চট্টগ্রামে ভোটের মাঠে সিপিবির দুই নেতা
১৯ নভেম্বর ২০১৮ ২২:০৪
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: ভোটের মাঠে নেমেছেন দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) চট্টগ্রামের দুই নেতা। নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মানুষের কাছাকাছি যাবার লক্ষ্য নিয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী জোর লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
সোমবার (১৯ নভেম্বর) সিপিবির দুজন নেতা চট্টগ্রামের দুটি আসন থেকে নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। দুই নেতা হলেন- সিপিবি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য মৃণাল চৌধুরী এবং বোয়ালখালী উপজেলা শাখার যুগ্ম সম্পাদক মো. সেহাবউদ্দিন সাইফু।
এদের মধ্যে মৃণাল চৌধুরী নিয়েছেন চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসন থেকে। সেহাবউদ্দিন সাইফু নিয়েছেন চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে।
চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে সিপিবি কেন্দ্রীয়ভাবে এই দুটি আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন মৃণাল চৌধুরী।
তবে সিপিবির নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট থেকে চট্টগ্রামের আরও অন্তঃত তিনটি আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মৃণাল চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, চট্টগ্রাম-৯ আসনের জন্য ইতোমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া দলের শুভানুধ্যায়ী এবং দল ও গণসংগঠন এবং সমমনা শ্রমিক, কৃষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাবেক-বর্তমান নেতা-কর্মীদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার সিদ্ধান্তও আছে দলটির। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা সাংগঠনিক বৈঠক করা হয়েছে।
‘আমাদের শক্তি অনুযায়ী আমরা নির্বাচনটাকে শোষিত-গরীব মানুষের জন্য লড়াই হিসেবে বিবেচনা করেই ভোটের মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের পার্টির অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী আছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত সাবেক নেতা-কর্মীরা আছেন। বর্তমানরাও আছেন। সবাইকে নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় করার চেষ্টা করছি। তালিকা করা হয়েছে। সবার সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বসে আমাদের করণীয় নির্ধারণ করব।’ বলেন মৃণাল চৌধুরী
বর্ষীয়ান বামপন্থী রাজনীতিক মৃণাল চৌধুরী পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি পদেও আছেন। চট্টগ্রামের শ্রমিক রাজনীতিতে গ্রহণযোগ্যতা আছে এই নেতার।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য পদে থাকা মৃণাল চৌধুরী দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রথমবারের মতো ভোটের মাঠে নেমেছেন।
এদিকে প্রথমবার ভোটের মাঠে নেমেছেন একাত্তরে বাম গেরিলা যোদ্ধাদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বোয়ালখালী উপজেলা সিপিবির তরুণ নেতা সেহাবউদ্দিন সাইফুও। ভোটে লড়তে সাংগঠনিক শক্তি জোরদার করার উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন এই নেতা। সেজন্য নিজ নির্বাচনী এলাকায় সিপিবি ও এর গণসংগঠনগুলোর শাখা কমিটিগুলোকে ইতোমধ্যে সক্রিয় করা হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
‘বোয়ালখালী উপজেলায় আমাদের পার্টি আগে থেকেই অন্যান্য এলাকার চেয়ে বেশি সক্রিয়। এখানে আমাদের কৃষক সংগঠনেরও জোরালো অবস্থান আছে। কালুরঘাটে শ্রমিকদের মধ্যে আমাদের সংগঠনের কার্যক্রম আছে। সবমিলিয়ে দ্বিদলীয় মেরুকরণের বাইরে বিকল্প শক্তি হিসেবে আমরা ভোটের মাঠে নিজেদের ভালোভাবেই উপস্থাপন করতে পারব বলে মনে করি।’
সেহাবউদ্দিন সাইফু’র মতে, ভোটে জেতা পরের বিষয়। সিপিবি’র প্রতীক কাস্তে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়াই হচ্ছে তাদের প্রথম অগ্রাধিকার।
তিনি সারাবাংলাকে বলেন, বোয়ালখালীতে পার্টি কখনোই কাস্তে প্রতীক নিয়ে নির্বাচনও করেনি। এবারই প্রথম সিপিবি প্রার্থী দিয়েছে। আমাদের প্রতীকটা মানুষের কাছে নিয়ে যেতে হবে। একইভাবে মানুষের কাছে আমাদের বক্তব্যটা পৌঁছানোর জন্যই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি।
মৃণাল চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, এক জোট বলছে ভিশন ৩০। আরেক জোট বলছে ভিশন ৪১। এগুলো হচ্ছে ক্ষমতায় যাবার ভিশন। আমরা বলছি ভিশন ৭১। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি এবং চেতনাই হচ্ছে আমাদের মূল ভিশন, ৩০-৪১ বলে যেটা থেকে তারা দূরে সরে গেছে।
‘বাঘা বাঘা মুক্তিযোদ্ধারা নীতি-আদর্শ ভুলে ধানের শীষে নির্বাচন করতে নামছেন। আর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া দল আওয়ামী লীগ হেফাজতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সিট ভাগাভাগি করছে। এই অবস্থায় আমরা একদিকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে সুমন্নত রাখা, আরেকদিকে শোষিত-গরীব মানুষের জন্য লড়াইয়ে নামছি ভোটের মাধ্যমে। আশা করি জনগণ তাদের কর্তব্য নির্ধারণে ভুল করবে না।’ বলেন মৃণাল চৌধুরী
এদিকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, সোমবার সিপিবির দুই সম্ভাব্য প্রার্থীসহ ১৭ জন নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন।
এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের ১ জন, বিএনপির ৭ জন, জাতীয় পার্টির ২ জন, সিপিবির ২ জন, এনপিপির ১ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ২ জন, ইসলামী ফ্রন্টের ১ জন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১ জন মনোনয়নপত্র নিয়েছেন।
সারাবাংলা/আরডি/এমআই