দেশে রূপান্তরিত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সমুদ্র অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্য আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে বলে আশা করা যায়। এই লক্ষ্য অর্জনে সমুদ্র অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব আরোপের কোনো বিকল্প নেই।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য সমুদ্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিমরাড) আয়োজনে প্রথমবারের মতো এই আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক আরও বলেন, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রতিবেশী দেশগুলোর একযোগে কাজ করা জরুরি। এজন্য দক্ষ নেতৃত্ব, পারস্পরিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণের গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার সমুদ্র অর্থনীতির উন্নয়নে সবসময় কাজ করে যাচ্ছে।
দিনব্যাপী এ সেমিনারে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা ও বাংলাদেশের মেরিটাইম বিশেষজ্ঞরা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল এমডি খুরশীদ আলম ও (অব.) নৌ কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল এ এস এম এ আউয়াল; সাবেক ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান আর কে ধাওয়ানসহ যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন এবং মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকার পাথফাইন্ডার ফাউন্ডেশনের পরিচালক।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, পৃথিবীর ৭১ শতাংশ দ্বারা আচ্ছাদিত সমুদ্র যুগে যুগে মানব সভ্যতা, সম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অবসর যাপনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। এটি ইকো সিস্টেম ও জীবমণ্ডলের ভারসাম্য রক্ষা করে পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং আমাদের অক্সিজেন, খাদ্য, পানীয়, শক্তি, কাঁচামাল, ওষুধ; এমনকি বিনোদন ও সংস্কৃতির জোগান দেয়।
সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট ও সিইও ফারুক সোবহান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ।
সেমিনারে সমুদ্র সম্পদ অনুসন্ধান ও আহরণ এবং এর সঠিক ব্যবহার, সমুদ্র দূষণ প্রতিরোধ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সমুদ্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বিশেষজ্ঞরা সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে অংশীদারিত্ব, পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বিমরাড-এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক আগ্রহে বাংলাদেশ অর্জন করেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা। এই সমুদ্র মৎস ও খনিজসহ বিভিন্ন সম্পদে পরিপূর্ণ এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে এই সম্পদকে কাজে লাগানোর কোনো বিকল্প নেই।
সেমিনারে মেরিটাইম ক্ষেত্রে পারস্পরিক তথ্য বিনিময়, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বিমরাড-এর সঙ্গে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও শ্রীলংকার সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব মেরিটাইম রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিমরাড) বাংলাদেশ দেশের ব্লু ইকোনোমি, সমুদ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তাসহ সামুদ্রিক সব বিষয়ে গবেষণামূলক কারিগরি ও নীতিনির্ধারণী সুপারিশ প্রণয়ন করে থাকে।
সারাবাংলা/জেএ/টিআর