Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এখন সুস্থ সেই নীলুফার, ফিরেছে চাচার বাড়িতে


২০ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:৩২

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

ঢাকা: ভাগ্য বদলের আশায় জর্ডান গিয়ে নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় গত ১৯ অক্টোবর দেশে ফেরে নীলুফার। এরপর গত একমাসে তিনবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। বেসরকারি সংস্থা ব্রাক এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যান বোর্ডের এর সহায়তায় অবশেষে সুস্থ হয়েছে সে।

এখন তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে চাচা আবু তালিবের কাছে। যদিও শুরুতে চাচার কাছে ফিরতে রাজি ছিল না নীলুফার। তার মনে ভয় ছিল, চাচা হয়ত আবারও তাকে কাজের জন্য জর্ডান পাঠাবেন।

তবে নীলুফারকে দেখভাল করবেন বলে লিখিতভাবে জানিয়েছেন আবু তালিব। ফলে চাচার কাছে থাকলেও তার বিষয়টি দেখাশোনা করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যান বোর্ড। এবার যেন আর নীলুফারের জীবন ঝুঁকিতে না পরে সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি থাকবে সংস্থাটির।

বাবা-মা হারানো ১৫ বছরের কিশোরী বড় হয়েছিল ওই চাচার কাছেই। তারপরেও কেন সেখানে ফিরতে চাইছিল না সে?

জানা গেল, ১৫ বছর বয়স হলেও পাসপোর্টে তার বয়স লেখা ছিল ২৭। এভাবে পাসপোর্ট তৈরি করিয়ে গত বছরের ১২ জুন চাচা আবু তালিবই নীলুফারকে কাজ করতে জর্ডার পাঠান। কাজে যোগ দিয়ে প্রথম দুই মাস বেতন না পেলেও এরপর থেকে চাচার কাছে নিয়মিত টাকা পাঠাত সে। কিন্তু যখন সব হারিয়ে দেশে ফিরলো নীলুফার তখন সেই টাকার কথা বেমালুম অস্বীকার করেন তিনি।

একে তো শারিরীক-মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত হয়ে দেশে ফিরেছিল মাত্র ১৫ বছরের কিশোরীটি। তারওপর স্বজনদের এই আচরণ মেনে নিতে পারেনি। ফলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে সে।

প্রবাসী নারী শ্রমিক, জর্ডান ফেরত, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, শারীরিক ও যৌন নির্যাতন

গত একমাস নীলুফারের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিল ব্রাক। গত ১৯ অক্টোবর নীলুফার দেশে ফিরে বিমানবন্দরে অস্বাভাবিক আচরণ করলে বিমানবন্দরের আর্মড পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে জানায়। সেখান থেকে ব্র্যাকের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন নীলুফারকে নিয়ে যান তাদের লার্নিং সেন্টারের সেফ হোমে। কিন্তু সেখানে সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তবে বিষয়টি দেখতে পান ব্র্যাকের নিরাপত্তারাক্ষীরা, ফলে সে যাত্রা বেঁচে যায় নীলুফার। এরপর তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, সেখানেও আত্মহত্যার চেষ্টা করে সে। সবশেষে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয় তাকে। এখানে চিকিৎসার পর এখন সুস্থ নীলুফার। আত্মহত্যার প্রবণতা চলে গেছে।

বিজ্ঞাপন

নীলুফারের অসুস্থতা সম্পর্কে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক সারাবাংলাকে জানিয়েছিলেন, ‘বিদেশে থাকা অবস্থায় মেয়েটি শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। বিদেশে থাকা অবস্থায় চাচার কাছে টাকা পাঠিয়েছিল। কিন্তু দেশে ফেরত আসার পর চাচা তাকে নিতে চান নাই, টাকা ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে-এটাও তার জন্য বড় ধাক্কা, সবকিছু মিলিয়ে সে এসব ধাক্কা সামলাতে পারে নি।’

এই ধরনের অসুস্থতাকে ‘একুইট স্ট্রেস রিঅ্যাকশন’ বলে চিহ্নিত করা হয়।

চিকিৎসা শেষে সুস্থ নীলুফারকে সোমবার (১৯ নভেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে তার চাচার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে থাকলেও বাইরে থেকে তার দেখভাল করবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যান বোর্ড। যাওয়ার আগে এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের জন্মদিনের কেকও কেটেছে সে।

এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রহমান, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের একজন সহকারী পরিচালক, একজন উপ-পরিচালক এবং নীলুফারকে গত একমাস দেখে রাখা ব্র্যাকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে নীলুফারকে তার চাচার হাতে তুলে দেওয়া হয়।

নীলুফার দেশে ফেরার পরই গত ২১ অক্টোবরেই প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো. তানভীর হোসেন তার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের কাছে চিঠি দেন। সে চিঠির অনুলিপি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ও সচিবের একান্ত সচিব এবং ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী বরাবর দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে মেয়েটি বাংলাদেশ থেকে বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে বৈধভাবে গিয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

সেদিনই ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের উপ-সচিব, পরিচালক ( প্রশাসন ও উন্নয়ন) মো. জহিরুল ইসলাম  নীলুফারকে তার পরিবার অথবা নিকট আত্মীয়ের কাছে হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য চিঠি দেন সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে।

দীর্ঘ চিকিৎসার পর নীলুফারর সুস্থ হওয়ায় এখন তাকে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হলো বলে জানান ব্র্যাকের তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন নয়ন। তিনি জানান, গত একমাস নীলুফার তাদের ব্র্যাক অভিবাসন প্রোগ্রামের তত্ত্ববধায়নে ছিল।

নীলুফারের বিষয়ে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, ‘গত একমাস আমাদের একজন স্বেচ্ছাসেবী সারাক্ষণ তার পাশে ছিল। প্রথম অবস্থায় তাকে যেভাবে আমরা পেয়েছি এখন তার অবস্থা অনেক ভালো, অনেকখানি সুস্থ সে। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড জানিয়েছে, তারা মেয়েটির থাকবে এবং তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকুরি দিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তারা অবহিত করেছে।’

নারী কর্মীদের বিদেশ পাঠানো হলে তাদের বিষয়ে যথাযথ দায়িত্ব নিতে হবে উল্লেখ করে শরীফুল হাসান বলেন, ‘নারী কর্মীদের যেহেতু পাঠানো হচ্ছে, তাহলে একটা মেকানিজম তো রাষ্ট্রের থাকতে হবে যে, তারা নির্যাতিত হয়ে ফেরত এলে তাকে কীভাবে রাখা হবে, কিংবা অসুস্থ হয়ে এলে তার চিকিৎসা কোথায় হবে, কারা করবে বা গর্ভবতী হয়ে এলে কোথায় রাখা হবে তাকে।’

শুধুমাত্র ব্রাকের পক্ষে এসব বিষয় দেখভাল করা কঠিন উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, এজন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করা দরকার। এদের জন্য বিশেষ কোনো ব্যবস্থা করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

আরো পড়ুন : মেয়েটি এখন কোথায় যাবে?

সারাবাংলা/জেএ/এসএমএন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর