পর্যবেক্ষকরা কেন্দ্রে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবেন: ইসি সচিব
২০ নভেম্বর ২০১৮ ১২:৫০
।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।
ঢাকা: নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন পর্যবেক্ষকরা কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না। কেন্দ্রে যত অনিয়মই হোক না কেন, তাদেরকে কেন্দ্রে মূর্তির মতো থাকতে হবে।
আজ মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে দেশীয় পর্যবেক্ষকদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের নিয়মাবলি ব্রিফকালে ইসি সচিব এসব কথা বলেন।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, ভোটের দিন কোনো পর্যবেক্ষক মিডিয়ায় কোনো কথা বা মন্তব্য করতে পারবে না। তাদেরকে মুর্তির মতো থাকতে হবে। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে পর্যবেক্ষকরা মোবাইল নিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। কোনো ধরনের ছবি তোলা যাবে না। গোপন ভোটকক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না। ভোটকেন্দ্রের ভেতরে যাই হোক না কেন তা নিয়ে মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়া যাবে না।
তিনি আরও বলেন, একটি ভোটকেন্দ্রে মাত্র দুটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে, একটি পুলিশের ইনচার্জ আপরটি প্রজাইডিং অফিসার ব্যবহার করবেন।
হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন যে, নির্বাচন আর পেছানো হবে না। আপনারা জানানে এবারের নির্বাচন একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ নির্বাচন। কারণ এই নির্বাচনে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে এবং বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে সংসদ বহাল থাকবে, সরকার থাকছে এবং সকল রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যার ফলে এবারের নির্বাচন হবে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আমি আশা করবো এবারের নির্বাচনটা সৌহার্দপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ভিডিপি ও কোস্টগার্ডের সদস্যদের নিয়োগ করা হবে উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, এবার প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে ১১৮টি পর্যবেক্ষক সংস্থাকে আমরা নিবন্ধন দিয়েছি। প্রাথমিক পর্যায়ে আমাদের ১১৯টি পর্যবেক্ষক সংস্থা ছিল। তার মধ্যে একটি সংস্থার বিরুদ্ধে এনজিও ব্যুরো থেকে এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দফতর থেকে অভিযোগ আসায় নির্বাচন পর্যাবেক্ষক নীতিমালা অনুসরণ করে সেটির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক আনতে উদ্যোগ নিচ্ছে ইসি
ইসি সচিব বলেন, একটি সেন্টারে অনেকগুলো সংস্থার লোক থাকবে। পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যম থাকবে। এসব বিষয়গুলো মাথায় রেখে আপনাদের জন্য যে নীতিমালা, সেটি অনুসরণ করে দায়িত্বপালন করবেন।
পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সচিব বলেন, যখন আপনারা পর্যবেক্ষক নিয়োগ করবেন তখন কয়েকটি সাবধান বাণী উচ্চারণ করবেন। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া পরিচয়পত্র সার্বক্ষণিক গলায় ঝুলিয়ে রাখতে হবে। যাতে যে কেউ বুঝতে পারেন যে, আপনি একজন পর্যবেক্ষক। প্রথমে কেন্দ্রে গিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে তার পরিচয় দিতে হবে। কেন্দ্রে কোনো মোবাইল ফোন নেওয়া যাবে না, কোনো ছবি তুলতে পারবে না, কোনো কমেন্টস করতে পারবে না, শুধু মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করবে। সেই কেন্দ্রে যত সমস্যাই হোক সে পর্যবেক্ষণ করে আপনার কাছে একটি রিপোর্ট পেশ করবেন। তারপর আপনি সবার কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে কম্পাইল করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন দিবেন। পর্যবেক্ষণের সময় গোপন কক্ষে যাওয়া যাবে না, কাউকে নির্দেশনা দিতে পারবে না, প্রিজাইডিং, পোলিং অফিসারকে কোনো পরামর্শ দিতে পারবে না। এগুলো ক্লিয়ার করে বলে দেবেন। যদি কোনো কেন্দ্রে অনিয়ম হয়, এটা তারা কমিশনকে অবহিত করতে পারেন বা আপনাকে লিখিতভাবে অবহিত করতে পারেন।
সচিব আরও বলেন, অনেক সাংবাদিক তাদের সামনে ক্যামেরা ধরবেন, উনি কিন্তু কথা বলতে পারবেন না। কোনো সংবাদপত্রে লাইভে কথা বলতে পারবে না, কমেন্টস করতে পারবে না। ব্রিটেনের পুলিশের মতো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে শুধু পর্যবেক্ষণ করবে। আপনাদের কাছে লিখিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে কোনো মন্তব্য করবে না। আপনারাও যখন কম্পাইল করে জমা দেবেন, তার আগে আপনারাও কোনো কমেন্টস করবেন না।
আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না যাতে নিবন্ধন বাতিল হয়।
এ সময় ইসির অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান, যুগ্ম সচিব খন্দকার মিজানুর রহমান ও এ এস এম আসাদুজ্জামানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
ইসিতে নিবন্ধিত পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ১১৮টি। যারা নিজ অর্থায়নে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করে।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৮ নভেম্বর। বাছাই ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ৯ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ ১০ ডিসেম্বর।
সারাবাংলা/জিএস/এমআই